লকডাউন, প্রকৃতি এখন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, আকাশ জীবন ফিরে পেয়েছে
অমল গুপ্ত : গুয়াহাটি
আমাদের চারপাশে মানুষের কোলাহল নেই, বিকট শব্দ নেই, গাড়ি মোটরের, কারখানার কালো ধুয়া, কার্বন ড্রাইঅক্সাইডের
বিষ নেই, নির্মল আকাশ প্রানভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, আর লক ডাউনকে আশির্বাদ দিচ্ছে। গাছগুলোতে রাস্তার
ধুলো জমছে না, চারপাশের গাছগুলোতে
রঙবেরঙের পাখিদের কি আনন্দ, কি উজ্জ্বল, কি উজ্জীবতা, দূষণমুক্ত আকাশ
হাসছে, ঝলমল করছে সোনালী রোদ, আমার বাড়ির গোলাপ ফুলের লাল রং আরো উজ্জ্বল, সজীব হয়েছে, চন্দন গাছটা
প্রাণ ফিরে পেয়েছে, মানুষ ছাড়া আর কেও মনমরা
নেই। মানুষের মৃত্যুর ভয় বেশী। মানুষ সারা জীবন পরিবেশ প্রকৃতিকে, গাছপালাকে, নদ-নদীকে, পাহাড়কে, জল-জঙ্গলকে, জীবজগতকে নিজের ব্যাক্তি স্বার্থ্যে ব্যাবহার
করেছে, বিরাট হৃদয়ের মুক্ত আকাশকে চারপাশে ঘিরে দূষিত
করে তুলেছে। মানুষের অত্যাচারে আমাদের প্রাণবায়ু নীল আকাশ নিঃশ্বাস
নিতেও পারছিল না। এখন প্রানভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আজ আমাদের পাশে হিন্দু নেই, মুসলিম নেই, ক্রিস্টান, বৌদ্ধ নেই, আছে শুধু ঘর বন্দি আতঙ্কিত মানুষ। এক অজানা অদৃশ্য শত্রু
নোভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড 19-এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। মন্দির, মসজিদ, গীর্জা প্রভৃতি ধর্মীয়
স্থানেও যেতে পারছে না। যেখানে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অবস্থান, আল্লা, ভগবান, গড সব একাকার, শুধু লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন, করোনা ভাইরাস রোগ মুক্তির বেড আর কিছুই অবশিষ্ট
নেই। অজানা রোগের ভয়ে কাতর মানুষগুলো কি লকডাউনের আগে একবারও চারপাশের পরিবেশের দুর্দশার
কথা ভেবেছেন? দূষণযুক্ত, ধোঁয়ায়, বিষে ভরা আকাশের দিকে চেয়েছেন? ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গার বিষাক্ত
জলের দিকে চেয়েছেন? আমার বাড়ির
চারপাশের পাখি, প্রজাপতি, ফড়িং, পিঁপড়ে, দূর্বা ঘাস, অজানা গাছের মাথায় শিশিরের মুক্ত বিন্দুকে
দেখেছেন? জোৎস্নার আলোয়
মাখা রাতের কান্না শুনেছেন? চারপাশে শুধু
হাহাকার কান্না, স্বাৰ্থপর ভোগ সরবস্য, অহংকারী মানুষের দাপটে পরিবেশ
প্রকৃতি বহু দূরে চলে গেছে। এবার তাদের জবাব দেবার পালা এসেছে। না, আমরা মরবো না, ভয়ে সিঁটিয়ে থাকবো, সকাল থেকে রাত পৰ্যন্ত হরমোন, বিষ মিশ্রিত মাছ, মাংস, দুধ, শাক-সব্জি খাওয়া, ভেজাল খেয়ে আর সকাল
থেকে বিলাস বৈভবে থাকা, মূল্যবোধহীন
মানুষের সজয়েই মৃত্যু হবে না, করোনা আমাদের
মারতে পারবে না। ভেজাল খাওয়া অহংকারী মানুষের মৃত্যু নেই। আজ লকডাউন থাকাকালীন
প্রথম গুয়াহাটি মহানগরের বেলতলা, ছয়মাইল ব্যাস্ততম
এলাকা আমার ছোট্টগাড়ি নিয়ে ঘুরলাম, প্রতিদিন সেইসব
অঞ্চল প্রচন্ড যানজট থাকে, ধুলো, ধুমা, লক্ষ লক্ষ মোটর গাড়ি বাইক কার্বন ড্রাই-অক্সাইড ছাড়ছে, লকডাউন না হলেও
আমরা মাস্ক সদায় পরে গাড়ি চালাই, দেশের মধ্যে অন্যতম দূষিত শহর গুয়াহাটি, স্বাস-প্রশাস নিতে কষ্ট হয়। আজ
শহরে কি দেখলাম নীরব রাস্তা, দু-একটা পুলিশ, ডাক্তারদের গাড়ি, রাস্তার কুকুরও নেই। হনুমান মন্দিরে ঘন্টা ধ্বনি
নেই, মসজিদগুলোতে নামাজ পড়ার মানুষ নেই, গির্জাতে সর্বশক্তিমান যীশুও মৌন, ধর্ম ভীরু সব মানুষ নিজেদের ঘরে আবদ্ধ। কারণ আমাদের
সামনে মৃত্যু দূত দরজার করা নাড়ছে। ভগবান, আল্লা, যীশু সব একাকার, হিন্দু-মুসলিম সব একাকার, শুধু বেঁচে আছে মানুষ, আর মানবতা। ইটালির প্রধানমন্ত্রী হাজার লাশের
পাশে দাঁড়িয়ে বলছেন, আমরা হেরে গেছি, মানসিক
শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েছি, আমাদের শেষ ভরসা
আকাশ। সেই আকাশকে কলুষমুক্ত করতে পারবোতো আমরা? আমরা অবশ্যই করোনা
সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাবো, আকাশ যদি
সম্পূর্ণ কালো ধোঁয়ার দূষণে ঢাকা পড়ে যায়, তবে মহান ঈশ্বর, আল্লা, যীশুও ঢাকা পড়ে যাবে। হাজার প্রার্থনাতেও
সাড়া দেবে না। আমাদের মৃত্যুকেও আটকাতে পারবে না।
দক্ষিণ ভারতের এক রাজপথে বুনো হরিণের একটি দল
বিশ্রাম করছে।
বাংলা নিউজ পোর্টাল নয়া ঠাহরের সম্পাদক অমল গুপ্ত, মোবাইল নং : +91 98640 44239
কোন মন্তব্য নেই