বিশুদ্ধ জল কোথায়? ১৩০ কোটি মানুষ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বার বার হাত ধুতে পরিষ্কার শুদ্ধ জল কোথায় পাবেন ?
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি
সারা বিশ্বে মারণ রোগ করোনা ভাইরাস অতিমারি রূপে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের
শক্তিশালী রাষ্ট্র আমেরিকা সহ ইটালি, স্পেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ভারত প্রভৃতি ২০০টির বেশি রাষ্ট্র আজ ১০ এপ্রিল
পর্যন্ত মৃত্যু এক লক্ষ ছুঁই ছুঁই। আক্রান্ত ১৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত, আভিজাত্য, ঐশ্বর্য্য, ক্ষমতার পেছনে দৌড়ানো মানুষ আজ বড় অসহায়। আনবিক শক্তিধর যুদ্ধবাজ রাষ্ট্র আমেরিকা আজ
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এক অজানা জীবাণুর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। দেশের
ধর্মগুরুরা আজ মানুষের বিপদের দিনে বিজ্ঞানীদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন। বিশ্বে প্রথম
চিনের শহর উহান ডাক্তার লি ওয়েনলিইয়াং মারাত্বক কোভিড ১৯ জীবাণু নিয়ে গবেষণাগারে
পরীক্ষার সময় তা লিক হয়ে যায়। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ
মারা যান।
সারা বিশ্ববাসী করোনা
ভাইরাসের কথা জেনে ফেলে। ডাক্তার লি-কে
গ্রেফতার করা হয়, এই জীবাণু নিয়ে
গবেষণা করা ডাক্তার রহস্যজনকভাবে মারা যায় বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ সন্থা দাবি করে। এর
আগে আফ্রিকা মহাদেশে ইবোলা, ব্রাজিলে জিকা
ভাইরাসের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কথা জেনেছিলাম। তার আগে এইডস, এইচ আই ভি, কলেরা রোগে
আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এইসব ভাইরাসের জন্ম পশু-পাখি,
বনজ বিষাক্ত গাছ-গাছড়া বলে
দাবি করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দূষিত জল এইসব অজানা জীবাণুর জন্ম দিয়ে মহামারি,
অতিমারীর রূপ পরিগ্রহ
করেছে। গত ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক জল দিবস সকলের অগোচরে উদযাপিত হল। বিশ্বস্বাস্থ্য সন্থা বার বার বলছে করোনা
ভাইরাস মারাত্বক এই রোগ থেকে বাঁচতে ২০ সেকেন্ড ধরে বার বার হাত ধুতে হবে। হাত
ধুতে গেলে তো বিশুদ্ধ জলের প্রয়োজন। বিশুদ্ধ জল কি আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ
পায়? ১৩০ কোটি মানুষ ২০
সেকেন্ড ধরে বার বার হাত ধুতে বিশুদ্ধ জল জোগার করতে পারবেন? বার বার দূষিত জলে
হাত ধুলে রোগ কি কমে যাবে? না অন্য চর্মজাত
রোগে আক্রান্ত হবে? দেশের জল ভান্ডার
একবার দেখে নেওয়া যাক। তার আগে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রাক্তন কর্তা
ইসমাইল সেরা জেলদিনের ঐতিহাসিক মন্তব্য আগামী বিশ্বযুদ্ধ হবে জলকে কেন্দ্র করে। শিল্পোন্নত
দেশগুলোর জন্যে আকাশ, বাতাস, বায়ুমণ্ডলে লাগাম ছাড়া দূষণের সৃষ্টি হয়েছে,
একমাত্র বিশুদ্ধ জল
ভান্ডার তা কিছু টা রোধ করতে পারতো। বর্তমান করোনা উদ্ভূত ভয়ানক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের
মহাসচিব আর্ন্তনিও গুতেরাস বলেছেন, ''দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
থেকেও বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ''। ভারতের জলের অবস্থা ভয়াবহ, ভূগর্ভস্থ জল ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। আর্সেনিক বিষ গ্রাস করেছে জল ভান্ডারকে। নীতি
আয়োগ এক ভয়ংকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, জল জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদা। পরিবেশ সংরক্ষণের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, বন জঙ্গলের সঙ্গে জলের উৎস ধ্বংস হচ্ছে,
এই আয়োগের সতর্কবাণী ২০২০, ২০২১ সালের মধ্যে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ এবং চেন্নাই শহরের ভূগর্ভস্থ জল
ফুরিয়ে যাবে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ৪০ ভাগ মানুষ জলের অভাবে ভুগবেন। চেন্নাইয়ের তিনটি
নদী, চারটি জলাশয়, পাঁচটি জলাভূমি এবং ছয়টি জঙ্গল সম্পূর্ণ শুকিয়ে
গেছে। সমুদ্রের লবনাক্ত জলকে মিষ্টি বা উপযোগী করে তুলতে যে প্রুযুক্তির দরকার তা
অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। দেশে বৃষ্টির জল সংরক্ষিত হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদি তার রেডিও বার্তা ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে বলেছেন মানুষের ইতিহাসে এক গভীরতম
সংকট ঘনিয়ে আসছে। দেশে মাত্র ৮ শতাংশ
জল সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ভয়ঙ্করভাবে দূষণের মাত্রা বাড়ছে। অকল্পনীয়ভাবে উত্তাপ বাড়ছে। একজোটভাবে প্রতিরোধ
ছাড়া জল সংকটের মত গভীরতম সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। দেশে জলমন্ত্রক তৈরি
করা হয়েছে। রাজধানী দিল্লির কলঙ্ক যমুনা নদী দূষণমুক্ত
করতে হাজার কোটি খরচ করা হয়েছিল। কি হল? কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর সংসদে জানিয়েছিলেন, গঙ্গা, যমুনা সহ পশ্চিম ভারতে ৫৩টি নদীর জল খাওয়ার
অনুপযুক্ত। অসমের দিপারবিল, ভরলু, বরাক সহ ৪৪টি নদীর জল দূষিত হয়ে গেছে। অসমের জীবনরেখা ব্রহ্মপুত্র নদও দূষিত। তবে জল পাবো কোথায়?
নীতি আয়োগ বলেছে, দেশের ৯৭
শতাংশই জল পান করা যাবে না। চাষের জন্যও অযোগ্য। এদিকে, অতিরিক্ত
ফসলের লোভে সার, কীটনাশক ব্যবহার
করার ফলে নদ-নদীগুলোতো বিষাক্ত হয়েছে, মাটির উর্বরতাও নষ্ট হয়ে গেছে। হিমবাহের জল, বৃষ্টির জল, নদ-নদীর জল আর ভূগর্ভস্থের জল মিলে মাত্র ৪ শতাংশ জল আমাদের।
অর্থাৎ ১৩০ কোটি মানুষের ভাগে পড়েছে। এই সামান্য জলও সবটা পানের যোগ্য নয়, দূষিত। সেই জলে ১৩০ কোটি মানুষ করোনা তাড়াতে বার বার ২০
সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন? করোনা ভাগবে, না অন্য রোগে
আক্রান্ত হবে।
জলের জন্য বিশ্ব যুদ্ধ
বাংলা নিউজ পোর্টাল নয়া ঠাহরের সম্পাদক অমল গুপ্ত, মোবাইল নং : +91 98640 44239
কোন মন্তব্য নেই