Header Ads

করোনা চিকিৎসায় ভারতের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের চাহিদা সারাবিশ্বে !!


বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় বহু প্রচলিত এবং পুরোনো ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জীবনরক্ষাকারী ওষুধে পরিণত হয়েছে এটি। মারণঘাতী করোনার নেই কোন প্রতিষেধক। এই অবস্থায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দিয়েই অধিকাংশ দেশ করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা করছে। আর সেই কারণেই করোনা আক্রান্ত এখন গোটা বিশ্বই কার্যত তাকিয়ে
রয়েছে ভারতের দিকে। করোনার চিকিৎসায় ভালো কাজ দিচ্ছে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন। আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশের গবেষণা সে কথাই বলছে। ভারতও এই ওষুধ ব্যবহারে ছাড়পত্র দিয়েছে। ভারত থেকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন চাইছে বিশ্বের অনেক দেশ।
ইতিমধ্যে করোনা সংক্রমণের শিকার হওয়া বিশ্বের ৫৫টি দেশে ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠিয়েছে ভারত সরকার। তারমধ্যে আমেরিকা, মরিশাস, চীন সহ একাধিক দেশে ওষুধটি পৌঁছে গিয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষে বাকি দেশগুলোতেও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পৌঁছে যাবে বলে ভারত সরকারের সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে চিহ্নিত করেছে। যা প্রায় ১৫০০ হাজার করোনাভাইরাসের আক্রান্তদের উপর নিউইয়র্কে টেস্ট করে দেখা হচ্ছে।
আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দাবি করছে সে দেশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন করোনা থেকে মুক্তি দিতে ম্যাজিকের মত কাজ করছে। নিউইয়র্কের দেড় হাজারেরও বেশি করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে এর পরীক্ষা করে সাফল্য মিলেছে। তারপরেই ম্যালেরিয়ার এই ওষুধ চেয়ে ভারতের কাছে হাত পাতেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু করোনার সংকটময় পরিস্থিতিতে এদেশে যাতে আকাল না পড়ে তার জন্যই গত ২৫ মার্চ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ওষুধটি চাওয়ার পর মানবিকতার স্বার্থেই করোনা আক্রান্ত দেশগুলিতে ওষুধটি পাঠানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। তারপর থেকেই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন চেয়ে মোদী সরকারের কাছে একের পর এক দেশের আবেদন জমা পড়ে চলেছে।
ভারত ওষুধ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার পর থেকেই অন্যান্য দেশ এই জীবনদায়ী ওষুধ পেতে অনুরোধ জানিয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান, ভুটান, বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ, মরিশাস, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারকে ইতিমধ্যেই
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠিয়েছে ভারত। এছাড়াও ভারতের তরফে জামবিয়া, ডমিনিসিয়ান রিপাবলিক, মাদাগাসকার, উগান্ডা, বুরকিনা ফ্যসো, নাইজের, মালি কঙ্গো, ইজিপ্ট, আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, ইক্যুয়েডর, জামায়িকা, সিরিয়া, ইউক্রেন, চাদ, জিম্বাবোয়ে, ফ্রান্স, জর্ডন, কেনিয়া, নেদারল্যান্ড, নাইজেরিয়া, ওমান এবং পেরু’তেও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠানো হবে বলেও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, ফিলিপাইনস, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, সাউথ আফ্রিকা, তানজানিয়া, সংযুক্ত আরব ও আমিরশাহি, উজবেকিস্থান, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া, আলজিরিয়া, বাহমাস, মরিশাস এবং ব্রিটেনও পৌঁছবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই ওষুধ পাঠানো হলেও কিছু দেশকে অনুদান হিসেবেও পাঠানো হচ্ছে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন।
উল্লেখ্য, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এমন একটি ওষুধ, যা শরীরে গিয়ে ক্লোরাকুইনে পরিণত হয়। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন লুপাস এবং আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার জন্যও ব্যবহৃত। লুপাস আদতে অটো-ইমিউন ডিজিজ৷ অর্থাৎ শরীরের নিজস্ব অনাক্রম্যতা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভুল করে শরীরেরই বিভিন্ন অঙ্গকে আক্রমণ করে বসে৷ যথাযথ চিকিৎসা না হলে, পরে হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, রক্তবাহিকা, কিডনি ও স্নায়ুতন্ত্রেরও ক্ষতি হয়৷
হাইড্রক্সিক্লোরোক্যুইন একটি জীবনদায়ী ঔষধি হলেও বিনা উপদেশে ঐ ড্রাগ ব্যবহারে হার্ট-ব্লক বা হৃদস্পন্দনে গোলযোগের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও ঘুম-ঘুম ভাব, হাঁচি, বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে যা সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করে তুলতে পারে। তাই আইসিএমআরের গবেষকদের বক্তব্য অনুযায়ী, ডাক্তারের উপদেশ ব্যতীত নিজের সিদ্ধান্তে হাইড্রক্সিক্লোরোক্যুইনের ব্যবহার নিরাপদ নয়।
এদিকে ভারত একাধিক দেশে বাণিজ্যিকভাবে এই ওষুধ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত ক্লোরোকুইন তৈরিতে বিশ্বের প্রথম সারিতে রয়েছে। এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্লোরোকুইন উৎপন্ন হয় ভারতেই। তাই সারাবিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে এই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের জন্য।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.