Header Ads

এনআরসি, বিজেপি একুশের ভোট ও ভোটার !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : বেশ কয়েকদিন ধরেই মাথার মধ্যে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। সেই প্রশ্নেরই উত্তর হাঁতড়াতে হাঁতড়াতে বেশ কিছু ভাবনা চিন্তা যে ভাবে দানা বাঁধছিল সেটাই এই প্রতিবেদনের বিষয়। 
প্রশ্নটা হল-বাংলাকে পাখির চোখ (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট) করে বিজেপি বাংলা দখলের যে ছক কষছে তা কি এনআরসি হুঙ্কারে হাত ছাড়া হওয়ার কথা না ভেবেই? মোদী-শাহ জুটি স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের এমন এক রাজনৈতিক জুটি যার তুলনা মেলা খুব সহজ নয়। কেউ কেউ প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রসঙ্গ তুলে আনতে পারেন বটে তবে মোদী’র সঙ্গে কোন দিক থেকেই তিনি তুলনীয় নন--না রাজনৈতিক-আন্তর্জাতিক-কূটনৈতিক শিক্ষাদীক্ষার প্রেক্ষিতে না অভিজাত রাজনৈতিক পারিবারিক প্রেক্ষিতে। সুতরাং ইন্দিরাকে এক স্বতন্ত্র ব্যক্তি-ইতিহাস হিসেবে একদিকে রেখেই মোদী-শাহ জুটির কথা ভাবতে হবে। 
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের দিকেই পাখির চোখ করে মোদী আওয়াজ তুলেছিলেন কংগ্রেসমুক্ত ভারত গড়ে তোলাই তাঁর লক্ষ্য। বলাবাহুল্য, তিনি তাঁর সেই লক্ষ্যের খুবই কাছে চলে এসেছেন। শুধু কংগ্রেস নয়--বিজেপি বিরোধী সব দল ও দাপুটে নেতারা এখন বলতে গেলে শুধু ছত্রভঙ্গই নয়--প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছেন। মোদী-শাহ জুটি গত সাড়ে পাঁচ বছরেই এদেশের রাজনীতিতে বিরোধীদের অওকাত কতটুুকু সেটা বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন। বিরোধীদের ঐক্যের আওয়াজ যে কী ভাবে কতটা অন্তঃসারশূন্য করা যায় সেটা সব কিছু ছেড়ে দিয়ে মোদীর কাছে বিরোধীদের শেখা দরকার--শিখতে পারলে হয়তো আগামী বছর দশেক পরে তাঁরা বিজেপি বিরোধিতার জায়গায় উঠে আসতে পারেন। 
মোদী-শাহ জানেন--প্রধানমন্ত্রীত্বের চেয়ারের দিকে তাকিয়েই আঞ্চলিক দলগুলো নিজের নিজের রাজ্যের আধিপত্যকে অটুট রেখেই (অর্থাৎ কাউকে এক ছটাক জমি না ছেড়ে) বিরোধী ঐক্য নামের এক রঙদার যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করার চেষ্টা করে। ফলে রাজ্যে রাজ্যে বিরোধী ঐক্যে যে ফাটল ধরে তাতে আরও বেশি করে কি ভাবে জল ঢালতে হয় সেটাও মোদী-শাহ জুটি বিলক্ষণ বোঝেন এবং সেই মতো ঘুঁটি সাজিয়ে বিরোধীদের হাতে কৌটো ধরিয়ে দেন !
বাংলাতেও তাদের মারাাত্মক রাজনৈতিক মেধা রীতিমতো ক্লিক করে গেল গত লোকসভা নির্বাচনে। সামনে বিধানসভা নির্বাচন--বাংলা তাদের যেকোন মূল্যে চাই ! কিন্তু প্রশ্ন হল--তাহলে এনআরসি নামের মারাত্মক কুড়ুল তারা নিজেদের পা লক্ষ্য করেই চালাবে কেন? এ প্রসঙ্গে বিজেপি’র চুনোপুঁটি নেতারা হুঙ্কারে রাজ্য কাঁপালেও অমিত শাহ কিন্তু বেশ কিছু কথা বলেছেন যা রীতিমতো ভেবে দেখার মতো। 
তিনি বলেছেন--অসমে যেভাবে এনআরসি হয়েছে সেভাবে আর এনআরসি হবে না। তার মানে তিনিও বুঝে গেছেন বা তাঁকে বোঝানো হয়েছে--দশকের পর দশক ধরে অসমে বাঙালি খেদাও অভিযানের লক্ষ্যে এনআরসি অস্ত্র হাজেলার হাতে তুলে দিয়ে বাঙালিদের বিদেশি চিহ্নিত করা হয়েছে যে কোন অজুহাতে। এই এনআরসি’র চড়া মাশুল যে আসামের বিজেপিকে ভুগতে হবে সেটাও আর অস্পষ্ট নেই। 
অমিত শাহ বলেছেন সংসদে যে নাগরিকত্ব বিল তাঁরা আনছেন তাতে একজন সংখ্যালঘুও (হিন্দু-খ্রীষ্টান-জৈন ইত্যাদি) নাগরিকত্ব হারাবেন না। তিনি আরও বলেছেন, এনআরসি’র আগে হবে জনগণনা এবং তারপর এনআরসি হতে হতে ২০২১-এর পর !
অমিত শাহ’র বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার--সংসদে নাগরিকত্ব বিল পাশ হলে এক বিরাট সংখ্যক বাঙালি হিন্দু রেহাই পাবেন এবং যারা রেহাই পাবেন তাঁরা বিজেপি’র পাশেই থাকবেন--সুতরাং বাংলা দখল তাদের বিচারে এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
অমিত শাহ এটাও জানেন--মমতা যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন এ রাজ্যে এনআরসি করা যাবে না। কারণ, এ রাজ্যে এনআরসি চালাতে গেলে কম করেও এক লক্ষ সরকারি কর্মচারী লাগবে যা তিনি পাবেন না। লাগবে বিধানসভার সম্মতি এবং রাজ্য সরকারের সম্মতিও। সুতরাং এইসব প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে বাংলায় ক্ষমতাসীন হতে গেলে বাঙালি হিন্দুদের নির্বাচনের অনেক আগেই নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নিশ্চয়তা দিতে হবে--যা ঐ নাগরিকত্ব বিলের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব। 
অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী কোন পরিস্থিতিতেই বাঙালি হিন্দুদের সমর্থন হাতছাড়া করে বাংলা জয়ের কথা আদৌ ভাবছেন না। রীতিমতো অঙ্ক কষেই তাঁরা ঘুটি সাজাচ্ছেন। এখন দেখতে হবে মোদী-শাহ জুটির গেমপ্ল্যান মমতা কোন কৌশলে ভেস্তে দিতে পারেন !

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.