Header Ads

বরাক পৃথকীকরণের চেতনা


শুভদীপ দত্ত
 
ভাষার কারণে ১৯৭১ ইংরেজিতে বাংলাদেশ নামে এক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। একই কারনে নিকট ভবিষ্যতে বরাক উপত্যকাও রাজ্যে পরিণত হতে পারে। ১৯ শে মে ১৯৬১ ইংরেজির ১১ জন শহিদের আত্মবলিদানের মধ্যে দিয়ে বরাক উপত্যকার ভাষিক স্বতন্ত্রতা প্রমান করেছিল। উনিশের সে চেতনাই এক বিশাল শক্তির রূপ নিয়ে বরাক উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাজ্যের আসন নিতে পারে। বরাক পৃথকীকরণই উত্তর-পূর্ব ভারতের বহু সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে। আঞ্চলিক দৃষ্টিকোন দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। বাঙালিদের সর্বমোট জনসংখ্যা প্রায় পঁচিশ শতাংশ হওয়ার পরও নিজেদের কোন রাজ্য নেই। ত্রিপুরা রাজ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ বাঙালি হলেও তা বাঙালিদের রাজ্য নয়। বরাক উপত্যকায় প্রায় ৫০ লক্ষ বাঙালি রয়েছেন। এ উপত্যকা যদি একটি বাঙালি রাজ্য হয়, তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সমস্ত বাঙালিদের আশ্রয় স্থল হিসাবে তা গড়ে উঠবে। যা বিশাল বঙ্গ দেশের বিভাজনের কিছুটা হলেও প্রায়শ্চিত্ত হবে। বাঙালিদের নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের সব রাজ্যে যে আহেতুক ভয়-ভীতি, আগ্রাসনের রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক ইত্যাদি নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়, তারও হবে স্থায়ী সমাধান।
বরাক উপত্যকা বিভাজিত হয়ে গেলে, এক নিমিষে আসামের সর্বমোট ৩ কোটি ৩০ লক্ষ জনসংখ্যা থেকে বরাক উপত্যকায় থাকা প্রায় নিরানব্বই শতাংশ বাংলা ভাষাভাষী যা কমবেশি ৫০ লক্ষ লোক বাদ যাবে। ফলে ২ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের মাঝে অসমীয়া ভাষাভাষী অতি সহজেই সংখ্যা গরিষ্ঠের তালিকায় নথিভুক্ত হয়ে "আসাম হবে অসমীয়াদের"। আসামে শতবর্ষ পুরানো অসমিয়া বাঙালি যুযুর ভয়ের খেলার অবসান হবে। পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া থেকে শুরু করে বইবে ভালোবাসার বাতাবরণ। উত্তর-পূর্ব ভারতে এনআরসি থেকে শুরু করে যত সমস্ত বাংলাদেশী উদবাস্তু সমস্যা, ডি ভোটার ইত্যাদি ও নাগরিকত্ব বিলের প্রক্রিয়াকরণ আদি সমস্যাগুলোর সমাধান হওয়ার এক মাত্র পথই হল বরাক পৃথকীকরণের।
উত্তর-পূর্ব ভারতে বরাক উপত্যকা সাত রাজ্যের কেন্দ্র হওয়ায় ভৌগলিক দিক দিয়ে এ উপত্যকার অবস্থান  নিঃসন্দেহে অতি গুরুত্বপূর্ণ। বরাক উপত্যকা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় সব রাজ্যের রাজধানীর দূরত্ব কম বেশী ৩৫০ কি:মি:। মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের একমাত্র ভূমি পথে যোগাযোগ রক্ষাকারীও বরাক উপত্যকা। ভারতবর্ষের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় অন্যান্য দৃষ্টিকোন দিয়ে বরাক উপত্যকা কেন্দ্রের জন্য আলাদা স্বত্বা নিয়ে রাজ্য হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টি কোন দিয়ে বরাক উপত্যকার ভৌগলিক অবস্থান উত্তর-পূর্ব ভারতের কেন্দ্র হওয়ার দরুন ভারতবর্ষের "লুক ইস্ট থ্রু নর্থ ইস্ট" এর সাফল্য বরাক উপত্যকা দিয়েই সফল হওয়া সম্ভব। নদী পথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর-পূর্ব ভারতে বরাক উপত্যকা ছাড়া অন্য কোন রাজ্যে নেই বললেই চলে। ট্রেন্স এশিয়া হাইওয়ে এবং শিলচর টু সৌরাষ্ট্র মহাসড়কের সাথেও বরাক উপত্যকা যুক্ত। বাংলাদেশের এবং মায়ান্মারের বন্দরের অবস্থানও এ উপত্যকা থেকে নিকটে। আগামী নিকট ভবিষ্যতে এই উপত্যকার হাতে প্রর্যাপ্ত ক্ষমতা রইলে, এই উপত্যকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহৎ বাণিজ্য কেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনায় উপরোক্ত কারণ থাকলেও আরো অনেক অতি স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ দলিলও রয়েছে। সবই বরাক বিভাজনের ব্যবহারিক দিকেই অঙ্গুলি নিদর্শন করে। এ সমস্ত কিছুরই শক্তির উৎসের বীজ রোপণ হয়েছিল ১৯৬১ ইংরেজির ১৯ শে মে একদশ শহিদের আত্মবলিদানের মধ্যে দিয়ে। 
[লেখক পরিচয়ঃ লেখক পৃথক বরাক ডিমান্ড কমিটির সভাপতি। নিবন্ধটি লেখকের একান্ত নিজস্ব মতামত।]

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.