Header Ads

পুলক আইচঃ এক নিবেদিত প্রাণ শিক্ষাবিদ, শিক্ষক দিবসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন

লিখেছেন বেঙ্গালুরু থেকে আশীষ কুমার দে

 লামডিং শহরের এক সময়ের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ক্রীড়া জগতের অন্যতম ব্যক্তিত্বের মৃত্যু কিছুটা লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে গেল। গত ২৯ জুলাই বেলা ১১টায়  বাস্তুহারা স্কুলের দাপুটে প্রধান শিক্ষক পুলক আইচ ৭৮ বছরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অকৃতদার পুলক আইচ রেখে যান অগনিত শোকস্তব্ধ আত্মীয় ও গুণমুগ্ধদের।  তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে তেজপুরে, সেখানেই তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন এবং চলে আসেন গুয়াহাটিতে কটন কলেজে। সেখান থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক হন ও বিএড করে যোগ দেন বাস্তূহারা মেমোরিয়াল হাইস্কুলে। এই স্কুল থেকে ১৯৯৯ সালে অবসর নিয়ে লামডিং শহরেই বসবাস করেন।  
 
  কিন্তু তিনি শুধু মাত্র প্রথাগত শিক্ষার মানোন্নয়ন করেননি তার উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে খেলাধুলার বিকাশ ঘটে। সীমিত পরিকাঠামোয় ফুটবল ও অন্যান্য খেলায় অংশগ্রহণ করেন ছাত্ররা। দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বে ছিলেন এক সময়ের বিখ্যাত স্টুডেন্টস ক্লাবের।  কয়েক দশক ধরে এই ক্লাব রাজ্য স্তরে বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নেন । একসময় স্থানীয় ক্রীড়া প্রেমীদের মিলন স্থান ছিল এই ক্লাব যা আজ স্মৃতি হয়ে গিয়েছে। আমার দেখা অনেক নামকরা ফুটবলার এখানে খেলতে খেলতে রেলওয়েতে খেলার কোটায় চাকরি পান। এই ক্লাব থেকে উঠে এসেছিলেন নাম করা ফুটবল কোচ তপন রাউথ সমেত একাধিক রেফারি চন্দ্র শেখর নাথ, তিমির বরণ দাসগুপ্ত, বিমল পাল, দিলীপ দত্ত, করুনা সূত্রধর, নারায়ণ মুখার্জি, লানুবা আও ইত্যাদি।  এর মধ্যে চন্দ্র শেখর নাথ  আইএফএ রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পান। এক সময় একঝাঁক তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রেরণা ছিলেন পুলক আইচ।

বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে ডাক পড়ত তাঁর যোগ্যতার ভিত্তিতে, সুবক্তা ও ইংরেজি ভাষায় দখল তাঁর। যেকোনও অনুষ্ঠানে তাঁর অংশগ্রহণ যোগ করত অন্য এক মাত্রা। 
নিজে একজন দক্ষ ব্রীজ খেলোয়াড় ছিলেন এবং সেই সময় রেলওয়ে ইন্সটিটিউটের নিয়মিত ব্রীজ খেলোয়াড়দের মধ্যে বিশেষ ভূমিকা ছিল।
আমার সাথে পরিচয় ১৯৮৮ সালে রেলওয়ে ইন্সটিটিউট-এর পরিচালনায় ফুটবল টুর্নামেন্টের মিটিং এ। এরপর জানতে পারি তাঁর এক ভাইপো আমার সহপাঠী ছিল St. Xavier's College এ। আমার কাছে আকর্ষণীয় ছিল ওনার জমিদার সুলভ বাজার করা, প্রতি রবিবার মাছ বাজারে যে কয়েক জন দাম না করে মাছ কিনতেন  তার মধ্যে ছিলেন পুলকদা। তাঁর বক্তব্য ছিল ভালো মাছ পেলে তিনি তার উচিত দাম দিতে রাজি। তিনি নিজে খেতে ও অন্যকে খাওয়াতে ভালোবাসতেন।  আমি দেখেছি তিনি বিনা পারিশ্রমিকে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন। ইদানিং শুনতাম তিনি মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পরতেন ও রক্তাল্পতায় ভুগতেন।  তাঁর মৃত্যুর ফলে লামডিং হারালো একজন প্রকৃত  শিক্ষক ও ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষককে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.