অসম আন্দোলনের ছায়া দেখা গেল, সেই একই স্লোগান 'ওলাই আহা, ওলাই আহা', হাজার হাজার টায়ার জ্বললো, দূষণ ছাড়ালো
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : আশির দশকে বিদেশি বিতরণ আন্দোলনের ফলে অসম উত্তাল হয়ে উঠেছিল, সেই আন্দোলনের মতো আজ প্রায় ৪০ বছর পর অসম বিদেশি বিতরণ আন্দোলনের ছায়া দেখতে পেল। সিটিজেন আমেন্ডমেন্ট বিল বা ক্যাবের বিরুদ্ধে সেই একই স্লোগানে রাজ্য উত্তাল হলো 'রাইজ উলায় আহা, উলায় আহা' অর্থাৎ মানুষ তোমরা ঘর থেকে বেড়িয়ে এস, অসমের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে যোগ দাও। এই ডাকের সঙ্গে 'জয় আই অসম' স্লোগান তো ছিলই। আশির দশকের আন্দোলন এ রাজ্যের ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিম এবং ভাষিক সংখ্যালঘু বাঙলি হিন্দুরা টার্গেট ছিল। এবার অসমীয়া এবং বাঙলি মুসলিমরা এক সঙ্গে টার্গেট করছে বাঙলি হিন্দুদের। বলা হয়েছে বাংলাদেশি বাঙলিদের টার্গেট, কিন্তু আজকের আন্দোলনে বঙ্গাইগাঁও সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঙলি যুবকদের হেনস্থার খবর পাওয়া গেছে।
আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বারবার বলেছেন, রাজ্যের বাঙলি হিন্দুদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন নয়, হিংসাত্মক আন্দোলনে তাদের সমর্থন নেই বলেও ঠারে ঠরে জানিয়ে দেন। তারপরেও আসু এবং উত্তর পূর্ব ছাত্র সংস্থা বা নেসোর আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলো না। গোটা রাজ্য নয় শুধু গুয়াহাটি মহানগরে মন্ত্রীর কনভয়কে যেভাবে বাধা দেওয়া হলো, ভাঙাগড় উড়ালপুলে শিক্ষা মন্ত্রীর কনভয়কে আন্দোলনকারীদের রুদ্র মূর্তি দেখে পিছিয়ে আসতে হলো, তা সারা দেশবাসী টিভির পর্দায় দেখা গেছে। গুয়াহাটিতে টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটল, পুলিশের লাঠিচার্জ হলো, ইট পাটকেল পড়লো, বিকাল ৪টাতে ১১ ঘন্টা বন্ধের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও আন্দোলনকারী জিএস রোড অবরোধ থেকে সরে আসেনি। পুলিশকে লাউড স্পিকার ঘোষণা করতে হয়, আর মাত্র ৫ মিনিট সময় দেওয়া হচ্ছে, না সরলে জমায়েতকে বেআইনি ঘোষণা করে আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই রকম পরিস্থিতি দীর্ঘ অসম আন্দোলনকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। যার ক্ষত আজও সুকইনি।
অসমের যে কোনো আন্দোলন জানান দেয় গাড়ির জ্বলন্তচাকা বা টাযা। এক সূত্র জানায়, রাজ্যে ৩২টি জেলা আছে, আছে ৭৪টি মহকুমা। কম করেও ১০ থেকে ২০ হাজার রবারের টায়ার সড়কের মাঝ পথে জ্বালিয়ে আন্দোলনকারীরা তাদের প্রতিবাদ সাব্যস্ত করতে গিয়ে ব্যাপক হারে পরিবেশকে দূষিত করলো।এক পরিবেশবিদ জানান, টায়ারের কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়, কার্বন ডাই অক্সাইড, মোনো অক্সাইড, মুটা জেনিক জাতীয় টক্সিন প্রভৃতি রোগের উৎস। ব্যাপক বায়ুদূষণ ঘটবে, স্বাস জনিত রোগ ও ক্যান্সার হওয়ারও সম্ভাবনা আছে।
আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে সফট টার্গেট গাড়ির টায়ার। সেই প্রতিবাদের ভাষার পরিবর্তন হবে কি? মুখ্যমন্ত্রী তো দূষণ মুক্ত পরিবেশ গড়ার অঙ্গীকার করে থাকেন। তিনি কি আন্দোলন কারীদের টায়ার জ্বালানো বন্ধ করার কড়া নির্দেশ দিতে পারবেন?
কোন মন্তব্য নেই