সিরিয়ার মৃত্যু পথযাত্রী শিশুটি কি ঈশ্বরকে সব বলে দিয়েছে? তাই আকাশ ভরা সূর্য্য-তারা এত নির্মল, এত উজ্জ্বল?
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি
মা যখন তার কচি শিশুটিকে বকেন, তখন শিশুটি মা-কে ভয় দেখানোর জন্য বলে বাবাকে সব বলে দেব। ঠিক তেমনি সিরিয়ায় বোমার আঘাতে ক্ষত বিক্ষত ৩ বছরের রক্তাক্ত শিশুটি ডাক্তারদের বলেছিল, সব ঈশ্বরকে বলে দেব। সেই অভিযোগ করেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে কচি শিশুটি। মানবতাবাদী বিরোধী, যুদ্ধবাজ বিশ্বের বিরুদ্ধে সিরিয়ার শিশুটির প্রতিবাদের ভাষা দেখে বিশ্বের মানবতাবাদি কণ্ঠ চমকে উঠেছিল। যেমন সিরিয়ার সমুদ্র সৈকতে কচি শিশু আলান কুর্দির লাল টুকটুকে সোয়েটার পড়া মৃতদেহ দেখে আঁতকে উঠেছিল। যুদ্ধবাজদের হামলায় সর্বশান্ত হয়ে নিরাপদ দেশ খুঁজতে পরিবারের সঙ্গে জলে ভেসেছিল, কিন্তু দেশ আর পেলো না। মানবতার বিরুদ্ধে শিশুদুটি প্রাণ আহুতির পরও বিশ্ববাসীর টনক নড়েনি। ৫০০ বছর আগে গুরুনানক উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, বায়ু আমাদের গুরু, জল আমাদের পিতা, পৃথিবী আমাদের মাতা। তা রক্ষা করতে না পারলে বিশ্বের ধ্বংস অনিবার্য। সেকথা কি একবারও আমাদের মনে পড়ে? বিশ্ব পরিবেশ নিয়ে দুই কন্যার লড়াই মনে রাখেন কি? সুইডেনের গ্রেটা থুন বার্গ রাষ্ট্র সংঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্পর্কে এক বিশ্ব সম্মেলনে দাভোলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হয়ে বিশ্ব পরিবেশ সংরক্ষন নিয়ে যেভাবে বক্তব্য তুলে ধরেন, তার তুলনা মেলাভার। তার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেছিলেন, আপনাদের জন্য বিশ্বে দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে, আপনারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। আমাদের নব প্রজন্মের শৈশব ধ্বংস, স্বপ্ন চুরমার। আপনাদের মত বিশ্ব নেতারা আমাদের রক্ষা করতে পারছেন না। আপনাদের বেইমানি আমরা যুবপ্রজন্ম ধরে ফেলেছি। অসুস্থ ১৬ বছরের স্টকহোমের কিশোরীর প্রকৃতি পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা সারা বিশ্বের প্রকৃতি প্রেমীদের উজ্জীবিত করেছে। আমাদের কন্যা মণিপুরের ৪ বছরের লিসিপ্রিয়া ক্যাঙ্গুয়ামের কথা কি করেই বা ভুলে যান? পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে, মহিলা শিশুদের উন্নয়নে সদাই তৎপর এই কন্যার নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার টুইটারে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। তার জবাবে লিসিপ্রিয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন দেশে মহিলা শিশুদের উপর অত্যাচার চলেছে, পরিবেশ ধ্বংস বন্ধ করা যাচ্ছে না। কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়ছে, গ্রীন হাউস গ্যাসের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই। পরিবেশ সংরক্ষণের উপর বিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক হোক। প্রতি বিদ্যালয়ে ১০টি করে গাছ রোপন করা হোক। এসব না করে আমার নাম উল্লেখ করবেন না বলে জানিয়ে দেন সাহসিনি কন্যা। কি করে ভুলা যায় আর এক মণিপুরের কন্যা ভালেন্টিনা ওয়াবাগায়ের কথা। সে কাকচিং-এর গ্রামের বাড়িতে দুটো গুলমোহর গাছের চারা লাগিয়েছিল। রাস্তা নির্মাণের সময় দুটি গাছই কাটা পড়ে। তারপর থেকে হু-হু করে কেঁদেই চলে। কান্না আর থামেনি। সেই খবর যায় মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন্দ্র সিঙের কাছে। তিনি ভ্যালেনটায়েনকে বন বিভাগের ব্র্যান্ড আম্বাসদর বানান বলে জানা গেছে। করোনা ভাইরাস উদ্ভূত মারণ রোগের সংক্রমণ রুখতে বিশ্ব জুড়ে লকডাউন চলেছে। যান চলাচল বন্ধ, কল কারখানা বন্ধ, নদ-নদীগুলোতে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে না, বন জঙ্গল কাটা চলেছে না, মাটিকেও বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে, জলের দূষণ বহুগুণ কমেছে, গাড়ি মোটরের গ্যাস, তেল, ধুলো, কলকারখানার চিমনির ধুয়া নেই, জলকে শুদ্ধ, আকাশকে নির্মল, বাতাসে অক্সিজিনের মাত্রা বেড়েছে, কার্বন ডাই-অক্সাইডের কালো ধুয়া থেকে আমরা সবাই সাময়িক মুক্ত। পরিবেশ প্রকৃতি জীবজগত খুব খুশি। আকাশ ভরা সুর্য-তারার দেশ খুশিতে ঝলমল, ভয় হচ্ছে এতো সাময়িক স্বস্তি, সাময়িক আনন্দ। এরপরও কি মানুষ পরিবেশের প্রতি একটু সদয় হবে? মানবিক মুখ দেখা যাবে? না প্রকৃতি নিধন চলবেই। সিরিয়ার বোমার টুকরোয় ক্ষত বিক্ষত শিশুটি কি সত্যিই ঈশ্বরেকে সব বলে দিয়েছে? তাই পৃথিবীটা এতো সুন্দর।
নয়া ঠাহর, বাংলা পোর্টাল, সম্পাদক অমল গুপ্ত,
মোবাইল নং-9864044239









কোন মন্তব্য নেই