বিজেপি আমলে অসমে বাঙলি হিন্দুরা বেশি হেনস্থার শিকার হয়েছে, অভিযোগ তরুণ গগৈয়ের
বরাকের সবাই খিলঞ্জীয়া ভূমিপুত্র : কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : ভোগালি বিহুর প্রাক সন্ধ্যা থেকে 13 জানুয়ারির গভীর রাত পর্যন্ত অসম বিধানসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিতর্ক
বেশ জমে উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার পাশাপাশি
বরাকের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ
বাংলা ভাষায় জোরাল ভাষণ দিয়ে নানা তথ্য দিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করেন বাঙালিরা
রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা খিলাঞ্জীয়া,
ব্রিটিশরা নিম্ন অসমের
গোয়ালপাড়া জেলার সঙ্গে কাছাড় জেলাকে জুড়ে দিয়েছিল, পরে সিলেট
ভাগ হলেও কাছাড়-এর বৃহৎ অংশ ভারতে থেকে যায়, তাই ভারতের আদি বাসিন্দা বরাকের মানুষ ভূমিপুত্র খিলাঞ্জীয়া, তাদেরকে কি করে বিদেশি বলা হয়? তাদেরকে বিদেশির নামে কেন হেনস্থা করা হচ্ছে? তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্যের ভাষা-কৃষ্টি
রক্ষা করতে সরকার 22টি জনগোষ্ঠীর
জন্য 15-20 কোটি টাকার কর্পাস ফান্ড তৈরি করা হলো,
অথচ বরাক বঙ্গ সাহিত্য
সন্থা, বিষ্ণুপ্রিয়া
মণিপুরী সাহিত্য সভাকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হলো না। উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক
পুরকায়স্থ অভিযোগ করেন কেবল বাঙলিকে দেশ
বিভাজনের বলি হতে হচ্ছে কেন?
এআইইউডিএফ-এর হাফিজ বশির
আহমেদ অসম চুক্তির 6 নম্বর দফার
অন্যতম শর্ত ছিল প্রকৃত ভূমিপুত্র বা খিলাঞ্জীয়ার সংজ্ঞা ঠিক করতে হবে তা আজও হলো
না। অথচ অসম চুক্তি নিয়ে কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর অসমের
জাতি-মাটি-ভেটি রক্ষার অঙ্গীকারের পাশাপাশি দৃঢ়তার সঙ্গে জানালেন, সে অসমের সন্তান, অসমের মানুষের সঙ্গে সে কোনো দিন প্রতারণা করবে
না। হিমন্তবিশ্ব শর্মা দীর্ঘ ভাষণে জনগনানার তথ্য তুলে ধরে জানালেন, নিম্ন অসমে বাঙলি হিন্দুদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অপরদিকে বাংলাভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকের
সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে, তাই
ভবিষ্যতে রাজ্যে বদরুদ্দিন সাহেবরা দিশপুরে
মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসবেন, শিলাদিত্যরা মুখ্যমন্ত্রীর পদের ধারে কাছে
পৌঁছতে পারবেন না। হিমন্ত বরাক উপত্যকার পৃথক ভৌগোলিক স্থিতি, পৃথক ভাষা কৃষ্টিকে মেনে নিয়ে বলেন, সেখানে অসম চুক্তি কোনো সমস্যা নয়। প্রাক্তন
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ 13 জানুয়ারির গভীর
রাতেও এমন তরুন-এর মতো আক্রমন্যাতক ভাষণ
দেবেন তা কেউ ভাবতেও পারেনি। তিনি তার ভাষণে দাবি করেন আজ বিজেপি সরকার তার তৈরি পরিকাঠামোর ওপর রাজ করছেন।
রাস্তাঘাট সেতু নতুন করে কিছুই বানায়নি। রাজ্যে
খেলো ইন্ডিয়া গেম চলেছে, তার পরিকাঠামো
তার সরকার গড়েছে। হিমন্তকে বার বার আক্রমণ করে বলেন, শিলচরে গিয়ে বলেছিলাম, 2014 সাল পর্যন্ত যারা অসমের ভোটার, সেই সব বাঙলি
হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া যেতে পারে,
2019 সাল পর্যন্ত যাদের ভোটার
তালিকায় নাম আছে, তাদের কথাও বিবেচনা করা যেতে পারে। বিজেপি সরকার বাঙলি হিন্দুদের রক্ষার কথা বলে
অথচ এনআরসি তালিকা থেকে 11 লাখ বাঙলি
হিন্দুর নাম কাটা পড়েছে। তাদেরকে কে বিদেশি বানালো বলে প্রশ্ন করে তিন তিনবারের
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, বিজেপি আমলে বাঙলি
হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি হেনস্থার শিকার হয়েছে। হিমন্ত বলছেন, 5 লাখ বাঙলি হিন্দুর দায়িত্ব নিতে হবে, তরুণ গগৈ এ প্রসঙ্গে
বলেন, 1 জন বাঙলি হিন্দুর দায়িত্ব নেব কেন? হিমন্ত হিন্দু,
মুসলিম, বাঙলি, অসমীয়ার মধ্যে বিভাজন আনতে চাইছে। কা প্রসঙ্গে বলেন, ভারতীয় সংবিধানের
14 এবং 15 ধারা লঙ্ঘন করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই ধারাতে সব
জনগোষ্ঠীর প্রতি সম মর্যাদা, সম বিচারের কথা
বলা হয়েছে, অথচ মুসলিম
জনগোষ্ঠীকে এই আইনের বাইরে রেখে অবিচার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভুটান,
শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের
নির্যাতিতদের আশ্রয় দেওয়ার কথা কেন বলা হয়নি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কা বিরোধী এমন ভারতজুড়ে ছাত্রদের আন্দোলন জীবনে
দেখিনি। বলা হচ্ছে, শুধু মুসলিমরা এই আন্দোলন করছে, তা নয়, হিন্দুরাও এই
আন্দোলনে সামিল হয়েছে। তারা নাগরিকত্ব সংশোধনি আইন বা কা কোনো ভাবে সমর্থন করবে
না।
কোন মন্তব্য নেই