Header Ads

অসমীয়া-বাঙালি, হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি করাই বিলের লক্ষ্য : গৌহাটী হাইকোর্টের আইনজীবি দাইয়ান হুসেন

নয়া ঠাহর প্রতিবেদন, গুয়াহাটী, ৯ ডিসেম্বর : এই বিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রবাদ প্রতিষ্ঠা করা। এই বিল ভারতবর্ষের সংবিধানের ১৪, ১৫, ২১, ২৫ এবং ২৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। বিজেপি সব সময় দোষারােপ করে যে কংগ্রেসের জন্য না কি, ভারতবর্ষ ধর্মের ভিত্তিতে দুভাগ হয়েছে। কিন্তু আসল কথাটা হল প্রথম সাভারকার ১৯৩৫ সালের আহমেদাবাদের হিন্দু মহাসভার এক সাধারণ সভার বৈঠকে এই চিন্তাধারাকে প্রয়ােগ করেছিলেন। 
এই বিলে ৩১-১২-২০১৪ যে ভিত্তি বছর হিসাবে গণ্য করা হয়েছে তা ঐতিহাসিক আসাম চুক্তি এবং নাগরিকত্ব আইনের ৬ এনং ধারার পরিপন্থী। এই বিল মহামান্য উচ্চতম ন্যায়ালয়ের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা এনআরসির উদ্দেশ্যকে অসফল করবে। 
এই বিল ১৯৫৫ নাগরিকত্ব আইনের পরস্পরবিরােধী এই বিল বলছে নাগরিকত্ব পেতে হলে মূল নাগরিক আইনের ৫ নং ধারাকে সন্তুষ্ট করতে হবে, ৫ নং ধারা হল পঞ্জীয়নের দ্বারা নাগরিকত্ব। ৫ নং ধারার দফা ৫ নম্বরে উল্লেখ করা আছে নাগরিকত্ব ধরে নেওয়া হবে পঞ্জীয়নের তারিখ থেকে আবার নতুন বিলে বলা হচ্ছে নাগরিকত্ব ধরে নেওয়া হবে ভারতে প্রবেশের তারিখ থেকে। 
এই বিল মায়ানমারের হিন্দু, শ্রীলংকার তামিলদের এবং পাকিস্তানের আহমদিয়াদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এই বিল হল সেই লােকের জন্যে যাদের নাম ভারতবর্ষর ভােটার তালিকায় নেই। যাদের নাম ভােটার তালিকায় আছে বা নিজেদেরকে ভারতীয় বুলি দাবী করেণ তাদের জন্য এই বিল কোনাে উপকারে আসবে না। 
এনআরসি থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা এই বিলের আওতায় আসতে পারবে না, কারণ তারা নিজেদেরকে ভারতীয় বলে দাবী করেছে। এই বিল ভারতবর্ষে বসবাস করা বাঙালী হিন্দুদের কোনাে উপকারে আসবে না। এই বিল বাঙালী হিন্দুদের প্রথমে বাংলাদেশী বানাবে তার পরে ভারবর্ষের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য উপযুক্ত করে তুলবে। 
এই বিল বাঙালী হিন্দুদের গায়ে একটা তকমা সেটে দেবে এবং সমাজের চোখে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করবে যদিও তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয় এবং ভােটাধিকার ছাড়া কোনাে অধিকারই থাকবে না। ইতিমধ্যে আসাম চুক্তি ৬ নং ধারা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের এক কমিটি গঠন করেছে। 
বিস্ময়ের কথা সেই কমিটিতে বাঙালি হিন্দুর থেকে কোনাে প্রতিনিধি নেই তথা বরাক উপত্যকা থেকে কোনাে প্রতিনিধি নেই। ইতিমধ্যে সরকার এক ভূমি নীতি গ্রহণ করেছেন, সেই নীতিতে কেবল খিলঞ্জীয়া জনগােষ্ঠীকে জমির পাট্টা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। লােকসভাবিধানসভায় আসন সংরক্ষণ এবং খিলঞ্জীয়া জনগােষ্ঠীর জন্য তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির জন্য আসন সংরক্ষণের দাবী আছে। তাই বাঙালি সংখ্যালঘুদের কিছুই পাওয়াব থাকবে না। এই বিল বাঙালীদের সামনে ললিপপ ছাড়া কিছুই নয়। এই বিল বিজেপির ভােট কেনার রাজনৈতিক অস্ত্র। 
এই বিল আনার উদ্দেশ্য হল অসমীয়া বাঙালি, হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি করা এবং বরাক ব্রহ্মপুত্রর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা। মনে করা হচ্ছে এই বিলের গােপন এজেণ্ডা হচ্ছে পশ্চিমবংগের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করা এবং বরাক উপত্যকাতে বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে সেখানে এক কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল করে তােলা।
(লেখকের নিজস্ব মতামত।)



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.