আজ প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর জন্ম বার্ষিকী
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ঠিক তার পরের বছরেই দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু। মাঝে রয়ে গিয়েছিল তাসখন্দ চুক্তির মত একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি তাসখন্দ চুক্তি আর তারপর ১১ জানুয়ারি লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর অকাল প্রয়াণ। রহস্য বহুবার বহুভাবে ঘনীভূত হয়েছে দেশের এই অন্যতম রাষ্ট্রনায়ককে ঘিরে। আজ ২ রা অক্টোবর, গান্ধীজির জন্মজয়ন্তীর সঙ্গে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীরও জন্মজয়ন্তী পালিত হচ্ছে দেশজুড়ে। যে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান বারবার উস্কে দিচ্ছে রহস্য দেশের এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে।
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব অনুজ ধরের লেখা অনুযায়ী, ১০ জানুয়ারি ১৯৬৬ সালে ঠিক বিকেল ৪ টে নাগাদ তাসখন্দের মাটিতে 'তাসখন্দ চুক্তি' স্বাক্ষর করেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। এরপরই তিনি রাশিয়ায় যে ভিলাতে উঠেছিলেন সেখানে পৌঁছে যান। এরপর সন্ধ্যেবেলা হালকা খাবার খেয়েছিলেন। যা রান্না করেছিলেন 'কুক' জান মোহম্মদ। প্রসঙ্গত, সেই সময় তাসখন্দে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত টিএন কৌলের ব্যক্তিগত কুক ছিলেন জান।
সেই দিন রাত ১১:৩০ নাগাদ এক গ্লাস দুধ চেয়েছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় তাঁর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন রাশিয়ার প্রতিনিধিরা। অনুজ ধর জানাচ্ছেন,দুধ পান করার পরও সুস্থই ছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। কিন্তু রাত ১:২৫ থেকেই শুরু হয় আচমকা অসুস্থতা আর এরপরই মৃত্যু। এরপর থেকেই এই মত্যুকে বেশ কয়েকটি কারণে 'অস্বাভাবিক' তকমা দেন অনেকে।
শোনা যায়, মৃত্যুকালে 'রাম' শব্দটি আলতো স্বরে উচ্চারণ করেছিলেন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। রহস্যের গন্ধ এটাও বলে যে, এই মৃত্যুর নেপথ্যে,ভারত-পাক সম্পর্ক থেকে নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যও জড়িয়ে থাকতে পারে। কারণ নেতাজির সঙ্গেও রাশিয়া প্রসঙ্গ জড়িত। আর সেই রাশিয়ার তাসখন্দেই লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু হয়।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ পেয়েই সেখানে উপস্থিত এক রাশিয়ার প্রতিনিধির মুখে 'বিষ খাইয়ে মৃত্যু'র প্রসঙ্গ উঠে আসে। শাস্ত্রীর ছোটবেলার এক বন্ধুর দাবি, বিষ নয়, ছুরিকাঘাতে শাস্ত্রীর মৃত্যু হয়। এই বিষয়ে তাঁর দাবি, সেই সময় লালবাহাদুর শাস্ত্রীর বালিশে মিলেছিল রক্তের দাগ। যদিও এই তত্ত্বে আমল দেওয়া হয়নি কখনওই। তৃতীয়ত, শোনা যায়, শাস্ত্রীর দেহের ময়নাতদন্ত তৎক্ষণাৎ দাবি করা হলেও পরিবারের সেই দাবিতে সাড়া দেন নি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গুলজারিলাল নন্দা। সরকারি সূত্রে জানানো হয়, তাসখন্দে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর। এরপর ২০০৯ সালে আরটিআইয়ের আওতাতেও সরকারের কাছে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী নিয়ে কেন্দ্রের তরফে একই উত্তর আসে। জানানো হয়, 'প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হয়েছিল।'
কোন মন্তব্য নেই