ডিটেনশন ক্যাম্পে মা বন্দি, দুঃশ্চিন্তা, মানসিক যন্ত্রনায় একমাত্র পুত্রের মৃত্যু,ঘরে রইলো অন্তঃসত্তা পত্নী, সরকারের মানবিক মুখ কোথায় গেল?
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি
অসমে ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু বাংলাভাষী মানুষকে মূলত টার্গেট করে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী রূপয়ানকালে সীমাহীন হেনস্থা করা হয়েছে। এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা লাখ লাখ বাংলাভাষীকে বাদ দেওয়া হয়েছে , ৫০,৬০ বছর আগের বৈধ নথিপত্র পেশ করা সত্ত্বেও নাম বাদ গেছে। এনআরসি তালিকায় নাম নেই, বিনা কারণে ডি ভোটার, ডিটেনশন ক্যাম্পে মানসিক অত্যাচার প্রভৃতির কারণে সরকারি ভাবে মাত্র ২৫ জন, বেসরকারি ভাবে ৫৮ জন মারা গেছেন। দুলাল চন্দ্র পালকে বিদেশি সাজিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে ঠেলে দিয়ে কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে মেরে ফেলা হল, ছেলেদের জোরালো আপত্তি নাকচ করে ১০ দিন পর মরদেহ শোনিতপুর নিয়ে গিয়ে সরকারের মুখ রক্ষা করলো ধুরন্ধর বাঙালি নেতারা। বিজেপি সরকারের কোনও মানবীয় মুখ নেই, তা বার বার প্রমাণিত হচ্ছে।
বঙাইগাঁও জেলার অভয়াপুরীর হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা হরেশ্বর দাসের বৈধ ভারতীয় নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়। নিজের মা মারা গেলেন, কিন্তু বড় লজ্জা, পরিতাপের কথা মায়ের পরলৌকিক কাজে যোগ দেবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হল পুত্রকে। মায়ের পরলৌকিক কর্মে অংশগ্রহণ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কোনও আইন আছে নাকি দেশে? কেন এমন হবে? মানবাধিকার সংগঠনগুলি কোথায় গেল?
গত মঙ্গলবার মানবিক মুখ থাকা মন্ত্রী ফণিভূষণ চৌধুরীর জেলা বঙাইগাঁওয়ের মানিকপুর নগড়ঝাড় গ্রামের ৫০ উৰ্দ্ধের মহিলা শান্তি সরকারকে ডি ভোটার সাজিয়ে ২০১৪ সালে তাঁকে সীমান্ত পুলিশ নথিপত্র পরীক্ষা না করেই ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। ৬ বছর থেকে বিনা বিচারে জেল খাটছেন শান্তি দেবী, তিনি অসুস্থ তাঁর চিকিৎসা করা হচ্ছে না। একমাত্র ছেলে কামিনী সরকার, জমিজমা বিক্রি করে, ধারদেনা করে মাকে মুক্ত করার সব চেষ্টা করেও বিফল হন।
মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, সোমবার হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হন, গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে, সামান্য সুস্থ হয়ে গ্রামে ফেরার পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন,তাঁকে বাঁচানো যায়নি। মাত্র ৩৬ বছর বয়স হয়েছিল। বছরখানেক আগে বিয়ে করেছিলেন কামিনী সরকার। তার ঘরে ৮ মাসের অন্তঃস্বত্তা পত্নী। বিনা দোষে বন্দি শান্তি সরকারের বাবা প্রাণেশ্বর দাসের আদি বাড়ি মঙ্গলদৈ জেলার খাইরাবাড়ি গ্রামে ১৯৫৮ সালে জমি ক্রয়ের নথি পত্র ছিল। তাঁর ৫০, ৫৫ বছরের বোন শান্তি সরকার কি বিদেশি হতে পারে ? এই রাজ্যে কি আইন আদালত আছে, মানবাধিকার সংগঠন আছে? কামিনী সরকারের অকাল মৃত্যুর জন্যে কে দায়ী?
কোন মন্তব্য নেই