সুলেখা, মিনারা, পার্বতী, অষ্টমী দের সংসার জলে ভেসে গেছে, ঘর, মন, সম্পর্কে চিড় ধরেছে, ভেঙেছে শরীর, ডিটেনশন ক্যাম্পের বন্দি জীবন কাটিয়ে ঘরে ফিরল, প্রায় ১০০ জন ছাড়া পেল
অমল গুপ্ত : ওরা কিন্তু বিদেশি নন, জন্ম-কর্ম, জীবন-জীবিকা, জল, মাটি সব অসমেই। দারিদ্র্যপীড়িত মানুষগুলো কোনোদিন ভাবেননি, ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও ভারতের জেলেই তাদের বিনা অপরাধে বন্দি জীবন
কাটাতে হবে। বাংলাদেশি তকমার কলঙ্ক
মাথায় নিয়ে গলে পচে মরতে হবে। এটাই বাস্তব, এই অসমে আর্থিক দুরবস্থা, শিক্ষার অভাব। জমি নেই, সরকারি নথির আজব
ব্যাখ্যা তাদের জানা নেই। এন আর সি
কেন্দ্রে হাজির হওয়ার পর কাছাড়ের উদারবন্দের ৬৫ বছরের বৃদ্ধা সুলেখা দাসকে ধরে
বেঁধে শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্পে ভরে দেওয়া হয়। মিনার বেগম শিশু কন্যা শাহানারাকে
সঙ্গে নিয়ে বিনা দোষে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি জীবন কাটালেন। কোকরাঝাড় ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে গতকাল প্রায় ৪
বছর বন্দির জীবন কাটিয়ে পার্বতী দাস, দু’বছর ২ মাস বন্দি
জীবন কাটিয়ে অষ্টমী দাস গ্রামের বাড়িতে তো ফিরলেন কিন্তু সংসার জলে জলে ভেসে গেছে। মন, ঘর সবই ভেঙে চুরমার
হয়ে গেছে। একই অবস্থা কোচ রাজবংশী
সম্প্রদায়ের শান্তি বালা রায়দের প্রায় ৪ বছর বন্দি জীবন থেকে ফিরলেন। জীবন সংসার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে তথাকথিত জেলে
পুরে দেওয়া হয়। হেলাল আলী তো জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছিয়েও জেলে যেতে হল। তার কি অপরাধ? ক্ষীতিশ সিংহ, বংশীধর রাজবংশী, কিশোর বর্মন, চিত্তরঞ্জন ঘোষ, গৌর মন্ডল তো নিরাপরাধ ছিলেন। নাগরিকত্বের বৈধ
নথিপত্র দেখানো সত্ত্বেও তাদের নানা অজুহাত দেখিয়ে বিদেশী সাজিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে
পুরে দেওয়া হয়। তারা যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়েই থাকেন তবে বাংলাদেশে না পাঠিয়ে এখানে
ছেড়ে দেওয়া হল কেন? তাতে কি প্রমাণিত হচ্ছে? তারা বিদেশি ছিল? কোকড়াঝার এবং গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে
গতকাল ৯ জনকে ছাড়া হয়। তারা সবাই চিরাং এবং বঙাইগাঁও জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। সি জে
পির রাজ্য সমন্বয়ক জামসের আলীর একান্ত চেষ্টা ও মানুষের সহযোগীতা পেয়ে এই লকডাউনের জটিল সময়ে
ছাড়িয়ে আনা হয়। জামসের আলী জানান, নন্দু ঘোষ, প্রণয় তরফদার, আবুল কালাম আজাদ, আইনজীবী দেওয়ান
আব্দুর রহিম, আইনজীবী জেহারা খাতুন, আইনজীবী প্রীতি কর্মকার, বিপুল সরকার, পীযুষ চক্রবর্তী, পাপিয়া দাস, মনোজ সাহা, মৃনাল কান্তি সাহা, রাজ বর্মন, প্রহ্লাদ দাস, শায়ন কুমার সিংহ, মোহন বাসী দাস, দিলীপ কুমার রায় প্রমুখদের আন্তরিক সহযোগিতা
ছাড়া বন্দীদের ছাড়াতে পারতাম না বলে জানান জামসের আলী। তিনি বলেন, ঐকতান এবং
প্রয়াস নামে দুটি সংগঠনের সহযোগিতা পেয়েছি। সুপ্রিমকোর্টের
পর গত ১৫ এপ্রিল গুয়াহাটি হাইকোর্টের রায়ের ফলে বন্দিদের মুক্তির সুবিধা হয়। তারা
আরও বন্দিকে ছাড়িয়ে আনবে। বলেন, আগে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে জামিন নিতে হতো এবার ৫ হাজার
টাকার জামিন। দুজন জামিনদার, জমির পাট্টা থাকা জামিনদার চাই প্রভৃতি কন্ডিশন
দিয়েছেন গুয়াহাটি হাইকোর্ট। তিনি জানান, সি জে পি প্রথম থেকে বন্দীদের ছাড়িয়ে আনার
চেষ্টা চালাচ্ছে। গরিব মানুষের
পাশে তারা আছে ও থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তেজপুর ডিটেনশন
ক্যাম্প থেকে ৫৩ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে প্রায় ২০ জন এবং কোকরাঝাড়, গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে প্রায় ১৮ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০। যাদের দুবছর পূর্ণ হয়েছে তাদেরকেও ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল আরও ৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। বাক্সা জেলার কদম আলি, মুকশেদ আলি, উন্নতি বেগম, সত্যসাধু সূত্রধর, সানমোহন মণ্ডল, নারায়ণ দাস, শুশীল দাস এবং অমরী দাসকে মুক্তি দেওয়া হয়। রাজ্যে ৬টি ডিটেনশন ক্যাম্পে ৯৮৮ জন বন্দী ছিলেন। তার মধ্যে ২৮ জনের ক্যাম্পে মৃত্যু হয়েছে। করোনায় রাজ্যে লকডাউন চলছে এবং করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। মুক্তি পাওয়ার পর বন্দীরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছে তাদের ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া, চিকিত্সা কিছুই করা হয়নি। অসুস্থ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হয়েছিল। রাজ্যে









কোন মন্তব্য নেই