'করোনা' মহামারী কি সত্যযুগের সূচনা করতে চলছে?
ঋতুপর্ণা দেব, শিলচর: আমাদের এই
পৃথিবী সৌরজগতের সবচাইতে সুন্দর গ্ৰহ। গাছ-পালা, নদী-পাহাড় ও সমুদ্রে
ঘেরা। এই গ্ৰহ তথা প্রাণীজগত সত্যিকার অর্থে ঈশ্বরের এক অসাধারণ সৃষ্টি।
সৃষ্টিকর্তার হাতে সৃষ্ট এই প্রাণীজগতের সেরা সৃষ্টি হলো 'মানুষ'। আর এই মানুষ কি
না ধ্বংস করতে বসেছিল পৃথিবীকে। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলে মানুষ যাবে কোথায়?
'করোনা' মহামারী না আসলে, বোধ হয় মানুষ
বুঝতেই পারতো না যে, আয়ূ কমছে পৃথিবীর। শেষ হতে ঢলেছে মানব সভ্যতা।
মানুষ মত্ত হয়ে উঠেছে আকাশ ছোঁয়ার তাগিদে। কে কত বড় হবে? কে কত লাভ করবে? টাকা, মান-সম্মান, খ্যাতির লোভ
মানুষকে বর্বর করে তুলেছে।
শিক্ষা বাঁচতে শেখায়। কিন্তু আধুনিক শিক্ষা
ধ্বংস ডেকে আনছে। কেউ ভাবতেই পারেনি, বিজ্ঞান আশীর্বাদই নয়, অভিশাপ ও হতে
পারে। প্রাকৃতিক গাছপালা, পশুপক্ষী, নদী-পাহাড়-সমুদ্রকে
বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মানুষ মত্ত হয়েছে স্থাপত্য ও ভাস্কর্য নির্মাণে। কিন্তু
প্রকৃতি আজ তার রুদ্র রূপ দেখিয়ে দিয়েছে। আজ তালাবদ্ধ পৃথিবীতে, পৃথিবী ফিরে
পাচ্ছে তার নিজস্ব রূপ।
আকাশ পরিষ্কার হচ্ছে, অক্সিজেনের
মাত্রা বাড়ছে। গাছগুলো সবুজ থেকে সবুজতর হচ্ছে। নদী তার গতিময়তা ফিরে পাচ্ছে।
মানুষের সমাগম কম থাকায় নদী, সমুদ্রও আবর্জনা মুক্ত। 'করোনা' মহামারী, আতঙ্কের মধ্যেও
অনেক শিক্ষাই দিচ্ছে। আজ রবিবার ও সোমবারের ব্যবধান নেই। বাইরে বেড়াতে যাওয়ার
ইচ্ছে নেই, হোটেলে গিয়ে খাওয়ার ইচ্ছে নেই, অর্থ উপার্জন ও
খরচ করার ইচ্ছে নেই। মনে হয় আমরা মোক্ষের দরগোড়ায় এসে পৌঁছে গেলাম। আজ মানুষ
রামায়ণ, মহাভারত দেখছে। প্রার্থনা করছে, পাগলের মতো
ছুটোছুটি ও ব্যস্ততার বোধহয় অবসান হলো। এটা সত্যযুগ নয়তো কি? একই সাথে সমতাও এসে গেছে। কেউ মালিক, কেউ চাকর, এই ব্যবধান নেই।
বিদেশ ফেরত ছেলে-মেয়েরা মা-বাবার সাথে থাকতে চাইছে। দান-ধ্যানেই ব্যস্ত গোটা সমাজটা। আমরা বোধহয়
সত্যযুগে পৌঁছে গেছি।
চারিপাশের নানা সরকারী ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য
করলে দেখি, আমাদের ভারতীয় সরকার সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ
করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, স্কুল, কলেজগুলো আরও দীর্ঘ দিন
বন্ধ রাখলে ভালো হয়। এতে সংক্রমণ অনেক অংশে কম হবে। কারণ, ছাত্র-ছাত্রীরা
আরোও সাবধানতা অবলম্বন করতে শিখে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই