Header Ads

করোনা ভাইরাস মহামারির সম্ভাব্য ভবিষ্যত পরিসংখ্যান !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
করোনায় কাঁপছে সারা বিশ্ব। করোনাভাইরাস সারা বিশ্বের প্রায়
২১২-টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২,৮৬, ৭৫৫ জন মানুষ। করোনার কালো থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন ২,৮৮,২০৯ জন মানুষ। আর হাসপাতালে নানা ধরনের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১৫,৪৪,৬৪০ জন।

এখনো পর্যন্ত এই মারণ ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধ উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়নি। আশা করা হচ্ছে শিগগিরই পাওয়া যাবে করোনার ভ্যাকসিন। তবে কভিড-১৯ মহামারি নিয়েই আপাতত বাঁচতে হবে, এমন কথা প্রায় সকলেই বলে ফেলেছেন। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ চিত্রটা ঠিক কীরকম হতে পারে, সেটা দেখাচ্ছে গবেষণা।
করোনা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে সকলের মধ্যে যে প্রশ্নটা ঘুরছে, তা হলো এই কভিড-১৯ মহামারি কতদিন থাকবে এবং বিভিন্ন ঋতুতে ফিরে আসবে কি-না। দুটি নতুন গবেষণার কথা প্রথমবার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে, যাতে দেখানো হয়েছে কভিড-১৯ কার্ভ কিরকম হতে পারে।
সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে শীতকালে এর প্রকোপ ফিরে আসতে পারে। সেখানে এটাও বলা হয়েছে দীর্ঘকালীন বা তৎকালীন সামাজিক দূরত্ববিধি ২০২২ সাল
পর্যন্ত বলবৎ রাখা উচিত যাতে রোগের পরিমাণ সীমাহীন না
হয়ে ওঠে।
আমেরিকার-ই সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি (সিআইডিআরএপি) অন্য একটি গবেষণায় অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি তুলে এনেছে। তাতে এই মহামারি কিভাবে ফিরে আসতে পারে তার ধারণা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আগের মহামারির ঐতিহাসিক ধরণ এবং সায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে এই দ্বিতীয় ঢেউ-এর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বলা হচ্ছে, করোনা মহামারি কখনো যাবে না। হারভার্ড টি এইচ চান স্কুল অব পাবলিক হেলথের মহামারি বিশেষজ্ঞ মার্ক লিপসিৎচ বলেছেন, দুটি গবেষণা থেকেই এই সিদ্ধান্তে পৌছনো যাচ্ছে যে করোনা ভাইরাস নিজে থেকে চলে যাবে না। আমাদের দীর্ঘ নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে; যাতে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষমতা সুরক্ষিত রাখা যায় এবং তারপর ক্রমশ গোষ্ঠী সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) প্রতিরোধের দিকে যেতে হবে। আমরা এখনো জানি না প্রতিরোধ কতদিন টিকবে। এ কারণেই কয়েক মাস তো বটেই, বেশ কয়েক বছর ধরে ভাইরাস একটি এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে ছড়াবে এবং সে জন্য যথেষ্ট পরিমাণ নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ নিতে হবে। লিপসিৎচ দুটি গবেষণারই রচয়িতাদের অন্যতম। তিনি কী ভাবছেন দেখে নেওয়া যাক :
সায়েন্সের গবেষণায় আগের দুটি করোনা সংক্রমণের সময়কাল ব্যবহার করে তার ঋতুচক্র এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতে করোনা সংক্রমণের একটি মডেল তৈরি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ছবির চার্টে সায়েন্সের গবেষণাপত্রটিই সামান্য পরিমার্জন করে তুলে ধরা হয়েছে। ওয়ন-এ চার্টে মোট সংক্রমণের ব্যাপকতা এবং প্রতি ১০ হাজার সংক্রমণে সঙ্কটজনক অসুস্থতার টাইম সিরিজ তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সোশাল ডিসট্যান্সিংয়ের দুটি ছবি দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে ওয়ান-বি চার্টে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন প্রতিরোধের দিকে সামগ্রিক প্রগতির ছবি দেখানো হয়েছে।
ওয়ান-সি ও ওয়ান-ডি চার্টকেও অনুরূপভাবেই দেখতে হবে। তফাৎ হলো, দ্বিতীয় জোড়ে এই প্রাদুর্ভাবের মৌসুমি দিকটিকেও বিবেচনা করা হয়েছে, যা প্রথম জোড়ে নেই। গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রথমবারের ভয়ানক মহামারি ঢেউয়ের পর প্রতিবছর শীতকালে এই ভাইরাস ফিরে আসতেই পারে।
এই গ্রাফে আমেরিকার বর্তমান আপৎকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরা হলেও লিপসিৎচ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এতে নিখুঁতভাবে আমেরিকার পরিস্থিতি বর্ণনা করা নেই তবে তার নীতি ও মূল বিষয়গুলো ধরা রয়েছে। তিনি বলেছেন, অন্য অঞ্চলে ভিন্ন মাত্রার সংক্রমণ হতে পারে, যা বিভিন্ন মৌসুম এবং বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির ওপর নির্ভরশীল।
ধারণাগতভাবে ঢেউয়ের হিসেব---
ভবিষ্যতে এই মহমারির চেহারা কী ধরনের হতে পারে তা সংক্ষেপে দেখিয়েছে সিআইডিআরএপি। প্রথম সম্ভাবনা, ২০২০ সালের বসন্তের প্রথম ঢেউয়ের পর গ্রীষ্ম জুড়ে পরবর্তী ক্ষুদ্রতর ঢেউ আসবে, এবং এমনটা ঘটতে থাকবে ১ থেকে ২ বছর ধরে, এরপর ২০২১ সালে তা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা, ২০২০ সালের বসন্তের প্রথম ঢেউয়ের পর ২০২০ সালের শরৎ বা শীতে বড় আকারে করোনা ফিরে আসবে এবং এরপর ২০২১ সাল জুড়ে এক বা একাধিকবার ফিরে আসবে ক্ষুদ্রতর আকারে।
তৃতীয় সম্ভাবনা, ২০২০ সালের বসন্তের প্রথম ঢেউয়ের পরে ক্রমাগত সংক্রমণ ধীরে চলতে থাকবে কিন্তু তা ঢেউ আকারে থাকবে না। এর প্রকৃতি ভৌগোলিকভাবে বিভিন্ন হবে এবং কিভাবে তার প্রশমনের ব্যবস্থা করা হয়েছে তার ওপর নির্ভরশীল হবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.