ত্রিশূলে কংগ্রেসকে বিঁধলেন জ্যোতিরাদিত্য-- ‘কংগ্রেস আর আগের মতো নেই’ !!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বিজেপির সর্বভারতী সভাপতি জেপি নাড্ডার হাতে পুস্পস্তবক নিয়ে বিজেপিতে পা রাখলেন গোয়ালিয়রের মহারাজ জ্যোতিরািদত্য সিন্ধিয়া। বিজেপির পদ্ম
আঁকা উত্তরীয় গলায় পরে ধন্যবাদ জানালেন মোদী এবং অমিত শাহকে।
এবার আর কংগ্রেসের দাপুটে নেতা নন, বিজেপি তাঁর নামের আগে বসবে বিজেপি শব্দটি। অঘটন ঘটিয়ে সেই গেরুয়া শিবিরেই গিয়ে ভিড়লেন গোয়ালিয়রের মহারাজ। পূর্ণ হল বৃত্ত। পিসি-ভাইপোর যুগলবন্দিতে আরও শক্তিশালী হল বিজেিপ। রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া আগেই ভাইপোর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, সঠিক কাজ করেছেন জ্যোতিরাদিত্য। তাঁর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও।
রাহু কাল অতিক্রন্ত হতেই বিজেপির সদর দফতরে হাজির হয়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। ১৮ বছরের কংগ্রেস দলের সঙ্গে সম্পর্কের মায়া কাটিয়ে পদ্মশিবিরের হাত ধরলেন গোয়ালিয়রের রাজা। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার উপস্থিতিতেই বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। তাঁর হাতে পুস্প স্তবক তুলে দেন জেপি নাড্ডা। পরিয়ে দেন পদ্ম আঁকা উত্তরীয়। জ্যোতিরাদিত্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁকে দলে সাদর অভ্যর্থনা জানান জেপি নাড্ডা।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তিনি বলেছেন, 'বিজেপি পরিবারে সামিল করার জন্য মোদী এবং অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানাই। আমার জীবনে ২টি দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটা ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০১, আমার বাবার মৃত্যুদিন। সেই দিনটা আমার জীবন বদলে দিয়েছিল। আর দ্বিতীয়টি আমার বাবার ৭৫তম জন্মদিন। ১০ মার্চ ২০২০। এ দিন আমি জীবনের আরেকটি গুরুপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি জনসেবাতেই বিশ্বাসী বরাবর। জনসেবাই আমার জীবনের দর্শন। রাজনীতিই সেই আদর্শ মেনে চলার একমাত্র পথ। মোদী এবং অমিত শাহ আমাকে বিজেপির অংশ করে জনসেবার সুযোগ করে দিয়েছেন।'
জ্যোতিরাদিত্য শিবিরের বহুদিন আগে থেকেই দাবি ছিল যে,সোনিয়া-রাহুল কোনওদিনই জ্যোতিাদিত্যের তোলা পরামর্শ-প্রস্তাবকে পাত্তা দেননি। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের মধ্যে যে ছাই চাপা আগুন জ্বলছিল তা নিয়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড কোনও তোয়াক্কাই করে নি। আর তারপরই গত একবছর ধরে কমলনাথ বনাম জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিতে থাকে। শেষমেশ দল ছেড়ে আজ বিজেপিতে যোগ দিয়ে জ্যোতিরাদিত্য কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একাধিক তোপ দাগেন।
সোনিয়া গান্ধীকে পাঠানো ইস্তফাপত্রেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া দাবি করেছিলেন যে, তিনি পার্টিতে থেকে আর কাজ করতে পারছেন না। আর এদিন বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, কংগ্রেস ৩ দিক থেকে আটকে রয়েছে। তিনি বলেন, 'কংগ্রেস পার্টি আর আগের মতো নেই।'
এদিন জ্যোতিরাদিত্য বলেন, কংগ্রেসে থেকে তিনি ১৮ বছর ধরে মানব সেবা ও রাষ্ট্রসেবার কাজ করতে চেয়েছেন । তবে তা আর করতে পারছেন না দলের মধ্যে থেকে। তিনি বলেন, কংগ্রেস বাস্তববোধ থেকে অনেক দূরে রয়েছে। যুব নেতাদের এগিয়ে আনা হয়না। এমনকি যুবনেতাদের কাজের সুযোগও কমে গিয়েছে। তাঁর দাবি কংগ্রেস নেতৃত্ব একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা মানে না। যার নেপথ্যে রয়েছে দুর্নীতি।
এদিন ক্ষোভের সুরে জ্যোতিরাদিত্য বলেন, বাস্তব থেকে বারবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। এছাড়াও পার্টিতে যুব নেতাদের এগিয়ে দেওয়া হয়না বলেও ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি। উল্লেখ্য, যুবনেতা বনাম বর্ষীয়ান নেতার দ্বন্দ্ব নিয়ে এদিন মুখ খুলে ফের একবার তাঁর ও কমল নাথের যুদ্ধকেই ইঙ্গিত করেন জ্যোতিরাদিত্য। মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় কংগ্রেসের জয়ের কাণ্ডারী জ্যোতিরাদিত্যকে সরিয়ে কমল নাথকে মুখ্যনমন্ত্রীর আসন দেওয়া হতেই ক্ষোভ বাড়ে সিন্ধিয়া শিবিরে। সেই সময় কংগ্রেস হাইকম্যান্ড তরুণ তুর্কী সিন্ধিয়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে বর্ষীয়ান কমল নাথকে মুখ্যমন্ত্রিত্বের জন্যে বেছে নেন। সেই প্রসঙ্গকেই কার্যত এদিন তুলে ধরেন জ্যোতিরাদিত্য। এদিন কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন । তিনি বলেন, ভারত এই মুহূর্তে মোদীর হাতে সুরক্ষিত। তাঁর দাবি, কোনও পার্টির এভাবে পর পর দু’বার দেশের শাসক দল হিসাবে উঠে আসা ও এমন সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উঠে আসা একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। আর তাতেই বোঝা যাচ্ছে মোদীর নেতৃত্বেই ভারত এগিয়ে চলেছে। আর তাঁর নেতৃত্বেই জ্যোতিরাদিত্যও নিজের জনসেবা এগিয়ে নিয়ে যেতে চান বলে দাবি করেন।
কোন মন্তব্য নেই