প্রসঙ্গ : এ দেশে হোম আইসোলেশন কি বাস্তব সম্মত ভাবনা !!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে দু’একটা খুচরো কিন্তু জরুরি বিষয়ের দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিতে হবে। আমি এর আগে একাধিকবার বলেছি দেশেতো বটেই--আমাদের এই রাজ্যেও লকডাউনের সুফল পেতে হলে ১৪৪ ধারা জারি করে সশস্ত্র পুলিশ বা আধাসেনার হাতে রাস্তাঘাট বাজারহাট ইত্যাদি পাব্লিক গ্যাদারিংয়ের জায়গাগুলো তুলে দিতে হবে এবং লকডাউনের এক-দেড় মাস যাদের হাতে টাকা থাকবে না--খাবার থাকবে না তাদের বেঁচে থাকার জন্যে যতটুকু দরকার সেই খাবারটুকু পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিদিন যাদের ওষুধপত্র ছাড়া চলে না তাদের হাতে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র পৌঁছে দিলে লকডাউন সফল হবে। এক দেড় মাস যে কোনো মানুষ পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতায় স্বল্পাহারেও বেঁচে থাকতে পারে।
লকডাউনের সুফল পাওয়ার জন্যে এটাই করা দরকার ছিল। জায়গা বিশেষের কিছু মানুষ লকডাউন নিয়ে যে ধরণের ছেলেখেলা চালিয়ে গেল এবং এখনও যাচ্ছে তার ফলাফল কতটা সুখকর হতে পারে তা কলকাতা-উঃ২৪ গরগণা-হাওড়া-মেদিনীপুর সহ রাজ্যের বেশ কিছু এলাকার মানুষকে মারাত্মকভাবেই টের পেতে হবে--সত্যি বলতে কী টের পেতে শুরুও করেছেন ইতিমধ্যেই।
এ প্রসঙ্গে আমি এ রাজ্যে এনআরসি বিরোধী তাণ্ডব বা টিকিয়াপাড়া তাণ্ডবের বিস্তারিত বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। কারণ, ঐসব তাণ্ডবের পেছনে লুঙ্গি পরে টুপি মাথায় দিয়ে আসা আরএসএস-বজরং ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থাকার তত্ত্ব উঠে আসবেই। যেমন গো-বলয়ের গেরুয়া তাণ্ডবের মধ্যেও টুপি খুলে লুঙ্গি ছেড়ে গেরুয়া পরে ষড়যন্ত্র করে কিছু লোকজন আরএসএস-বজরংকেও বদনাম করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে ! সুতরাং এই হাস্যকর ছেঁদো রাজনৈতিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এখানে শুধু কয়েকটা প্রশ্ন উঠে আসছে--রাজ্যের কোখাও একটা গাছ থেকে পাতা খসে পড়ার কথাও যখন প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যায় না--সেখানে টিকিয়াপাড়ার মতো ঘটনা ষড়যন্ত্রকারীরা কি করে ঘটাতে পারছে--এর কোনো স্বচ্ছ উত্তর নেই। দ্বিতীয়তঃ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং মাইক হাতে বিশেষ বিশেষ এলাকায় মানুষকে ঘরে থাকার কাতর অনুনয় করা সত্ত্বেও লোকজনের সাহস হচ্ছে কি করে তাঁর নির্দেশ বা অনুনয়কে উড়িয়ে দেওয়ার? এ সাহসের উৎস কি--এবং লাগাতার এই সাহসের প্রদর্শন লক্ষ্য করতে করতে মানুষ যদি সাহসের উৎস সন্ধানে নানারকমের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা তৈরি করতে বাধ্য হয় তাহলে তাদের কি দোষ দেওয়া যায়? ধমকে চমকে থ্রেট দিয়ে মানুষের মুখ বন্ধ করা যাবে? সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন তো ঘটনাগুলো প্রত্যক্ষ করছেন--সকলের হাতেই এখন ভিডিও ক্যামেরা--এই একবিংশ শতাব্দীতে বাস্তবে ঘটিত কোনো ঘটনাকে রাজনৈতিক তত্ত্ব-ব্যাখ্যায় একেবারে উল্টেপাল্টে দেওয়া সম্ভব? মানুষ যা বোঝার বুঝে নিচ্ছে--কারণ মানুষকে এখন আর রাজনীতির চোখ দিয়ে দেখানো যায় না--কান দিয়ে শোনানোও যায় না।
এসব চূড়ান্ত অস্বস্তিকর ও অবাঞ্ছিত ঘটনাগুলো ঘটতোই না যদি সরকার কঠোরভাবে লকডাউন সফল করার জন্য সঠিক প্ল্যানমাফিক কাজ করে দেখাতে পারতেন। পারলে মানুষকে আতঙ্কিত করে বলতেই হতো না মাইল্ড করোনা পজিটিভদের হোম আইসোলেশনে রাখাটাই যুক্তিযুক্ত হবে !
কোন্ যুক্তিতে এটা বাস্তবসম্মত নয় এখন সেটাই একটু দেখা যাক। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার এই হোম আইসোলেশনের নমুনাটা পেয়েছেন আমেরিকা ও বৃটেনের বাধ্যতামূলক প্রচেষ্টার মধ্যে। ঐ দুই রাষ্ট্রের এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃতের সংখ্যাটা পাশাপাশি রেখে প্রকৃত বাস্তবতাটা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার যে ভাবে নি সেটা খুবই স্পষ্ট। ঐ দুই রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান শহরগুলির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামোর মধ্যে আর রুগীদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। ফলে মারাত্মক ঝুঁকি নেওয়া হবে জেনেও ঐসব দেশগুলো হোম আইসোলেশনের কথা ভাবতে বাধ্য হয়েছে। খুব একটা আশাব্যঞ্জক ফল কিন্তু তাতে ফলে নি। দ্রুত আইসিইউ বা ভেন্টিলেটশনের আওয়তায় সঙ্কটাপন্ন রূগীদের শিফট্ করতে না পারার কারণে রুগী মারা যাচ্ছে--পাশাপাশি সংক্রমণও বেড়ে যাচ্ছে। সংক্রিমতের সংখ্যার দিকে তাকালেই চিত্রটা স্পষ্ট বোঝা যায়। তবুও ঐ দুই দেশের মানুষ সরকারের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার মতো জায়গায় আছে বলেই তারা এমন একটা মরিয়া চেষ্টা চালাতে পারছে এবং তখনই সেটা করছে যখন তারা কোনোরকম সত্য গোপন না করে বলে দিতে পারছে যে, সমস্ত রুগীকে বেড-চিকিৎসক-সেবাকর্মী তারা আর দিতে পারছে না !
আমেরিকা ও বৃটেনের সামাজ-সংষ্কৃতি-শিক্ষাদীক্ষা-বোধবুদ্ধির সঙ্গে আমাদের সুস্পষ্ট মৌলিক তফাৎ রয়েছে। ঐসব দেশে রোগকে মানুষ পরাস্ত করার চেষ্টা করে--রোগীকে অপরাধী ভেবে তার বিরুদ্ধে অমানবিক হয়ে ওঠে না। ওদের অর্থ-প্রাচুর্য্য এবং হাত-পা ছড়িয়ে বসবাসের যে ক্ষমতা রয়েছে তার সঙ্গে আমাদের দেশের লোকজনের জীবন-যাপনের ছবিকে মেলানোর চেষ্টাটা নিছকই পাগলামী ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। আমাদের দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীকে বাড়িতে রাখার সাহস কারুর নেই। পাঁচ-সাত জনের পরিবার একটিমাত্র শৌচালয়কে কেন্দ্র করেই দিন যাপন করে। চিকিৎসায় সহেযোগিতা তো দূরের কথা কি ভাবে রুগীকে সকলের স্পর্শ বাঁচিয়ে একই বাড়িতে রাখা সম্ভব এটা বুঝে ওঠার আগেই পরিবারে বিপর্য্যয় নেমে আসবে। কেন্দ্র সরকার কতগুলো সুনির্দিষ্ট শর্ত দিয়েছে এ ব্যাপারে--সবাই তা দেখেছেন। কতগুলো শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তাতে, যেমন--আরোগ্য সেতু অ্যাপ, সাস্পেক্টেড, প্রিসিম্পোম্যাটিক, লাইট সিমটোম্যাটিক এবং আরও কিছু। বলা হয়েছে সাস্পেক্ট রুগীকে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারকে দিয়ে চেক-আপ করে আসতে হবে। কোন্ হাসপাতালে? সেখানে ডাক্তার কিসের ভিত্তিতে সাস্পেক্ট করবেন? পরীক্ষা হবে রুগীর? হলে ডাক্তার ২৪ ঘন্টা তাকে নজরে রাখতে পারবেন? পারলেও সঙ্কটকালে দ্রুত আইসিইউ-ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থার গ্যারান্টি থাকবে তার কাছে? সঙ্কটকালে পৌঁছুবার বেশ কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই চেইন সিস্টেমে আরও কয়েক’শো আক্রান্ত হয়ে পড়বে না--এমন নিশ্চয়তা কি থাকছে?
আরও অসংখ্য প্রশ্ন আছে--সে সব বাদ দিয়েই আজকের একটি ঘটনার কথা বলি। এক গর্ভবতী মহিলা একাধিকবার হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত হয়ে শেষপর্যন্ত একটি অটোর মধ্যেই সন্তান প্রসব করেন। মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতেই পারতো। স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন ঠিক কোন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে সেটা কমবেশি সবাই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন।
আমাদের রাজ্যে এখন যে কোনো মৃতদেহকেই প্রচণ্ড আতঙ্কের সঙ্গে দেখা হচ্ছে--সৎকার করা নিয়ে তুমুল অশান্তি দানা পাকাচ্ছে প্রায় সর্বত্র। কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরিতেও তুমুল বাধা দেওয়া হচ্ছে (মুখ্যমন্ত্রী নিজেও আজ বলেছেন)--এমন একটা পরিস্থিতিতে বাড়িতে বাড়িতে করোনা সাস্পেক্টদের রেখে চিকিৎসার প্রস্তাব প্রিয় জনগণ হাসিমুখে মেনে নেবে? সে ভাবে তাদের মানসিকতাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে কখেনো? হলে লকডাউন নিয়ে মানুষ এইভাবে ছেলেখেলা করতে পারে? এর ফল বিশেষভাবে ভোগ করতে হবে তো দ্বিতীয় লণ্ডন কলকতা ও তার পার্শ্ববর্তী শহরাঞ্চলগুলিকেই মূলতঃ ! সরকার দাবি করতেই পারে এর দায় তাদের নয়--তাদের অবুঝ ন্যালাক্ষ্যাপা প্রিয় জনগণের--কিন্তু সবাই তা মানবে কেন? বিশেষ করে বিষয়টা যখন একেবারেই ছেলেখেলার বিষয় নয় !!
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে দু’একটা খুচরো কিন্তু জরুরি বিষয়ের দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিতে হবে। আমি এর আগে একাধিকবার বলেছি দেশেতো বটেই--আমাদের এই রাজ্যেও লকডাউনের সুফল পেতে হলে ১৪৪ ধারা জারি করে সশস্ত্র পুলিশ বা আধাসেনার হাতে রাস্তাঘাট বাজারহাট ইত্যাদি পাব্লিক গ্যাদারিংয়ের জায়গাগুলো তুলে দিতে হবে এবং লকডাউনের এক-দেড় মাস যাদের হাতে টাকা থাকবে না--খাবার থাকবে না তাদের বেঁচে থাকার জন্যে যতটুকু দরকার সেই খাবারটুকু পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিদিন যাদের ওষুধপত্র ছাড়া চলে না তাদের হাতে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র পৌঁছে দিলে লকডাউন সফল হবে। এক দেড় মাস যে কোনো মানুষ পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতায় স্বল্পাহারেও বেঁচে থাকতে পারে।
লকডাউনের সুফল পাওয়ার জন্যে এটাই করা দরকার ছিল। জায়গা বিশেষের কিছু মানুষ লকডাউন নিয়ে যে ধরণের ছেলেখেলা চালিয়ে গেল এবং এখনও যাচ্ছে তার ফলাফল কতটা সুখকর হতে পারে তা কলকাতা-উঃ২৪ গরগণা-হাওড়া-মেদিনীপুর সহ রাজ্যের বেশ কিছু এলাকার মানুষকে মারাত্মকভাবেই টের পেতে হবে--সত্যি বলতে কী টের পেতে শুরুও করেছেন ইতিমধ্যেই।
এ প্রসঙ্গে আমি এ রাজ্যে এনআরসি বিরোধী তাণ্ডব বা টিকিয়াপাড়া তাণ্ডবের বিস্তারিত বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। কারণ, ঐসব তাণ্ডবের পেছনে লুঙ্গি পরে টুপি মাথায় দিয়ে আসা আরএসএস-বজরং ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থাকার তত্ত্ব উঠে আসবেই। যেমন গো-বলয়ের গেরুয়া তাণ্ডবের মধ্যেও টুপি খুলে লুঙ্গি ছেড়ে গেরুয়া পরে ষড়যন্ত্র করে কিছু লোকজন আরএসএস-বজরংকেও বদনাম করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে ! সুতরাং এই হাস্যকর ছেঁদো রাজনৈতিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এখানে শুধু কয়েকটা প্রশ্ন উঠে আসছে--রাজ্যের কোখাও একটা গাছ থেকে পাতা খসে পড়ার কথাও যখন প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যায় না--সেখানে টিকিয়াপাড়ার মতো ঘটনা ষড়যন্ত্রকারীরা কি করে ঘটাতে পারছে--এর কোনো স্বচ্ছ উত্তর নেই। দ্বিতীয়তঃ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং মাইক হাতে বিশেষ বিশেষ এলাকায় মানুষকে ঘরে থাকার কাতর অনুনয় করা সত্ত্বেও লোকজনের সাহস হচ্ছে কি করে তাঁর নির্দেশ বা অনুনয়কে উড়িয়ে দেওয়ার? এ সাহসের উৎস কি--এবং লাগাতার এই সাহসের প্রদর্শন লক্ষ্য করতে করতে মানুষ যদি সাহসের উৎস সন্ধানে নানারকমের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা তৈরি করতে বাধ্য হয় তাহলে তাদের কি দোষ দেওয়া যায়? ধমকে চমকে থ্রেট দিয়ে মানুষের মুখ বন্ধ করা যাবে? সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন তো ঘটনাগুলো প্রত্যক্ষ করছেন--সকলের হাতেই এখন ভিডিও ক্যামেরা--এই একবিংশ শতাব্দীতে বাস্তবে ঘটিত কোনো ঘটনাকে রাজনৈতিক তত্ত্ব-ব্যাখ্যায় একেবারে উল্টেপাল্টে দেওয়া সম্ভব? মানুষ যা বোঝার বুঝে নিচ্ছে--কারণ মানুষকে এখন আর রাজনীতির চোখ দিয়ে দেখানো যায় না--কান দিয়ে শোনানোও যায় না।
এসব চূড়ান্ত অস্বস্তিকর ও অবাঞ্ছিত ঘটনাগুলো ঘটতোই না যদি সরকার কঠোরভাবে লকডাউন সফল করার জন্য সঠিক প্ল্যানমাফিক কাজ করে দেখাতে পারতেন। পারলে মানুষকে আতঙ্কিত করে বলতেই হতো না মাইল্ড করোনা পজিটিভদের হোম আইসোলেশনে রাখাটাই যুক্তিযুক্ত হবে !
কোন্ যুক্তিতে এটা বাস্তবসম্মত নয় এখন সেটাই একটু দেখা যাক। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার এই হোম আইসোলেশনের নমুনাটা পেয়েছেন আমেরিকা ও বৃটেনের বাধ্যতামূলক প্রচেষ্টার মধ্যে। ঐ দুই রাষ্ট্রের এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃতের সংখ্যাটা পাশাপাশি রেখে প্রকৃত বাস্তবতাটা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার যে ভাবে নি সেটা খুবই স্পষ্ট। ঐ দুই রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান শহরগুলির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামোর মধ্যে আর রুগীদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। ফলে মারাত্মক ঝুঁকি নেওয়া হবে জেনেও ঐসব দেশগুলো হোম আইসোলেশনের কথা ভাবতে বাধ্য হয়েছে। খুব একটা আশাব্যঞ্জক ফল কিন্তু তাতে ফলে নি। দ্রুত আইসিইউ বা ভেন্টিলেটশনের আওয়তায় সঙ্কটাপন্ন রূগীদের শিফট্ করতে না পারার কারণে রুগী মারা যাচ্ছে--পাশাপাশি সংক্রমণও বেড়ে যাচ্ছে। সংক্রিমতের সংখ্যার দিকে তাকালেই চিত্রটা স্পষ্ট বোঝা যায়। তবুও ঐ দুই দেশের মানুষ সরকারের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার মতো জায়গায় আছে বলেই তারা এমন একটা মরিয়া চেষ্টা চালাতে পারছে এবং তখনই সেটা করছে যখন তারা কোনোরকম সত্য গোপন না করে বলে দিতে পারছে যে, সমস্ত রুগীকে বেড-চিকিৎসক-সেবাকর্মী তারা আর দিতে পারছে না !
আমেরিকা ও বৃটেনের সামাজ-সংষ্কৃতি-শিক্ষাদীক্ষা-বোধবুদ্ধির সঙ্গে আমাদের সুস্পষ্ট মৌলিক তফাৎ রয়েছে। ঐসব দেশে রোগকে মানুষ পরাস্ত করার চেষ্টা করে--রোগীকে অপরাধী ভেবে তার বিরুদ্ধে অমানবিক হয়ে ওঠে না। ওদের অর্থ-প্রাচুর্য্য এবং হাত-পা ছড়িয়ে বসবাসের যে ক্ষমতা রয়েছে তার সঙ্গে আমাদের দেশের লোকজনের জীবন-যাপনের ছবিকে মেলানোর চেষ্টাটা নিছকই পাগলামী ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। আমাদের দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীকে বাড়িতে রাখার সাহস কারুর নেই। পাঁচ-সাত জনের পরিবার একটিমাত্র শৌচালয়কে কেন্দ্র করেই দিন যাপন করে। চিকিৎসায় সহেযোগিতা তো দূরের কথা কি ভাবে রুগীকে সকলের স্পর্শ বাঁচিয়ে একই বাড়িতে রাখা সম্ভব এটা বুঝে ওঠার আগেই পরিবারে বিপর্য্যয় নেমে আসবে। কেন্দ্র সরকার কতগুলো সুনির্দিষ্ট শর্ত দিয়েছে এ ব্যাপারে--সবাই তা দেখেছেন। কতগুলো শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তাতে, যেমন--আরোগ্য সেতু অ্যাপ, সাস্পেক্টেড, প্রিসিম্পোম্যাটিক, লাইট সিমটোম্যাটিক এবং আরও কিছু। বলা হয়েছে সাস্পেক্ট রুগীকে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারকে দিয়ে চেক-আপ করে আসতে হবে। কোন্ হাসপাতালে? সেখানে ডাক্তার কিসের ভিত্তিতে সাস্পেক্ট করবেন? পরীক্ষা হবে রুগীর? হলে ডাক্তার ২৪ ঘন্টা তাকে নজরে রাখতে পারবেন? পারলেও সঙ্কটকালে দ্রুত আইসিইউ-ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থার গ্যারান্টি থাকবে তার কাছে? সঙ্কটকালে পৌঁছুবার বেশ কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই চেইন সিস্টেমে আরও কয়েক’শো আক্রান্ত হয়ে পড়বে না--এমন নিশ্চয়তা কি থাকছে?
আরও অসংখ্য প্রশ্ন আছে--সে সব বাদ দিয়েই আজকের একটি ঘটনার কথা বলি। এক গর্ভবতী মহিলা একাধিকবার হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত হয়ে শেষপর্যন্ত একটি অটোর মধ্যেই সন্তান প্রসব করেন। মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতেই পারতো। স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন ঠিক কোন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে সেটা কমবেশি সবাই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন।
আমাদের রাজ্যে এখন যে কোনো মৃতদেহকেই প্রচণ্ড আতঙ্কের সঙ্গে দেখা হচ্ছে--সৎকার করা নিয়ে তুমুল অশান্তি দানা পাকাচ্ছে প্রায় সর্বত্র। কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরিতেও তুমুল বাধা দেওয়া হচ্ছে (মুখ্যমন্ত্রী নিজেও আজ বলেছেন)--এমন একটা পরিস্থিতিতে বাড়িতে বাড়িতে করোনা সাস্পেক্টদের রেখে চিকিৎসার প্রস্তাব প্রিয় জনগণ হাসিমুখে মেনে নেবে? সে ভাবে তাদের মানসিকতাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে কখেনো? হলে লকডাউন নিয়ে মানুষ এইভাবে ছেলেখেলা করতে পারে? এর ফল বিশেষভাবে ভোগ করতে হবে তো দ্বিতীয় লণ্ডন কলকতা ও তার পার্শ্ববর্তী শহরাঞ্চলগুলিকেই মূলতঃ ! সরকার দাবি করতেই পারে এর দায় তাদের নয়--তাদের অবুঝ ন্যালাক্ষ্যাপা প্রিয় জনগণের--কিন্তু সবাই তা মানবে কেন? বিশেষ করে বিষয়টা যখন একেবারেই ছেলেখেলার বিষয় নয় !!









কোন মন্তব্য নেই