অভিযোগ, অসাংবিধানিক ভাবে রাজ্যপাল ধনকড়ের সফরের অনুমতি দিল না প্রশাসন, রাজ্যের গণতন্ত্র প্রশ্নের মুখে
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : শিলিগুড়ির পর ফের দুই জেলা সফরে বেড়িয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। কিন্তু মঙ্গলবার তার দুই জেলা সফর ও প্রশাসনিক বৈঠক ঘিরে ফের আরেকবার রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত গড়ায় চরমে।
এদিন উত্তর ২৪ পরগণার সীমান্ত পরিদর্শনের পর ধামাখালিতে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন লাগোয়া এলাকায় প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা ছিল রাজ্যপালের। এই বৈঠক নিয়ে উত্তর ২৪ পরগণার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট চিঠি লিখে জানান যে, যতক্ষণ না অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ বৈঠকের জন্য কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হবেনা। ওই চিঠিতে এও লেখা হয় যে, আধিকারিকরা এই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না, কারণ সমস্ত সিনিয়র অফিসার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সাথে উত্তর বঙ্গের সফরে গেছেন। নিজেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন জেলা শাসক। অন্যদিকে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে রাজ্যপালের বৈঠকেরও অনুমতি না মেলায় বাতিল হয়ে যায় বৈঠক। আর এতেই বেজায় অসন্তুষ্ট হন রাজ্যপাল।
গোটা বিষয়টিকে সাংবিধানিক সংকট বলে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'তাঁর কটাক্ষ, 'সরকার কি ছুটিতে চলে গিয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী ছুটিতে যেতেই পারেন, কিন্তু সরকার ছুটিতে যেতে পারে না।' রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের উদ্দেশ্যে তাঁর আরও প্রশ্ন, রাজ্যপাল কি রাজ্যের অধীনস্থ? রাজ্যপাল কথা বলতে চাইলে রাজ্যের অনুমতি লাগবে কেন !' এরপর ঘটনার নিন্দা করে তিনি বলেন, 'রাজ্যপাল হিসাবে যেখানে খুশি যেতে পারি, কিন্তু যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই জেলাশাসক অসুস্থ হচ্ছেন। মন্ত্রীদের বয়কটের সঙ্গে সরকারি আমলারাও যুক্ত হচ্ছেন কেন?'
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে শিলিগুড়িতে রাজ্যপালের প্রশাসনিক বৈঠক ঘিরেও এমন জটিলতা তৈরি হয়। সেই বৈঠকে জেলাশাসক, আমলা, তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা কেউই উপস্থিত ছিলেন না। আর এবার কাউকে আমন্ত্রণই করল না জেলা প্রশাসন। এর জেরে ফের সংঘাতে রাজ্য-রাজ্যপাল। যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী সপার্ষদ উত্তরবঙ্গ সফরে রয়েছেন। তাই অনুমতি মেলেনি বৈঠকের। এতেই ক্ষুব্ধ হন রাজ্যপাল।
এদিন ধামাখালির বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর বিশেষ লঞ্চে সুন্দরবনের সজনেখালির উদ্দেশে রওনা হন রাজ্যপাল। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া হেমনগর কোস্টাল থানা এলাকা পরিদর্শনে যান তিনি। তবে এদিন প্রশাসনিক বৈঠক বাতিল হলেও শুরুতে বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালির ধামাখালিতে রাজ্যপাল কে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। সেখানে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠক সেরে ফেলেন তিনি। পাশাপাশি, তিনি উত্তর ২৪ পরগনা বিএসএফের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা সজনেখালিতে যান সেখানেও সীমান্তরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেন। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেবেন বলে সূত্রের খবর। যেহেতু সীমান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই নিরাপত্তার দিক দিয়ে শিলিগুড়ির পরবর্তীতে তিনি দুই ২৪ পরগনার সীমান্ত কেই তার সফরের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেন।
কোন মন্তব্য নেই