Header Ads

চৈতালি বেলা শেষে...এক বাংলাদেশী কন্যের গপ্প.. পঞ্চম পর্ব (৫)

দেবাশীষ মুখাৰ্জী 
 
গল্পটা লিখতে গিয়ে একের পর এক যবনিকা সরে যাচ্ছে মৌলির জীবন থেকে....আর প্রতিমুহূর্তে তাকে আবিস্কারের নেশায় মেতে উঠছি....
এযেন এক কুহেলিকার মধ্যে ঢুকে পড়ে কাউকে খুজতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি সময়ে সময়ে....
দুপুরবেলা মৌলির মেসেজটা পেতেই চমকে উঠলাম...
মৌলি মেসেজ করেছে...কে বলল আপনাকে আমি টাঙ্গাইল থেকে সোজা জেঠুর বাড়িতে উঠে সেখান থেকে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম....
আগে ভালো করে শুনুন তারপর কলম চালাবেন....
আমি নিরুত্তর...আর যাই হোক এখনো পর্যন্ত যা কিছু লিখেছি সবই তার কাছে শোনা...এর বেশী সে আর কিছু বলেনি আমায়...
তবে কি কিছু এড়িয়ে গিয়েছিলো নাকি লজ্জায় বলতে পারেনি....
না বলেনি আমাকে মৌলি...কারনটা সেই জানে কেন বলেনি....
টাঙ্গাইল থেকে এসে জেঠুর বাড়িতে উঠলেও মৌলি জেঠুর বাড়ি থেকে পড়াশোনাটা কিন্তু শুরু থেকেই করেনি....
 
মৌলি পড়াশোনাটা শুরু করেছিলো হোস্টেলে থেকে...
আর এই হোস্টেলে তার সাথে ঘটে যায় আর এক অঘটন...
হোস্টেলের এক সিনিয়ার মেয়ে প্রেমে পড়ে যায় সদ্য বাংলাদেশ থাকা আসা বাংলাদেশী কন্যা মৌলির....এদেশে আসার পর তার কোন বান্ধবী ছিলো না...সে তখন স্কুলে আর হোস্টেলে একদম নতুন....মুখচোরা আপাতস্বভাবে শান্ত প্রতিবাদ করে না...এই মেয়েটিকে সবাই ভালোবাসলেও তার সিনিয়ার দিদি তার প্রেমে পড়েছিলো গভীর ভাবে....
সমকামী প্রেম নিয়ে সেই বয়সে তেমন কোন ধারনা ছিলোনা মৌলির...তার দিক থেকে সেভাবে কোন প্রতিক্রিয়া ছিলোনা এই কারনে...
কিন্তু তার সিনিয়ার দিদি এই ব্যাপারটা বেশ গভীর ভাবেই নিয়েছিলো....
হাত কেটে সেখান থেকে রক্ত নিয়ে সে চিঠি লেখে মৌলিকে....ঘাবড়ে যায় মৌলি...
এর পর যেটা হয় সেটা আরো মারাত্মক...
নাছোড়বান্দা সিনিয়ার দিদি সিন্ধান্ত নেয় সেক্স চেঞ্জ করে মৌলিকে সে বিয়ে করবে....
এই নিয়ে তুলকালাম শুরু হয় হোস্টেলে....
এরপর আর হোস্টেলে থাকাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে মৌলির কাছে....
কোনক্রমে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে সে ফিরে আসে জেঠুর বাড়ি....
জেঠুর বাড়ি থেকেই শুরু করে মৌলি উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা...ব্যারাকপুরেই সায়েন্স নিয়ে একটা স্কুলে ভর্তি হয় মৌলি....
যে জেঠুর বাড়িতে থাকা নিয়ে তার বাবার মনে একটা সংশয় ছিলো....সেই জেঠুর বাড়িতেই ফিরে আসতে হয় তাকে....
ক্লাস ইলেভেন....মৌলি এখন ষোলো সতেরো বছরের এক তরুণী....জেঠিমার দুর্ব্যবহার...স্কুলে বন্ধুবান্ধব ছাড়া জীবন....এটা যে তার বন্দি অবস্থার থেকে ভালো....এই আপাত সরল সত্যটা মেনে নিয়েছিলো সে...জীবন চলছিলো...সাথে পড়াশোনাও.....
কিন্তু এরই মধ্যে ঘটে যায় একটা ঘটনা....
মৌলির এক দূর সম্পর্কের মামা থাকতেন রানাঘাটে....একদিন জেঠুর কাছে অনুমতি নিয়ে রানাঘাটে মামার বাড়ি বেড়াতে যায় মৌলি...জেঠু মৌলিকে একা একা রানাঘাট যেতে দিতে প্রথমে রাজী হচ্ছিলেন না...কিন্তু মৌলি রাজী করায় তার জেঠুকে...অগত্যা জেঠু তার হাতে কিছু টাকাপয়সা দিয়ে রানাঘাট যাবার অনুমতি দেন.....
রানাঘাটের মামারবাড়ি বেশ ভালো লাগে মৌলির...মামাতো দাদা আর বৌদির সাথে বেশ জমে ওঠে তার সম্পর্ক...জেঠুর বাড়ির দমবন্ধকর পরিবেশ নেই এখানে...নেই খারাপ ব্যাবহার...উঠতে বসতে সব সময় একটা সাবধানি ভাবে চলা নেই এখানে....
সত্যি অপছন্দের অনেক কিছুই নেই এখানে....
এমনই একটা দিনে মৌলি তার মামাতো দাদা আর বৌদির সাথে বাজারে বেরিয়েছে....
দাদা বৌদি তাকে নিয়ে গেলো দাদার এক বন্ধুর কাপড়ের দোকানে...দোকানটা ছোট হলেও বেশ ছিমছাম আর চালু....
দোকানটা তার দাদার বন্ধু নিলয়ের দোকান....
মৌলির সাথে নিলয়ের পরিচয় করিয়ে দিলো তারা...
নিলয়কে এক ঝলক দেখে বেশ লেগেছিলো সেদিন মৌলির....
মৌলির নিজের কথায়...হ্যান্ডসাম বলতে যা বোঝায় নিলয় এককথায় ছিলো তাই....
যাই হোক....
এরপর নিলয়ের প্রশংসা সারাক্ষণ দাদা বৌদির মুখে শুনতে শুনতে অস্থির হয়ে যাচ্ছিলো মৌলি...
একটা মানুষে সামনে অন্য একটা মানুষের সম্বন্ধে যদি সারাক্ষণ ভালো ভালো কিছু বলা হয় তখন সে যতই খারাপ হোক না কেন তাকে ভালো ভাবতেই হয়....
কিন্তু দাদা বৌদিই বা কেন তার কানের কাছে সারাক্ষন নিলয়ের গুনগান করে চলেছে বুঝতে পারেনা মৌলি....
আসলে শিকড়হীন গাছ সে যতই শক্তপোক্ত হোক...সামান্য হাওয়াও তাকে নিয়ে ছেলেখেলা করে...
হ্যাঁ করে....অবশ্যই করে....
তোমার মনে কুয়াশা আছে....আপনি ঢাকা আপন কাছে...
নিজের অগোচরেই পাছে...আমারে যাও ছলি...
তোমাকে তাই এড়াতে চাই...ফিরিয়া যাই চলি...
চলবে...


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.