Header Ads

ট্রেন লেট ! যাত্রীরা পেলেন ক্ষতিপূরণ, অভিনব এবং নজিরবিহীন ‘জাপানী ঘটনা’ ভারতীয় রেলে

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি তেজস এক্সপ্রেস। তার জন্য ক্ষতিপূরণ পেলেন রেলযাত্রীরা। নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল ভারতীয় রেলে। ভারতীয় রেলের ইতিহাসে জাপানের মতো এই প্রথম এমনই এক সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। ট্রেন লেটে চলায় ৯৫১ জন রেলযাত্রী পেতে চলেছেন ক্ষতিপূরণ। বেসরকারি উদ্যোগে চালানো প্রথম ট্রেন তেজস শনিবার দেরিতে চলায় এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হল।
দিল্লিগামী তেজস এক্সপ্রেস লখনউ থেকে ছাড়ার সময় ছিল সকাল ৬টা ১০ মিনিট। ট্রেনের কামরাগুলি নিয়মমাফিক রক্ষণাবেক্ষণ যথাসময়ে শেষ হয়নি। ফলে ট্রেন ছাড়ে সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট নাগাদ। ফলে ট্রেনটি নির্ধারিত সময় দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটের পরিবর্তে গন্তব্যে পৌঁছয় দুপুর ৩টে ৪০ মিনিটে। 
আবার ফেরার সময় লখনউগামী তেজস এক্সপ্রেসটি ৩টে ৩৫ মিনিটের পরিবর্তে ছাড়ে ৫টা ৩০ মিনিট নাগাদ। ফলে একইদিনে দুদিকের যাত্রাতেই গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি করে বেসরকারি ট্রেন তেজস। এরপরই আইআরসিটিসির পক্ষ থেকে ঘোষমা করা হয়, যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। 
আইআরসিটিসির চেয়ারম্যান অশ্বিনী শ্রীবাস্তব জানান, যাত্রীদের সকলের মোবাই ফোনে একটি লিঙ্ক পাঠানো হয়েছে। সেখানে ক্লিক করলেই ক্ষতিপূরণ মিলবে। উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে তেজসের পথ চলা। এই ট্রেনের নিয়মেই বলা আছে, গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হলে ক্ষতিপূরণ দেবে সংস্থা। তবে ট্রেন ছাড়তে দেরি হলেও যদি গন্তব্যে সঠিক সময়ে পৌঁছয়, তখন ক্ষতিপূরণ মিলবে না। 
দিল্লিগামী তেজসে যাত্রী ছিল ৪৫১ জন, আর লখনউগামী তেজসের যাত্রী ৫০০ জন। এই ৯৫১ জন যাত্রী ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ যাত্রী পিছু ২৫০ টাকা। ট্রেন যাত্রার বিলম্বের কারণে যাত্রীদের চা, মধ্যাহ্নভোজ ও রিফ্রেশমেন্টেরও ব্যবস্থা করা হয়।
তবে এবার আর শুধু তেজস নয়, একের পর এক ট্রেন লেটে, যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের ভাবনা ভারতীয় রেলের। সূত্রের খবর অনুযায়ী, রেলমন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করছে। জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলিতে এই প্রকল্প চালু করা যায় কিনা, তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। তবে প্রিমিয়াম ক্যাটেগরির ট্রেন দিয়েই তা শুরু করা হবে।
২০২০ সাল নাগাদ প্রিমিয়ার ক্যাটেগরির ট্রেনগুলিতে এই প্রকল্প চালুর ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। দিল্লি ও লখনৌ-এর মধ্যে চলাচলকারী তেজস এক্সপ্রেসে এইমধ্যেই এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ভারতে প্রিমিয়াম ট্রেনগুলির মধ্যে রয়েছে, রাজধানী, শতাব্দী, গতিমান, তেজস, বন্দে ভারত। সূত্রের খবর অনুযায়ী, রেলমন্ত্রক প্রথমেই এই প্রকল্প চালু করতে চাইছে দিল্লি-মুম্বই, দিল্লি-কলকাতা, দিল্লি-হাওড়া রুটের রাজধানী এবং শতাব্দীতে। প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছে, একঘন্টা এবং তার বেশি সময়ের জন্য ১০ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে। এই লেট দুঘন্টার বেশি হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে। 
রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ভি কে যাদব জানিয়েছেন, লখনৌ-দিল্লি তেজস এক্সপ্রেসের পর ক্ষতিপূরণের প্রকল্প অন্য ক্যাটেগরির ট্রেনগুলির জন্যও চালু করার চিন্তাভাবনা চলছে। বহু অপেক্ষিত ডেডিকেডেড ফ্রেট করিডর চালু হয়ে গেলে, বেশিরভাগ মালগাড়ি সেই লাইন দিয়ে চলাচল করবে। ফলে রেল ট্র্যাকে যাত্রীবাহী গাড়ির স্পিড যেমন বাড়ানো যাবে, ঠিক তেমনই, ট্রেনের সময়ানুবর্তিতাও উন্নত করা যাবে। এই ডেডিকেডের ফ্রেট করিডর চালু করার সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বর। 
এছাড়াও কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সম্প্রতি, একট প্রস্তাব পাশ করেছে, বেশ কিছু ট্রেনের গতি ঘন্টায় ১৬০ কিমি করার জন্য। দিল্লি-মুম্বই এবং দিল্লি-হাওড়া রুটে বর্তমানে এই গতি ঘন্টায় ১৩০ কিমি। ফলে নির্দিষ্ট দূরত্বের ট্রেনের জন্য প্রায় সাড়ে তিনঘন্টা কম সময় লাগবে। এর জন্য ১৩,৪৮৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.