Header Ads

দু’টি স্মরণীয় চিঠি !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ঃ

ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী মাত্র ২৯ বছর বয়সে ১৯৩০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হন। সেখানে তিনি শিক্ষাচিন্তার স্বাক্ষর রেখেছেন। মাত্র ৩২ বছর বয়সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনীত হন। ১১টি সমাবর্তন ভাষণের মধ্যে দিয়ে তাঁর সারস্বত সাধনার প্রকাশ প্রতিভাত হয়। তাঁর সভাপতিত্বে ১৯৩২ সালের ২৩ জুলাই সিন্ডিকেট মিটিংয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদ অলঙ্কৃত করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু সেই সময় বঙ্গসমাজ সেই নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা শুরু করে। রবীন্দ্রনাথ ব্যথিত হয়ে শ্যামাপ্রসাদকে চিঠি লেখেন। তার উত্তরে ২৪ জুলাই ১৯৩২, শ্যামাপ্রসাদ লেখেন--
শ্রীচরণকমলেষু,
৭৭, আশুতোষ মুখার্জী রোড, কলকাতা
২৪ জুলাই, ১৯৩২।
যে কাজের জন্য আপনার সাহায্য ভিক্ষা করেছি, সে কাজ যথার্থ দেশের মঙ্গলকারক, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট হতে এইরূপ সংস্কারের দাবি আপনি বহুকাল করে এসেছেন। আজ যখন বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে বৃহৎ কাজে যোগ দেবার জন্য অনুরোধ করেছে, আপনি দ্বিধাশূণ্য মনে এই আহ্বান গ্রহণ করুন, এই আমার প্রার্থনা।
ইতি,
প্রণতঃ
শ্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
(দীনেশচন্দ্র সিংহ / শ্যামাপ্রসাদ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, শতবর্ষের আলোয় শ্যামাপ্রসাদ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, পৃঃ ৪২)।

১৯৪১ সালের নভেম্বরে ফজলুল হক মুসলিম লিগ ছেড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে এগিয়ে আসেন এবং ঘোষণা করেন সঙ্গে থাকবেন হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ। ডঃ মুখার্জী অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী’র দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ১১ ডিসেম্বর, ১৯৪১ থেকে ২০ নভেম্বর, ১৯৪২ পর্যন্ত কাজ করে যান। এই সময় কাজী নজরুল ইসলাম আর্থিক অনটনের কারণে ফজলুল হক সাহেবের কাছে সাহায্য চেয়েও তাঁর কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে ডঃ মুখার্জীর শরণাপন্ন হন এবং সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য পান। শুধু তাই নয়, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী’র পৈত্রিক বাড়ি মধুপুরে নজরুলের সস্ত্রীক থাকার ব্যবস্থা করে দেন স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য। এক সেকেণ্ডের জন্যেও ভাবেন নি তিনি হিন্দুমহাসভার নেতা এবং তাঁর বাড়ি
এক ব্রাহ্মণ পরিবারের বাড়ি। কাজী নজরুল ইসলাম মধুপুর থেকে ১৭ জুলাই, ১৯৪২-এ ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে একটা চিঠি
লেখেন--
শ্রী চরণেষু,
…এই coalition ministry-র একমাত্র আপনাকে আমি অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করি ও ভালবাসি, আর কাউকে নয়। আমি জানি আমরাই এই ভারতবর্ষকে পূর্ণ স্বাধীন করব। সেদিন বাঙালীর আপনাকে ও সুভাষবাবুকেই সকলের আগে মনে পড়বে--আপনারাই হবেন এদেশের পতাকার নায়ক।
--কাজী নজরুল ইসলাম
(চিঠির প্রতিলিপি উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত শ্যামাপ্রসাদের ডায়েরি ও মৃত্যু প্রসঙ্গ, মিত্র ও ঘোষ পাবলিসার্স, ১৯৯১, পৃঃ IX ও পৃঃ X)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.