Header Ads

মহারাষ্ট্রে দেবেন্দ্র-অজিতের শপথ গ্রহণ নিয়ে প্রতিক্রিয়া কংগ্রেস নেতাদের !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ঃ

মহারাষ্ট্রের সরকার গঠন নিয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে কংগ্রেস। এতটাই যে সকাল সকাল দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ও অজিত পাওয়ারের শপথ গ্রহণের কথা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি কংগ্রেস। অনেক কংগ্রেস নেতারাই এই খবরটিকে মিথ্য়া বলে মনে করেছিলেন। তবে ধাক্কা সামলে সত্যিটা অনুভব করার পরেই প্রতিক্রিয়া দেন বেশ কয়েকজন কংগ্রেস নেতা। তাদের মধ্যে অন্যতম রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত অভিষেক মনু সিংভি।

মহারাষ্ট্রে দেবেন্দ্র ফড়নবিশের শপথ গ্রহণের পর কংগ্রেসের তরফে প্রথম টুইটটি করেন অভিষেক মনু সিংভি। টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, "অবিশ্বাশ্য। মাহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে যা পড়লাম তা বিশ্বাস হচ্ছে না। প্রথমে ভাবলাম এটা ফেক নিউজ। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় সরকার গঠন নিয়ে আমাদের ত্রিপাক্ষিক বোঝাপড়া তিন দিনের বেশি চলা উচিত হয়নি। তবে আমাদের আলোচনা  অনেক বেশি দিন পর্যন্ত চলে। সেই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে যারা চট জলদি সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে তারা সরকার গঠন করেছে। পাওয়ারজী তুস্সি গ্রেট হো। যদি এই ঘটনা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তা আশ্চর্যজনক।"

অভিষেক সিংভি ছাড়াও এই বিষয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান মুম্বই কংগ্রেসের সভাপতি মিলিন্দ দেওরা। টুইট বার্তায় বিখ্যাত হলিউড মুভি গডফাদারের ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, "নিজের বন্ধুদের কাছে রাখো। তবে শত্রুদের আরও কাছে রাখো।"


মহারাষ্ট্রের সরকার কারা গঠন করছে সেদিকে গত এক সপ্তাহে নজর ছিল সবার। তবে গতকাল অর্থাৎ, শুক্রবার পর্যন্ত পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছিল তাতে সকলেই নিশ্চিত ছিলেন যে সে রাজ্যে এবার সরকার গড়তে চলেছে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট। শুক্রবার তিনদলের একসঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলন করে একথা জানিয়েও দেওয়া হয় যে মহারাষ্ট্রের আগামী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন উদ্ধব ঠাকরে, শিবসেনা প্রধানকে ওই পদে বসানোর ব্যাপারে সব দলই সহমত হয়েছে বলে জানায় তাঁরা। কিন্তু তারপরেই একরাতের মধ্যে রাজনীতির সব খেলা ঘুরিয়ে দিল বিজেপি। শনিবার এনসিপির সঙ্গে জোট বেঁধে সে রাজ্যে সরকার গড়ল গেরুয়া দল।
অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে রাজনীতির খেলায় শিবসেনা-কংগ্রেসকে
হারিয়ে এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ারের সমর্থনে সরকার গঠন করল বিজেপি। এরই মাঝে এনসিপির মধ্যে দেখা দিয়েছে ভাঙন। জানা গিয়েছে শরদ পাওয়ারের সম্মতি ছাড়াই অজিত পাওয়ার
একা বিজেপির সঙ্গে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে দলে তাঁর সমর্থনকারী বিধায়কদের গোয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে
খবর।
শপথ গ্রহণের খবরে স্তম্ভিত বিরোধী শিবসেনা অবশ্য এখনও দাবি করছে যে শরদ পাওয়ারের সঙ্গে তারা আলোচনা করছেন। এনসিপি শরদ পাওয়ারের সঙ্গে রয়েছে, অজিতের সঙ্গে নয়। একই কথা বলেছেন এনসিপি-র মুম্বই শাখার প্রধান নবাব মালিক। তিনি অভিযোগ করেন, বিধায়কদের উপস্থিতি দেখার জন্য নেওয়া সইকে সমর্থনের প্রমাণ হিসাবে পেশ করেছেন। তবে অজিত পাওয়ার দাবি করেন দলের ২৯জন বিধায়ক তাঁকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।
আজ সকাল ৮টায় দ্বিতীয়বার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। তার ডেপুটি হিসাবে শপথ নেন অজিত পাওয়ার। মহারাষ্ট্র বিধানসভায় এনসিপির পরিষদীয় দল নেতা হওয়ার কারণে আইনত সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে অজিতের। এদিকে শপথ গ্রহণ হলেও সরকার সংখ্যাগরিষ্টতা প্রমাণ করতে হবে বিজেপি-অজিতের জোটকে। এর জন্য অবশ্য এক সপ্তাহ পাচ্ছে বিজেপি-অজিত। সেই ক্ষেত্রে দলবদল বিরোধী আইন থেকে বাঁচতে এনসিপির মোট ৫৪ জন বিধায়কের মধ্য়ে দুই তৃতীয়াংশকে অজিতের সঙ্গে থাকতে হবে। অর্থাৎ অন্তত পক্ষে ৩৬জন এনসিপি বিধআয়ক যদি অজিতকে সমর্থন জানান তবেই এই সরকার ও সমর্থন বৈধতা পাবে। তবে এখনও পর্যন্ত অজিতের দাবি অনুযায়ী ২৯জন আছে তাঁর সঙ্গে। এই ২৯ জনকে নিজের পক্ষে রেখে বাকি আরও ৭জন বিধায়ক খুঁজতে শুরু করেছেন অজিত। পাশাপাশি তাঁকে সমর্থন জানানো বিধায়কদের উপর যাতে কেউ প্রভাব না ফেলতে পারে, তাই গোয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁদের।
বেশ কয়েকদিন ধরে সরকার গড়া নিয়ে টালবাহানায় খবরের শিরোনামে ছিল মহারাষ্ট্র। আর আজ দেশবাসীর ঘুম ভাঙতেই সেই শিরোনাম বিস্ফোরণে পরিণত হয় যখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। এদিকে তাঁর ডেপুটি হিসাবে শপথ নিয়ে শিবসেনা ও কংগ্রেসকে চমকে দেন অজিত পাওয়ার। তবে বেলা বাড়তেই চিত্রটি স্পষ্ট হয়। প্রথমে এই পদক্ষেপ শরদ পাওয়ারের মস্তিষ্কপ্রসূত মনে করা হলেও এনসিপি সুপ্রিমো জানিয়ে দেন এই সিদ্ধান্তে তাঁর কোনও মত নেই। অজিত নিজের ইচ্ছায় এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।
শরদ পাওয়ার টুইট করেন, "মহারাষ্ট্র সরকার গঠনে বিজেপিকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত অজিত পাওয়ারের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নয়। আমরা জানাচ্ছি যে আমরা তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করিনি বা সমর্থন করি না।"
মহারাষ্ট্রে বিপর্যের পর এদিন বিকেলে সমস্ত বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার। এবং সেখানে ফের একবার গোটা ঘটনা পর্যালোচনা করা হবে। এবং পরিষ্কার হয়ে যাবে কোন কোন বিধায়ক সরদ পাওয়ারের সঙ্গে আছেন এবং কারা অজিতের দলে ভিড়েছেন।
সূত্রের খবর, এদিন বিকেলে দলের বৈঠকের পরেই অজিত পাওয়ারকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তিনি যেভাবে দল ভাঙিয়ে শরদ পাওয়ারের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে মহারাষ্ট্র সরকার গঠনের জন্য বিজেপিকে সমর্থন জানিয়েছেন তা নজিরবিহীন। আর এই দল বিরোধী কাজের জন্যই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়ারের।
মহারাষ্ট্রে এদিন সাতসকালেই মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। এবং উপ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন অজিত। ঘটনার পরই শরদের কন্যা সুপ্রিয়া সুলে হোয়াটসঅ্যাপে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে দেন দল এবং পরিবার এদিন ভেঙে গিয়েছে। সুপ্রিয়ার আরেকটি স্ট্যাটাসে লেখা ছিল, আমরা জীবনে কাকে ভরসা করব? জীবনে এত প্রতারিত কোনদিন অনুভব করিনি। অজিত পাওয়ারকে বাঁচিয়েছিলাম, ভালোবেসেছিলাম। আর বদলে দেখুন কী পেলাম।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.