রবিবার রাতে আলো নেভালেই কি দূর হবে প্রাণঘাতী করোনা? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা !!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
করোনার নতুন দাওয়াই হিসাবে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী রবিবার রাত ৯ টায় সমস্ত দেশবাসীকে ঘরের আলো নেভানোর পরামর্শ দিয়েছেন। ওই সময় ৯ মিনিটের জন্য টর্চ, প্রদীপ, ফ্ল্যাশ লাইট, মোমবাতি জ্বালানোর আবেদন জানান তিনি। যদিও তাঁর ঘোষণার পরেই তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছে বিরোধীরা, সমালোচনার ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহলেও।
অন্যদিকে মোদীর এই ঘোষাণার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক গুজব ছড়াতে দেখা গেছে। বেশ কয়েক জায়গায় বলা হচ্ছে গরম তাপমাত্রায় করোনা ভাইরাস টিকতে পারবে না। তাই মোমবাতি জ্বালানো উচিত। একইসাথে যাবতীয় গুজবের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য নাসা এবং আইআইটির একজন গবেষককেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক জায়গায়। মোদীর মাস্টার স্ট্রোক বলে দাবি করে একাধিক বার্তায় বলা হচ্ছে ১৩০ কোটি মোমবাতি জ্বলে উঠলে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে রবিবার রাত নটা বেজে ৯ মিনিটে করোনা মৃত্যু হবে !
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন এটি সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন ও ভুয়ো খবর। পাশাপাশি সরকারও এই ধরনের গুজব এবং অবৈজ্ঞানিক তত্ত্বে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এই উদ্যোগটি কেবল করোনভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত লড়াইয়ের প্রতি সংহতি ও আস্থা প্রদর্শন জন্য বলেও সাফ জানানো হয়েছে সরকারি ভাবে।
প্রকৃতপক্ষে দেশের কোনো এক প্রান্তে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে বহুবার দেশের মানুষ হাতে মোমবাতি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। আবার পুলবামার মতো ঘটনা ঘটলেও দেশের জনতাকে মোমবাতি হাতে রাস্তায় দেখা যায়। কিন্তু হাতে মোমবাতি নিলে ধর্ষণকারীরা শাস্তি পাবে এটা নয়, আবার পুলবামার বদলা নেওয়া যাবে এটাও নয়। হাতে মোমবাতি নেওয়ার অর্থ বোঝায় ধর্ষণের মতো ঘটনা দেশের যে প্রান্তেই ঘটুক না কেন, সকল দেশবাসী ধর্ষনকারীদের বিরুদ্ধে এক। সকল দেশবাসী অসহায় পরিবারের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আছে। একইভাবে পুলবামার মতো ঘটনার ক্ষেত্রে হাতে মোমবাতি নিয়ে বেরোনোর অর্থ বোঝায় যে আতঙ্কবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে দেশের সেনার সাথে দেশের প্রত্যেকটি জনগণ দাঁড়িয়ে আছে।
হাতে প্রদীপ বা মোমবাতি নিয়ে একইরকম ভাবে রাস্তায় বেরোনো এমন একটা পন্থা যার দ্বারা বোঝানো যায় এই লড়াইতে, এই সংঘর্ষে কেউ একা নয়। এর দ্বারা বোঝানো হয় লড়াইটা সবার এবং সবাই একসাথে লড়বে। এ সমস্তকিছু বলার মূল প্রসঙ্গ আসলে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ৯ মিনিট প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালানোর আবেদন নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী সমস্ত দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করেছেন ৫ তারিখ অর্থাৎ রবিবার সকলে যেন রাত্রি ৯ টার সময় নিজের নিজের বাড়ির আলো বন্ধ করে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর এই আবেদন নিয়ে বামপন্থী থেকে কট্টরপন্থী সকলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র বিরোধিতা ও মোটা দাগের খিল্লি-রসিকতা শুরু করেছে। প্রদীপ, মোমবাতি বা ফ্ল্যাশ জ্বালানোর মাধ্যমে আসলে প্রধানমন্ত্রী করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে একতা দেখানোর কথা বলেছেন--এটাই সরকারের ব্যাখ্যা।
যারা মোমবাতি জ্বালানো নিয়ে বিরোধিতা করেছেন তারা ভারতের খ্যাতনামা ডাক্তার কে কে আগরওয়াল (K. K. Aggarwal) বিষয়টির উপর যে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন সেটা দেখে নিতে পারেন। ডক্টর কে কে আগরওয়াল একজন পদ্মভূষণ প্রাপ্ত ডাক্তার। সমস্ত বিষয়ে পান্ডিত্য দেখানো প্রগলভদের জন্য ডক্টর কে কে আগরওয়াল বিখ্যাত গ্রন্থ যোগ বশিষ্ঠ-এর উদাহরণ দিয়ে মানুষের অবচেতন মন কিভাবে কাজ করে এবং তা কিভাবে লড়াইতে সাহায্য করে বুঝিয়েছেন। যদিও এখানে হিন্দুত্ব-এর গন্ধ খুঁজে বেড়ানোরা নিশ্চিতভাবেই রে-রে করে তেড়ে যাবেন !
কোন মন্তব্য নেই