Header Ads

চীনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে দক্ষিণ ভারতীয় পোশাকে হাজির প্রধানমন্ত্রী মোদী

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করতে তামিলনাড়ুর মহাবালীপুরমে তামিলনাড়ুর ঐতিহ্যবাহী পোশাকে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দক্ষিণ ভারতের বিশেষ পোশাক ‘ভেস্টি’তে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।  মহাবালীপুরমে এই অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংও সাদা পোশাকে হাজির হয়েছিলেন। দক্ষিণ ভারতে ইংরেজদের প্ৰভাব কম ছিল বলে সেখানের মানুষ আজও ভারতীয় সংস্কৃতি বজায় রাখতে পেরেছে। মুঘল আক্রমণ হোক বা ইংরেজের কু-প্রভাব সবক্ষেত্রেই উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারত বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দিল্লীর অবস্থা এমন যে সেখানে একটাও ১০০ বছরের পুরনো মন্দির নেই। কিন্তু দক্ষিণ ভারত এখনও সুপ্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির দিক থেকে উন্নত।
মহাবালীপুরমকে অর্জুনের তাপোশালী বলে মনে করা হয়। এখানে অর্জুন তপস্যা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী চীনা রাষ্ট্রপতিকে সেই জায়গা সম্পর্কে জানিয়েছিলেন যেখানে অর্জুন তপস্যা করেছিলেন। এছাড়াও শি জিনপিংকে শক্ত পাথর কেটে নির্মিত পঞ্চরথ ও শোর মন্দির ঘুরিয়ে দেখান প্রধানমন্ত্রী মোদী। চীনের রাষ্ট্রপতি ভারতে পৌঁছানোর আগে চীনা ভাষায় স্বাগত লিখে সন্মান জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী চীনা ভাষায় লেখেন ‘ওয়েলকাম টু ইন্ডিয়া রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং।’ জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অপসারণের পর এটা চীনের রাষ্ট্রপতির প্রথম ভারত সফর। সেই হিসেবে এটি চীনের রাষ্ট্রপতির দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সফর।
আজকের আলোচনার মূল সুরটাই ছিল--আগামী দিনে এশিয়াকে উন্নত করতে হলে চীন ও ভারত দুই দেশকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। আগামী দশকে পাশ্চাত্য সভ্যতার দাপট শেষ হয়ে আসছে। এবার সময় পূর্বের দেশগুলির, যার মধ্যে ভারত ও চীন অন্যতম। বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে পৃথিবীর আর্থিক বিন্যাসের পরিবর্তন হবে। পাওয়ার সেন্টারগুলি আমেরিকা ব্রিটেন থেকে ভারত-চীনের দিকে আসতে শুরু হয়েছে। তাই দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক কমিয়ে আগামী সময়ে কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করা উচিত।
উল্লেখ্য, এর আগে চীনের রাষ্ট্রপতি জিনপিং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। পাকিস্তান সরকার অনেক চেষ্টা করেছিল ভারতে জিনপিং এর সফর বাতিল করার। কিন্তু শেষপর্যন্ত সফল হয়নি পাকিস্তান। চীনের রাষ্ট্রপতির ভারত সফর পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। চীনের রাষ্ট্রপতির এই সফরের ফলে পাকিস্তানের মনবল যে ভেঙে পড়তে পারে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
অন্যদিকে ফ্রান্সের রাফাল যুদ্ধ বিমান ভারতের হাতে আসার পর থেকেই পাকিস্তানের ভয় সর্বসমক্ষে চলে এসেছে। রাফাল বিমান নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা পাকিস্তান এবার পরম মিত্র চীনের থেকে বিমান ধার চেয়ে বসল। কিন্তু চীন ধার দেবেনা বলে জানিয়ে দিলো। এরপরেও পাকিস্তান চীনের কাছে আপগ্রেডেড র‌্যাডার আর এয়ারক্র্যাফটের দাবি করে বসেছে। আর এবারও চীন পাকিস্তানকে কিছুই দেবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে।
পাকিস্তানের সেনা প্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া আর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রাফালকে কাউন্টার করার জন্য চীনের থেকে উন্নত র‌্যাডার প্রণালী আর আধুনিক এয়ারক্র্যাফট এর দাবি করেছে। এর সাথে সাথে পাকিস্তানকে দেওয়া JF-17 থান্ডার ফাইটার জেটকে আপগ্রেড করার দাবি করেছে। কিন্তু চীন তাঁদের পরম মিত্র পাকিস্তানের এই দাবিও পূরণ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানের এই দাবি পূরণ না করার পিছনে চীনের কিছু কারণ আছে।
প্রথম কারণ হল--চীন ভাবছে যে, পাকিস্তানের বেহাল আর্থিক অবস্থার কারণে তারা ঋণ শোধ করতে অসমর্থ। আর গোটা বিশ্বে চলা আর্থিক মন্দার মধ্যে পাকিস্তানকে ধারে হাতিয়ার বিক্রি করা কোনদিনও লাভের ব্যাবসা হতে পারেনা। এছাড়াও কাশ্মীরে জঙ্গিদের কাছ থেকে চীনের হাতিয়ার পাওয়ার পর জেনারেল বাজওয়া আর পাক প্রধানমন্ত্রীকে চীন ভালো মন্দ শুনিয়ে দিয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ হল--গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, চীন প্রশ্ন করেছে যে, যে হাতিয়ার পাক সেনাদের দেওয়া হয়, সেটা জঙ্গিদের হাতে কি করে পৌঁছাচ্ছে? চীনের এখন একটাই আশঙ্কা হল, তাদের হাতিয়ার জঙ্গিদের কাছে পৌঁছালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের নাম খারাপ হবে। এছাড়াও এটা বলা হবে যে, চীন জঙ্গিদের মদত দিচ্ছে। কিন্তু চীনের সবথেকে বড় সমস্যা হল, তারা পাকিস্তানে মোটা বিনিয়োগ করে ফেলেছে।
তৃতীয় কারণ হল--চীন একাই পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছে। তাদের এই প্রোজেক্টে লাগাতার দেরি হচ্ছে। এছাড়াও ভারত চীনের সামগ্রীর জন্য একটি বড়সড় বাজার। আর এই কারণে চীন ভারতকে পাত্তা না দেওয়ার বোকামি করতে পারবে না। চীনের শিঞ্জিং প্রান্তে উইঘুর মুসলিমদের পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন গুলো সমর্থন করে যাচ্ছে। আর সেই কারণে চীন পাকিস্তানের উপর ক্ষুব্ধ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.