Header Ads

শুরু হল রাস যাত্রা !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
পদ্মপুরাণে (৫২/১০৩-১০৫) শারদরাস ও বাসন্তীরাসের উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে (ব্রহ্মখণ্ড, পঞ্চম অধ্যায়) বাসন্তীরাস এবং শ্রীমদ্ভাগবত ও বিষ্ণুপুরাণে (৫/১৩/১৪-৬১) শুধুমাত্র শারদরাসের বর্ণনা আছে। হরিবংশে ও ভাসের বালচরিতে উল্লেখ আছে যে, কৃষ্ণ গোপিনীদের সঙ্গে হল্লীশনৃত্য করেছিলেন। হল্লীশনৃত্য যদি তালযুক্ত ও বিবিধ গতিভেদে বৈচিত্র্যপূর্ণ হয় তবে তাকে "রাস" নামে অভিহিত করা হয়। বিষ্ণুপুরাণের মতে, কৃষ্ণ রাস অনুষ্ঠান করেছিলেন গোপরমণীদের সঙ্গে। শ্রীধর স্বামী বলেছেন, বহু নর্তকীযুক্ত নৃত্য বিশেষের নাম রাস– “রাসো নাম বহু নর্ত্তকীযুক্তে নৃত্যবিশেষঃ।” শ্রীমদ্ভাগবতের অন্যতম টীকাকার বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, —“নৃত্যগীতচুম্বনালিঙ্গনদীনাং রসানাং সমূহো রাসস্তন্ময়ী যা ক্রীড়া বা রাসক্রীড়া”। শ্রীমদ্ভাগবতের মতে, কৃষ্ণ যোগমায়াকে সমীপে গ্রহণ করেই রাস অনুষ্ঠান করেছিলেন। বস্ত্রহরণের দিন গোপিনীদের কাছে কৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি রাসলীলা করবেন ! 
 কথিত আছে  ‘রস’ থেকেই রাস। রস অর্থে সার, নির্যাস, আনন্দ, হ্লাদ, অমৃত ও ব্রহ্ম বোঝায়।পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ হলেন মধুর রসের ঘনীভূত আধার। তাঁকে ঘিরেই রাস। রাসের সঙ্গে নারী-পুরুষের হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে নাচের বিষয়টি একেবারে যুক্ত। যাকে বলা হয় ‘হল্লীবক” নৃত্য। কিন্তু বৈষ্ণবদের কাছে রাস কথাটির ভিন্ন অর্থ বহন করে। শ্রীকৃষ্ণ শারদপূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনের যমুনাতটে গোপিনীদের আহ্বান করেন এবং তাদের অহং বর্জিত বিশ্বাসভক্তি ভাবে তুষ্ট হয়ে সঙ্গদান করেন। তাই বৈষ্ণবদের কাছে রাস আসলে ভক্ত এবং ভগবানের মিলন উৎসব। এক অসামান্য আনন্দ উৎসব।
বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে রাসের তাৎপর্য্য ও উপলক্ষ্য পাওয়া যায় ৷ 
কিন্তু যখনই শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের অধীন বলে ভেবে গোপিনীদের মন গর্ব-অহংকারে পূর্ণ হল, তখনই শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের মধ্য থেকে অন্তর্ধান হয়ে গেলেন। শ্রীকৃষ্ণ যখন রাধাকে নিয়ে উধাও হলেন, তখন গোপিনীবৃন্দ নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। ভগবানকে ‘একমাত্র আমার’ বলে ভেবে অহংকারের ফলে শ্রীকৃষ্ণকে তাঁরা হারিয়ে ফেলেছিলেন। যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ ত্রিজগতের পতি, তাই তাঁকে কোনো মায়া-বন্ধনে বেঁধে রাখা যায় না। তখন গোপিনীবৃন্দ একাগ্রচিত্তে শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি করতে শুরু করেন। ভক্তের ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান গোপিনীদের মানব জীবনের পরমার্থ বুঝিয়ে দিয়ে তাঁদের অন্তর পরিশুদ্ধ করেন। গোপিনীদের ইচ্ছাকে তিনি সম্মান জানিয়ে ‘যতজন গোপিনী, ততজন কৃষ্ণ’ হয়ে গোপিনীদের মনের অভিলাষ পূর্ণ করেছিলেন আর গোপীবৃন্দও জাগতিক ক্লেশ থেকে মুক্তিলাভ করেছিলেন। এইভাবে জগতে রাসোৎসবের প্রচলন হয়।
শ্রীকৃষ্ণের অষ্টসখীর নাম গুলো হচ্ছে--
1.ললিতা 2.বিশাখা 3.চিত্রা 4.ইন্দুরেখা 5.চম্পকলতা 6.রঙ্গদেবী
7.তুঙ্গবিদ্যা 8.সুদেবী।
নবদ্বীপে রাসের চেহারা ঠিক একেবারে আলাদা। পূর্ণিমার ভরা রাতে, বিশুদ্ধ তন্ত্রমতে শতাধিক শক্তিমূর্তির সাড়ম্বর পুজো, সঙ্গে আদ্যন্ত তামসিকতায় ভরা এক দামাল উৎসবের উদযাপন— সংক্ষেপে এটই হল নবদ্বীপের রাসের সংজ্ঞা। পূর্ণিমার রাতে দেড়শোর বেশি বিরাট বিরাট শক্তিমূর্তির পুজোর কারণে নবদ্বীপের রাসকে অনেকে ‘শাক্ত রাস’ বলেও অভিহিত করেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালে (১৭২৮-৮২) রাসের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছিল। তিনি রাসপূর্ণিমার রাতে নবদ্বীপে শক্তিমূর্তি পুজোয় উৎসাহ দেওয়া শুরু করেন। রাজানুগ্রহে অচিরেই সেই উৎসব ছাপিয়ে যায় বৈষ্ণবীয় রাসকে।
রাস মূলত কৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। তবে নবদ্বীপের রাস প্রধানত শাক্ত রসাশ্রিত। নবদ্বীপের জনসমাজে আবহমানকাল থেকেই ধর্ম-সংস্কৃতিতে তান্ত্রিক বীরাচারের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। মদ-মাংস (পঞ্চমকারের প্রধানবস্তু) এবং আড়ম্বরের জৌলুস নিয়েই বীরাচারের আরাধনার পূর্ণতা ঘটে। তাই অনিবার্যভাবেই সেই সবকিছুকে নিয়ে নবদ্বীপের রাসে ঘটেছে তন্ত্রাচারের পূর্ণ প্রতিফলন। নবদ্বীপের শাক্তরাসের চাপে বৈষ্ণবীয় রাসের সাত্ত্বিক ধারা অনেকটাই কোণঠাসা। তবে নবদ্বীপে এই একই দিনে মন্দির অভ্যন্তরে রাধাকৃষ্ণের চক্ররাস হয়, তবে তার জাঁকজমকপূর্ণতা শাক্তরাসের পাশে ম্রিয়মান। জনশ্রুতি প্রচলিত আছে, নবদ্বীপে চৈতন্যদেব রাধাকৃষ্ণের রাস উৎসবের সূচনা করেছিলেন। সেই হিসাবে ষোড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভেই রাসের সূচনা হয়েছিল। তবে চৈতন্যদেবের সন্ন্যাস গ্রহণের পর নবদ্বীপের বৈষ্ণব আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। গৌরাঙ্গ-পরিজনেরা বাধ্য হয়ে নবদ্বীপ ত্যাগ করে স্থানান্তরে গমন করেন। ফলে বৈষ্ণবীয় উৎসব অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নবদ্বীপে যে রাস উৎসবের সূচনা হয় তা অভিনব এবং বাংলার ধর্মীয় ইতিহাসে তা অদ্বিতীয়।
নবদ্বীপের শাক্তরাস বিষয়ে প্রথম আলোকপাত করেছেন গিরিশচন্দ্র বসু। ইনি ১৮৫৩-১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপ-শান্তিপুর ও কৃষ্ণনগরের দারোগা ছিলেন। তার রচিত “সেকালের দারোগা কাহিনী” (প্রকাশকাল ১৮৮৮ খ্রি.) থেকে তৎকালীন নবদ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান সহ সমাজ-সংস্কৃতিমূলক বিবিধ সংবাদ জানা যায়। নবদ্বীপের রাস সম্পর্কে তিনি লিখেছেন,
“রাসপর্বে শান্তিপুরে যেমন রঙ্গতামাসা এবং বহুলোকের সমাগম হয়, নবদ্বীপেও এই পূর্ণিমায় পটপূজা উপলক্ষে সেইরূপ সমারোহ হইয়া থাকে। নবদ্বীপের পটপূজা অতি প্রসিদ্ধ ব্যাপার। নামে পটপূজা কিন্তু বাস্তবিক ইহা নানাবিধ প্রতিমার পূজা। দশভূজা, বিন্ধ্যবাসিনী, কালী, জগদ্ধাত্রী, অন্নপূর্ণা প্রভৃতি দেবদেবীর মুর্তি গঠিত হয়। নদীয়া, বুইচপাড়া ও তেঘরির প্রায় প্রত্যেক পল্লীতেই এক একখানি করিয়া প্রতিমা হয়। প্রতিমাগুলি অত্যন্ত হালকা এমন কি ৫/৬ জন মজুরে তাহা স্কন্ধে করিয়া নাচাইতে পারে।
পটপূজার বিসর্জনের দিন উপস্থিত হইল। যে সকল স্থানে বহু প্রতিমা হয়, তাহার সর্বত্রই বিসর্জনের দিবস কোনও এক নির্দিষ্ট স্থানে এবং দর্শকদিগের মনোরঞ্জনের নিমিত্ত সমুদয় প্রতিমা আনিয়া একত্রিত করা হয় এবং ইহাকে কৃষ্ণনগর অঞ্চলে প্রতিমার আড়ঙ্গ কহে। পটপূজার বেলা দ্বিতীয় প্রহরের সময় আরম্ভ হইয়া সন্ধ্যার অনেক পূর্ব্বেই শেষ হইয়া যায়।’’
গিরিশচন্দ্র বসুর বর্ণনায় উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নবদ্বীপের শাক্তরাস উৎসবের একটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। বর্তমানে লুপ্ত পুরাণগঞ্জে বিন্ধ্যবাসিনী পূজিতা হতেন। এখানে রাধীকালুর ভিটেয় লছমনদাস শ্রীবাসঅঙ্গন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি তোতা রামদাস বাবাজির শিষ্য ছিলেন। ১৮৫৩-৬০ খ্রিষ্টাব্দে গিরিশচন্দ্র বসু পুরাণগঞ্জকে দেখেছিলেন নির্দিষ্ট স্থানে। পরে শ্রীবাসঅঙ্গন গঙ্গাগর্ভে নিমজ্জিত হওয়ায় পর ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় বর্তমান স্থানে স্থাপন করা হয়। ১৮৬০-৭০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সংঘটিত প্রবল বন্যা বা ভূমিকম্পে পুরাণগঞ্জ ধ্বংস হয়েছিল। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রবল বন্যা হয়েছিল। সম্ভবত এই বন্যাতেই পুরাণগঞ্জ গঙ্গাগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর এখানকার অধিবাসীরা বর্তমান শ্রীবাসঅঙ্গন পাড়ায় উঠে আসেন। এরপর থেকে পুরাণগঞ্জের বিন্ধ্যবাসিনী শ্রীবাসঅঙ্গন পাড়ায় পূজিতা হতে থাকে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দলে এই পূজা ভাগ হয়ে যায়। একটি গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করে রামসীতাপাড়ায় খড়েরগোলা বিন্ধ্যবাসিনী আর অপরটি যোগনাথতলায় গৌরাঙ্গিনী নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজপুরোহিত অসীমকুমার ভট্টাচার্যের মতানুশারে, গোলকীনাথ ন্যায়রত্ন এই দেবীর ধ্যানমন্ত্র রচনা করেছিলেন।
মণিপুরিদের রাস উৎসব---
মণিপুরিদের সব থেকে বড় উৎসব রাসপূর্ণিমা। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মণিপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র প্রবর্তিত শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলানুকরণ বা রাসপুর্ণিমা নামের মণিপুরিদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানটি প্রায় দেড়শত বছর ধরে (আনুমানিক ১৮৪৩ খ্রী: থেকে) পালিত হয়ে আসছে।
কথিত আছে, রাজর্ষি ভাগ্যচন্দ্র একদিন স্বপ্নে দেখতে পান রাধা ও কৃষ্ণের রাসলীলা। তারপর তিনি স্বপ্নের আলোকেই উপস্থাপন করেন রাসলীলার রাসনৃত্য। তিনি কয়েকজন কুমারী মেয়ে দিয়ে স্বপ্নের মতো রাসলীলা করান। তার নিজ মেয়ে কুমারী বিশ্বাবতীকে শ্রীরাধা এবং মন্দিরের শ্রীগোবিন্দকে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকায় অবতীর্ণ করে রাসলীলা করেন এবং তিনি নিজেই ওই রাসে মৃদঙ্গবাদক ছিলেন। তাতে তিনি নিজস্ব তাল ব্যবহার করেন। তার সে তালই এখন পর্যন্ত চলছে।
অন্য সুত্র থেকে জানা যায়, ১৭৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মণিপুরের মহারাজ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে যে নৃত্যগীতের প্রবর্তন করেন তা-ই রাসনৃত্য। মহারাজার মৃত্যুর একশ বছর পরে মহারাজ চন্দ্রকীর্তির শাসনামলে গোটা রাসনৃত্য আচৌকা, বৃন্দাবন, খুডুম্বা, গোস্ট, গোস্ট বৃন্দাবন, আচৌবা বৃন্দাবনসহ নানা ভঙ্গির পর্যায়ে পড়ে।
তার মৃত্যুর পর মহারাজ চন্দ্রকীর্তি এ উৎসবকে আরও বেশি জনপ্রিয় করতে উৎসবকে মণিপুরিদের মাঝে ছড়িয়ে দেন।
আমরা আগেই জেনেছি, মণিপুরিদের তিনটি গোত্র। এর একটি মৈতেই, আরেকটি বিষ্ণুপ্রিয়া সবশেষ মৈতেই পাঙান। বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতেই গোত্রের লোকরা সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী। এরা গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ভুক্ত। এছাড়া মৈতেই পাঙানরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। তবে সব মণিপুরিরই প্রধান বার্ষিক উৎসব রাসপূর্ণিমায় রাসলীলা।
কোচবিহারের মদনমোহনের রাসমেলা---
কোচবিহার রাসমেলা এই বাংলার শতাব্দী প্রাচীন মেলাগুলির অন্যতম এবং জনপ্রিয়। এই মেলা উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর পূর্ব ভারতের সব থেকে বড় মেলা। এটি কোচবিহারের প্রধান উৎসব।


কারও মতে ১৮১২ সালে অগ্রহায়ণ মাসের কার্তিক পূর্ণিমায় রাসযাত্রার দিন সন্ধ্যাবেলা রাজার নতুন গৃহে প্রবেশ উপলক্ষে রাসযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে রাসমেলার প্রবর্তন। আবার কারও মতে ১৮৯০ সালে বর্তমান মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠাকালে এ মেলার সূত্রপাত। তবে সূচনা যখনই হোক না কেন, শুরু থেকেই এই মেলা কোচ রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও অংশগ্রহণে লালিত পালিত ও পল্লবিত হয়েছে। আজও লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় এই মেলাকে কেন্দ্র করে।
কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় মন্দির চত্বরে রাসচক্র ঘুরিয়ে বর্তমানে মেলার উদ্বোধন করেন জেলাশাসক। ‘রাসচক্র’ রাসমেলার মতো হিন্দু ধর্মীয় আচারে বিরল অন্তর্ভুক্তি। বৌদ্ধ ধর্মচক্রের আদলে বাঁশের তৈরি প্রায় ৩০-৪০ ফুট উঁচু এবং ৮-১০ ফুট ব্যাস বিশিষ্ট চোঙাকৃতি কাঠামোর ওপর কাগজের সূক্ষ্ম কারুকাজ ও দেবদেবীর মূর্তি ফুটিয়ে তোলেন এক মুসলিম শিল্পী। কী ভাবে ও কেন এর সৃষ্টি তা জানা যায় না। তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম ধর্ম সমন্বয়ের প্রতীক হিসেবেই এর প্রকাশ।
এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বর্তমানে দু’টি আসর বসে মেলাকে কেন্দ্র করে। দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড পরিচালিত ঠাকুর বাড়ির প্রাঙ্গণে হয় মূলত ধর্মমূলক অনুষ্ঠান। ধর্মমূলক পাঠের সঙ্গে হয় কীর্তন, বাউল, যাত্রাপালা। অন্য দিকে পুরসভা পরিচালিত অনুষ্ঠানে লোকসংস্কৃতির পাশাপাশি থাকে আধুনিক নাটক ও গান। থাকে উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া গানের আসর। মাটির পুতুল এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ।
অতীতে মেলাগুলি ছিল বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র। বর্তমানে তা আর নেই তবে রাসমেলার বাণিজ্যিক গুরুত্ব বেড়ে চলেছে নিয়মিত ভাবে। মেলা আরও বিস্তৃত হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ছাড়াও অন্য জেলার এমনকী ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীরাও মেলায় আসেন। শাল, গরম কাপড়ের পাশাপাশি পাথরের তৈজস, কাঁসা-পিতল, ব্যাগ, প্লাস্টিকের খেলনা, জুতো প্রভৃতির সম্ভার থাকে মেলায়। রয়েছে কাঠ, লোহা, বাঁশের জিনিস। খাবারের দোকান তো আছেই। ভাঙা মেলাতেও থাকে লক্ষ মানুষের ভিড়। হারিয়ে যাওয়া বহু পুরনো মেলার ভিড়ে কোচবিহারের রাসমেলা উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। এর কৃতিত্ব কোচবিহার পুরসভার। পরিকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার দিক থেকে এই মেলাকে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মেলা বললে অত্যুক্তি হবে না।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.