Header Ads

অসুস্থ মাকে ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ ছেলের সরকারের কাছে

নয়াঠাহর প্রতিবেদন, বদরপুর : সুস্থ অবস্থায় মাকে ফিরিয়ে দিন। সরকারের কাছে কাতর অনুরোধ জানায় অসুস্থ কোকরাঝাড় ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি বদরপুরের ষাটোর্ধ ময়নারানি দাস সিংহের ছেলে দিবাকর সিংহ এবং তাঁর মা-র বন্দিজীবনের করুন বর্ণনা দেন। ঘুষ না দেওয়ায় সীমান্ত পুলিশ মামলা পাঠিয়ে ট্রাইব্যুনালে। একতরফা রায়ে বদরপুরের স্বদেশী ময়না রাণী সিং এখন বিদেশি হয়ে দীর্ঘ ২ বছর ১ মাস ধরেই ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি। ডিমা হাসাও জেলার লাংটিয়ের বাসিন্দা ময়না রাণী সিং নামের এক মহিলাকে একতরফা রায়ে বিদেশী বিদেশী বানিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। লাংটিয়ের বাসিন্দা হরি সিং এর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর আদালতে হলফনামা দিয়ে নিজের স্বামীর পদবী নিয়ে ময়না দাস থেকে ময়না রাণী সিং পদবী গ্রহণ করেন। ময়না রাণীর ছেলে দিবাকর সিং বলেন বাবা মারা যাবার পর লাংটিয়ে একটি ছোট খাবারের হোটেল চালান মা ময়না রাণী সিং। ২০১৭ সালে ডিমা হাসাও জেলার সীমান্ত শাখার পুলিশ লাংটিয়ে তাদের হোটেলে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ময়না রাণী ওই সীমান্ত শাখার পুলিশের কাছে খাবারের টাকা চান। এতে গরম হয়ে সীমান্ত পুলিশ এই মহিলার উপর বিদেশী তকমা লাগিয়ে দিয়ে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করে। ময়না রাণী ডিটেনশন ক্যাম্পে যাওয়ার পর সেখান থেকে ছেড়ে মামার বাড়িতে পুত্র, কন্যা আশ্রয় নেন মামারবাড়িতে। ময়না রাণী বাবার বাড়ি কাছাড় জেলায় শেয়ালটেক ফুলবাড়ি গ্রামে। আবার সেখান থেকে জায়গা বিক্রি করে ভাইয়েরা বদরপুর ডেপার এলাকায় বসবাস করছেন। ভারতীয় নাগরিককে আক্রোশ মূলক মনোভাব নিয়ে এক তরফা রায়ে রাতারাতি বিদেশি সাজিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে মাকে পাঠিয়ে দেওয়া একেবারে মেনে নিতে পারছেন না পুত্র দিবাকর সিং। তিনি জানান আমার মার মা অর্থাৎ দিদা বেলা রাণী দাস সহ সবাইর নাম এনআরসির চুড়ান্ত খসড়ায় তালিকা ভুক্ত হলেও মার নাম নেই।  ময়না রাণী সিংয়ের নামে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে। কাছাড় জেলার কাটিগড়া নির্বাচন চক্রের অধীন নিজ ফুলবাড়ি প্রথম খণ্ডে ১৯৬১ সালে উনার জন্ম হয়েছিল। তার নামে রয়েছে ১৯৬৮ সালের কালীনগর নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল সাটিফিকেট। এত কিছু থাকার পর অসুস্থ মহিলা বন্দি কোটায় দিন যাপন করছেন। বন্দি ময়না রাণী সিং এর ছেলে আরও বলেন, ওখানে নিয়মিত খাবারদাবার দেওয়া হয় না। তা ছাড়া ওষুধপত্রও না। এ অবস্থায় বার্ধক্যে এসে নেহাত কাগজপত্রের অভাবে আজ নাগরিকজীবন থেকে এক বদ্ধ খাঁচায় ভয়ানক অপরাধীদের সঙ্গে অসহায়ভাবে দিন গুজরান করছেন। তাঁকে এ বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে জমিজমা, বাড়ির পোষা গবাদি পশু বিক্রি করে আজ পথের ভিখারি। একশ্রেনির দালাল এ সুযোগে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে ময়নারানির সোনার সংসার। কথাগুলো বলত বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন দিবাকর। 
সবশেষে একথা জানান নলবাড়ি জেলার মুকালমুয়া থানার সোতেমারির বাসিন্দা ফালু দাস। ৭০ বছরের বৃদ্ধ ভারতীয় নাগরিক। নির্বাচন কমিশনের সচিত্র পরিচয় পত্র রয়েছে তার। কিন্তু ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তার নাগরিকত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তাকে ‘বিদেশি’ বলে ঘোষণা করা হয়। এর পরেই তাকে যেতে হয় আসামের গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে। তারপর উনার মৃত্যু হয়। এই অবস্থা যেন আমার মার বেলায় যেন না হয় সরকারের কাছে আবেদন জানান। এদিনে তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি একাংশ উকিল ও দালালের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। একইভাবে বদরপুরের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জয়দেব ঘোষ বন্দি শিলচর সেন্ট্রাল জেলে। না, চুরি-ডাকাতির মামলায় নয়, নেহাত তথাকথিত নথির অভাবে আগাম না জানিয়ে বদরপুর চৌমাথায় ডেকে পাঠিয়ে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় জয়দেববাবুকে। তখন সদ্য ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুপুত্রের বিয়োগ-যন্ত্রণায় জয়দেববাবু ছিলেন মারাত্মক বিধ্বস্থ। পুলিশ ও নাগরিক আইন এই অসহায় পিতাকেও রেয়াত করেনি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.