করোনা সংক্রমণ রোধে ইমিউনিটি বাড়াবার চেষ্টা অব্যাহত রেখে লকডাউন প্রত্যাহার করতে হবে, নতুবা দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হবে, সংক্রমণ একেবারে ধ্বংস হবে কি?
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : তৃতীয় পর্যায়ের লকডাউন আগামী ১৭ মে শেষ হবে। তারপরেও লকডাউন চলবে কিনা অনিশ্চিত। এই ৪০ থেকে ৪১ দিনের লকডাউনের ফলে দেশের লক্ষ লক্ষ
পরিযায়ী শ্রমিক দেশের নানা প্রান্তে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। পানীয় জল সংকট, ঔষধের অভাবে চরম দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। গরিব শ্রমজীবী মানুষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিন মজুরদের অবস্থা শোচনীয়। লকডাউন কবে উঠবে
ঠিক নেই। করোনা ভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। দেশে ৪৬ হাজার আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্য হয়েছে ১৫৬৮ জনের। আমেরিকা, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, ব্রিটেনে মৃত্যুর
সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে
আজ তিন ডাক্তার নিজেদের অভিমত তুলে ধরেন। ডাক্তার অর্ধেন্দু কুমার দে, ডাক্তার ইলিয়াস
আলী এবং ডাক্তার পবন শর্মা। তিনজনের একই বক্তব্য মানুষের ইমিউনিটি বা রোগ
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনজনের প্রায় একই পরামর্শ ভিটামিন ডি, ভিটামিন
সি-র জন্য লেবু ও টক জাতীয় ফল, সকালের রোদ গায়ে
লাগাতে হবে, প্রতিদিন 30 মিনিট মত
হাটা হাঁটি, ব্যায়াম, প্রচুর উষ্ণ জল খেতে হবে, বদ্ধ ঘরে যাতে
এসি না চলে, ঘরের মানসিক শান্তির উপরও
জোর দেওয়া হয়েছে। গরম পরিবেশ ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক, রাতের ঘুম জরুরি, দৈনন্দিন
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। মিষ্টি, লবন, রেস্টুরেন্টের খাবার বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন, বয়স্ক মানুষদের জন্য বিশেষ সচেতনতা অবলম্বন করার
উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ভারতে শিশুদের বি সি জি টিকা দেওয়া হয়। ইউরোপীয় দেশগুলোতে এই ব্যবস্থা নেই। দেশে করোনা ভাইরাস কম ছড়িয়েছে। তার কারণ টিকা। এছাড়া, দেশে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের
মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬৫ শতাংশ, যাদের ইমিউনিটি
বেশি, রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। ডাক্তার দে এবং পদ্মশ্রী
ডাক্তার আলীর অভিমত, চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে
পড়ার বহুদিন বাদ ভারত সজাগ হয়। পরিকল্পনা করে লক্ষ
লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের নিজের বাড়িতে ফিরে যাবার পর লকডাউন ঘোষণা করা হল না।
প্রাক্তন মন্ত্রী ডাক্তার দে অভিযোগ করেন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ১২
ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করে করোনা সংক্রমণে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের
আর্জি জানিয়েছিলেন। চিনে সংক্রমণ চলছে। ভারতে তখন সংসদ চলেছে। ৪১ দিনেই দেশে দুর্ভিক্ষের
মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। ডাক্তার দে
বলেন, দেশে আগেও করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। জ্বর-সর্দি দেখা দিয়েছিল। হাইড্রক্সি
ক্লোরোকুইন খেয়ে তা ভালো হয়। সেই রোগই বিদেশে মহামারী অতিমারি হিসাবে দেখা
দিয়েছে। তাদের ইমিউনিটি ক্ষমতা
নেই। এই রোগ কোনোদিন নির্মূল
করা যাবে না। প্রতিষেধক বার হলেও ১৩০
কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকাঠামো দেশের নেই। লকডাউন বেশি দিন চললে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। মানুষের মধ্যে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বাবস্থা করতে হবে। গুয়াহাটি রিজিওনাল রিসার্চ
ইনস্টিটিউট অফ হোমিওপ্যাথির বিশিষ্ট ডাক্তার পবন শর্মা বলেন, ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত
খ্যদ্যতালিকা মেনে চলতে হবে। আর তাদের
অনুমোদিত আর্সেনিকাম এলবাম-৩০ সকালে খালি পেটে তিন দিন খেলে মারাত্বক করোনা
সংক্রমণ ঠেকাতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ মূলক শক্তি বৃদ্ধি পায়। তিনি জানান, তুলসী, দারচিনি, আদা, লবঙ্গ, গোলমরিচ, মধু প্রভৃতি দিয়ে হারবাল চা তৈরি করে খেতে হবে।
দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পান করতে হবে, চ্যাবন প্রাস, রান্নার সঙ্গে হলুদ, কালো জিরা, ধনে, রসুন প্রভৃতি
ব্যাবহার করতে হবে। ভিটামিন সি খুবই খুবই কার্যকরী করোনা ভাইরাস একেবারে নির্মূল
হবে তারপর লকডাউন তোলা হবে। এই ভাবনা নিয়ে চললে দেশ শেষ হয়ে যাবে। এই রোগ থাকবে, রোগের সঙ্গে ঘর করে শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে হবে
বলে ডাক্তার দে, ডাক্তার আলী অভিমত পোষণ
করেন। প্রতিষেধক। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে এই দেশে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা
ও সেনেটাইজ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই