কেন্দ্র রাজ্য জানেন, ওদের সংখ্যা কত? ওদের ভোট নেই, কদর নেই, ওরা তাই হাঁটছে, ৪২ দিন পরেও রক্তাক্ত পায়ে হাঁটছে হাঁটবেও
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি
দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানি প্রশান্ত চন্দ্র মহলনাবিশ, যাকে দেশের সংখ্যাতত্ত্বের পিতামহ বলেও অভিহিত
করা হয়। যিনি দেশের প্রথম
পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কমিশনের মেম্বার ছিলেন। তিনি দেশে জনসংখ্যার বিভিন্ন দিক
পর্যালোচনা, ভৌগোলিক সীমানা, দেশের কৃষক শ্রমজীবী লোকদের অবস্থান, অন্যন্য বিভিন্ন ব্যাপারে আর্থ সামাজিক ছবি
তুলে ধরেছিলেন। নেতাজি সুভাষ
চন্দ্র বসুর হাতে গড়া পরিকল্পনা কমিশনকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকে দেশে
সংখ্যাতত্ত্ব কমিশন গঠন করা হয়। সঠিক সংখ্যাতত্ত্ব, হিসাব নিকাশের
উপর বার্ষিক পরিকল্পনার অর্থ বরাদ্দ, শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র সমাজের
মূল্যায়ন,
কৃষি জমি অনুপাতে কৃষকদের
আর্থিক অবস্থান সবই চুল চেরা হিসাব করে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি জানা সম্ভব হয়।
বিজেপি
সরকার ক্ষমতায় এসে নেতাজির স্বপ্নের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কমিশন ভেঙে দিয়ে নীতি
আয়োগ গঠন করা হয়। বিস্মযের কথা
সংখ্যাতত্ত্ব কমিশনকে ছেটে ফেলা হয়। প্রতিবাদে কয়েকজন অফিসার পদত্যাগ করেন। সংসদে
এক বিরোধী মেম্বার জানতে চেয়েছিলেন, দেশে বছরে কতজন
কৃষক আত্মহত্যা করেন। সরকার জানিয়েছিল, কৃষকদের প্রকৃত
সংখ্যা তাদের জানা নেই। করোনা ভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে লকডাউন চলেছে, গত ২৪ মার্চ থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে লক্ষ
লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। কেন্দ্র সরকার রাজ্য সরকারগুলোর কাছে তাদের
নিজেদের শ্রমিকদের সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। দেশের একমাত্র
কেরেলা সরকারের হাতে তাদের নিজেদের রাজ্যের শ্রমিকদের সম্পর্কে পুরো তথ্য আছে।
পরিযায়ী শ্রমিকরা ভোটার নয় বলে তাদের কদর
নেই। কিন্তু কেরালা সরকার
তারপরও সস্তায় কুমিউনিটি কিচেন করে পরিযায়ী শ্রমিকদের ধরে রেখেছে। অসম সরকার একবার
বলছে বাইরে ২০ লক্ষ মানুষ আছে, একবার বলছে অসমের বাইরে ৫ লক্ষ মানুষ কাজ করে। পশ্চিমবঙ্গের
বামপন্থী সরকার নিজেদের শ্রমিক দরদি বলে দাবি করতো। আজ তৃণমূল কংগ্রেস সরকার তাদের রাজ্যের
শ্রমিকদের ফিরতে বাধা দিতে দেখা যাচ্ছে। ট্রেন আসতে অনুমতি দিচ্ছে না। দেশের
পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পর্কে কেন্দ্র, রাজ্য সম্পূর্ণ অন্ধকারে। জানেনা তাদের কতজন বাইরে কাজ করতে গেছে। লকডাউনের
প্রথমদিন ২৪ মার্চ থেকে ভোট না থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে
পোটলা পুটলি নিয়ে ছেলে পরিবার নিয়ে পথে নেমেছে। গাড়ি মোটর নেই, ট্রেন নেই, শত শত মাইল হাঁটা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কেরালার মত রাজ্য সরকারগুলো তাদের লকডাউন চলা
পর্যন্ত থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারতো। রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নে পরিযায়ী শ্রমিকদের
অবদান তো কম নয়। এই ব্যবস্থা হলে পরিযায়ী শ্রমিকদের ৪১, ৪২ দিন ধরে হাঁটতে হতো না, ট্রেনের চাকায় পিষে মরতে হত না। আজও
মধ্যপ্রদেশে ট্রাক দুর্ঘটনায় ৭-৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের নলহাটিতে
রেল লাইন ধরে হাটতে গিয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে ৪০, ৫০ শ্রমিক। গতকাল সুরাত শ্রমিকদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ
করেছে। আজও শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের খবর এসেছে। আজও ক্ষুধা, তৃষ্ণাতে কাতর পরিযায়ী শ্রমিকরা হেঁটে চলেছে। ৪০ দিন ধরে হেঁটে চলেছে, ট্রেনের তলায় রক্তাত্ব দেহ আর আধা পোড়া রুটি পরে থাকছে। ওরা কিন্তু হাঁটবে, হাঁটতেই হবে। ওদের ভোট নেই, কদর নেই, ওরা হাঁটছে, হাঁটছে আর হাঁটছে...।
কোন মন্তব্য নেই