শুধু জীবজগতের সঙ্গে সংস্পর্শ নয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শ, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণ বলে মনে করেন চীনের উহানের ডাক্তার, জীবাণু বিশেজ্ঞরা, কোভিড ১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে চীন ভ্যাকসিন রেডি করছে, কিছু সময় লাগবে
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : মানুষ আর জীবজগতের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাধির আদান
প্রদান কোনও দিন বন্ধ হবে না। নানা সংক্রামক
ব্যাধি চলতেই থাকবে। শত শত বছর ধরে মহামারী, অতিমারীর ইতিহাস আর পাল্টাতে পারবে না মানুষ। করোনা ভাইরাসের আগে প্লেগ, ইবোলা, নিপা, মারবুর্গ, সার্শ, জিকা, লাসা জ্বর
প্রভৃতি সংক্রমণের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বুনো বাদুড়, বাদর, উট, শুকুর, ইঁদুর সাপ নানা বুনো পাখির দেহ থেকে এই সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে দেশ-বিদেশের
জীবাণু বিশেষজ্ঞরা অভিমত পোষণ করেছেন। চীনের মত ঘন জনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্র ও তাদের বিচিত্র
খ্যদ্যভাস নানা জীবাণু গ্রাস করছে বারবার। চীনারা এহেন জীব নেই যা তাদের ডাইনিং
টেবিলে থাকে না। মায়ানমার, ভিয়েতনাম সহ চীনের মাংসের বাজারে কুকুর, বিড়াল, বিষধর সাপ, কাঁকড়া বিছা, উট, বাদুড়, বাদর, ইঁদুর প্রভৃতির মাংস দেদার বিক্রি হয়। এই বাজারগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, প্রচন্ড দুর্গন্ধ।
সেই বাজার থেকে করোনা
ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়েছে বলে চীনের বিশেযজ্ঞ ডাক্তারা স্বীকার করে
নিয়েছেন। চীনের এই সংক্রমণের উৎপত্তি স্থল অত্যাধুনিক সিটি উহান। সেই শহরে কবে কি করে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হলো, কি করে যুদ্ধ গতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তা
ডিসকভারি সায়েন্স চ্যানেলে গতকাল রাত ১০টায় দেখানো হয়েছে। জীবাণু নিয়ে গবেষণা করা
ডাক্তাররা জানান, বিচিত্র মাংসের বাজার থেকে এই সংক্রমণ ছড়ানোর পূর্বাভাস পাওয়ার
পর বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারা জানান, এইসব মাংস
রান্নার সময় ভালো করে সেদ্ধ হয়,
মাংস খেয়ে সংক্রমণ হচ্ছে
না, তবে যে ব্যাক্তি বাজারে যায়, মাংস কেনেন, যে রাঁধুনি রাঁধেন তাদের দেহে বিচিত্র জীবের
মাংসের জীবাণু সংক্রমিত হয়। পরে অন্যান্য
মানুষের দেহে ছড়িয়ে যায়। জীবজগত থেকে মানুষের দেহে সরাসরি জীবাণু বাসা বাঁধা ছাড়াও
মানুষ থেকে মানুষের দেহেও করোনা ছড়িয়েছে উহান সিটিতে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে করোনা ভাইরাস প্রথম সূত্রপাত হয়। কয়েকজন অভিজ্ঞ নার্স ডাক্তার রোগটির উপসর্গ
সম্পর্কে আগাম জেনে নিয়ে ভিডিওর মাধ্যমে সকলকে অবগত করেন। ২৪ ঘন্টা মোবাইলের মাধ্যমে আক্রান্ত রোগীর পরিবারকে পরামর্শ দেওয়া হয়। বেজিং থেকে
শুরু করে সব প্রভিন্স থেকে ডাক্তার,
নার্সরা ছুটে যান উহান
শহরে। ডাক্তার লিয়ং হো নাম নামে এক বিশেযজ্ঞ ডাক্তার জোরের সঙ্গে বলেন, আমরা চীনের মানুষ ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মরবো। আবার আমরাই এই রোগের প্রতিশেধক আবিষ্কার করবো। তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
জানান, ভ্যাকসিন তৈরি শুরু করা হয়েছে। তবে বাজারে আসতে
সময় লাগবে। তিনি এক নতুন কথা বলেন,
করোনা ভাইরাস রোগে যারা
বেশি আক্রান্ত হয়েছে, তাদের প্রথমে চিকিৎসা করা হবে। সাধারণ উপসর্গ যাদের আছে তাদের বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কতজনের মধ্যে রোগটি সংক্রমিত হয়েছে তা জানা
গেছে। জীবাণুর চরিত্র বুঝতে তার প্রয়োজন ছিল। যার ফলে প্রতিশেধক আবিষ্কারের সুবিধা হবে। ১ কোটি ২০ লক্ষ উহান সিটির জনসংখ্যা। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এই রোগ ছড়িয়ে পরার কয়েকদিন
বাদে শহরটিকে তালা চাবি লাগিয়ে দেওয়া হয়। যানবাহন, কলকারখানা, বিদ্যালয় সব বন্ধ
করে বাইরের লোক ঢুকতে পারেনি, ভেতরের লোক সকলকে
শহরে আটকে রাখা হয়। ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসা সামগ্রীর কিছুটা অভাব ছিল। দু-সপ্তাহের মধ্যে ১০ তলার দুটি হাসপাতাল ভবন
নির্মাণ করা হয়। আড়াই হাজার বেডের হাসপাতাল দুটিতে অত্যাধুনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে
চিকিৎসা করা হয়। শহরের প্রতিটি বাড়িতে ঢুকে মানুষের খবর নেওয়া হয়। চীনের দিকে
অভিযোগের আঙ্গুল তোলা হচ্ছে। সে সম্পর্কে চীনা কর্তৃপক্ষ জানান, করোনার সূত্রপাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বস্বাস্থ্য
সন্থাকে জানানো হয়েছিল। এর আগেও করোনা সদৃশ ভাইরাস দেখা গিয়েছিল নিমনিয়া টাইপের
রোগ ধরা পড়েছিল। বিচিত্র প্রজাতির জন্তুর মাংস খাওয়া তাদের পক্ষে বিরাট ভুল হয়েছে
বলে চীনা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে বাজার বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেন। জীবজগতের সঙ্গে
মানুষের সংস্পর্শ, রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের
কথা বলেছে। দুই বিরল প্রজাতির বাদুড়, বিষাক্ত সাপ এবং উটের মাংসের দিকে আঙুল তুলেছে চিনা কর্তৃপক্ষ। তবে মানুষের থেকে মানুষের করোনা ভাইরাস
সংক্রমিত হওয়ার কথাও জোর গলায় বলেছেন। উহানে
এখনও মৃতের সংখ্যা কমানো যায়নি। উহানে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। তা
কমানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে চীন সরকার। জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যলয়ের
অধ্যাপক আদিত্য ঘোষ এক সংবাদপত্রে দাবি করেছেন, ব্যাপক হারে বন জঙ্গল, প্রাণীজগত ধ্বংসের ফলে মানুষের সঙ্গে জীবজগতের
দূরত্ব কমে গেছে। জীবজগতের ব্যাধিতে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। ব্যাপক হারে জীবজগত, বনাঞ্চল ধ্বংস, নদ-নদী, সব জলাশয় দূষিত, আকাশ-বাতাস, মাটি বিষাক্ত। এই সবের পরিণতি নানা জীবাণুর জন্ম, লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি, পরিবেশ প্রকৃতি এভাবেই প্রতিশোধ গ্রহণ করছে বলে
প্রকৃতিপ্রেমীদের অভিযোগ উড়িয়ে দেবার নয়।
কোন মন্তব্য নেই