Header Ads

ঐতিহাসিক ভুলের ঐতিহাসিক সংশোধন যে কোন মূল্যে জরুরি ছিল !! (৪)


বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

গান্ধীজীর অপার স্নেহ এবং ভারতবাসীর শ্রদ্ধা নেহরুকে ভারতের সর্বময় কর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। মত ও ভাবসংঘাতে এবং বৃটিশ ফ্যাশনেবল্ বন্ধুদের মোহে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে অবোধ্য হয়েছিলেন। তাই তৎকালীন এক সাংবাদিক তাঁর সম্পর্কে লিখতে পেরেছিলেন-- Pandit Nehru has been called, as occasions allowed, an idealist, a socialist, a Moscow Sympathiser, a high hatting capitalist or an emotional internationalist; but rarely a personnel experft or a publicist.-- এই নেহরু’র বিরুদ্ধে তখন আওয়াজ তোলার মতো তেমন কেউ ছিলেন না। যিনি দাঁড়াতে পারতেন তাঁকে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বলে প্রচার করে এ দেশে ঢুকতে দেওয়া হল না--আর একজনকে কাশ্মীরের জেলের মধ্যে হত্যা করা হল। ফলে ভারতের ব্যাপারে নেহরু যা চাইতেন তাই করতে পারতেন--অন্যদিকে তাঁর আত্মার আত্মীয় শেখ আবদুল্লা তাঁর অকৃপণ প্রশ্রয়ে কাশ্মীরকে নিজের জমিদারি হিসেবে সাজিয়ে গুছিয়ে বসে গেলেন !



কাশ্মীরের আবদুল্লা, মুফতি মহম্মদ পরিবার এবং কিছু কিঞ্চিৎ আজাদ পরিবার ছাড়া কাশ্মীরের শাসন ক্ষমতায় তেমন কেউ বসেন নি। লাদাখ-জম্মু ও কাশ্মীরের মোট আয়তনের মাত্র ১৫% (জম্মু ২৫%, লাদাখ ৪৯%, বাকিটা পাকিস্তান ও চীনের কব্জায়) ভূমির উপত্যকার এই তিন পরিবার জম্মু-কাশ্মীরকে নিজেদের থাবার মধ্যে নিয়ে প্রায় সামন্ততান্ত্রিক শাসন কায়েম রেখে এসেছে এতদিন। শেখ আবদুল্লা কাশ্মীরে ৩৭০ ও ৩৫এ’র মতো মানবতাবিরোধী ধারা বলবৎ করিয়ে এই তিন পরিবারকে রাজপাট সামলানোর সুযোগ করে দিয়ে গিয়েছিলেন। এই দুই ধারার সৌজন্যে এই পরিবারগুলো শাঁসেজলে দিন দিন ফুলে ফেঁপে উঠেছে। স্রোতের মতো পাকিস্তান থেকে অনুপ্রবেশ ঘটেছে কাশ্মীরে। তাদের ঠাঁই দিতে অমুসলিমদের অকথ্য বর্বর অত্যাচার চালিয়ে কাশ্মীর ছাড়া করা হয়েছে। হরি সিং-এর সঙ্গে ভারতভুক্তি চুক্তি সম্পন্ন হতে না হতেই ‘আজাদ কাশ্মীর’ বাহিনী--যা কিনা পাক হানাদার বাহিনী--কাশ্মীরে ঢুকে নির্বিচারে অকথ্য অত্যাচার হত্যা লুণ্ঠন চালিয়ে বিপুল পরিমাণে অর্থ-সম্পদ সরাসরি ইসলামাবাদের কোষাগারে পৌঁছে দিয়েছিল। তবু প্রচুর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নেহরু হানাদারদের তাড়িয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরকে মুক্ত না করে নিজেরই তৈরি সমস্যা সমাধানের আবেদন নিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের দ্বারস্থ হলেন--গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে এ ধরণের লজ্জাজনক নজির আর দ্বিতীয় নেই।
নেহরু পরবর্তী সময়েও এই রাষ্ট্রসঙ্ঘের দরবারী রাজনীতি থেকে কংগ্রেস বা কংগ্রেস জোট সরকার বেরিয়ে আসতে পারে নি। অথচ সিমলা চুক্তিতে খুব স্পষ্ট করেই বলা আছে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে কোন তৃতীয় পক্ষ নাক গলাতে পারবে না। পাক শাসকরাও সিমলা চুক্তির বিষয় কিছু জানে না তা নয়--জেনে বুঝেই তারা প্রায় প্রতিদিন রাষ্ট্রসঙ্ঘ এবং অন্যান্য রাষ্ট্র নেতাদের দরজায় কড়া নেড়ে চলেছে।
১৯৯০-এর আবদুল্লা শাসনে কালে জানুয়ারি মাস থেকে জম্মু-কাশ্মীরে ভয়াবহ আকারে হিন্দু নিধন যজ্ঞ শুরু হয়। তৎকালীন দ্য স্টেটসম্যন সহ বেশ কিছু পত্র-পত্রিকায় সেই নারকীয় ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। তখন কাশ্মীরিদের (মুসলিম-সন্ত্রাসী) দ্বারা নির্য্যাতিত হিন্দুদের পাশে ভারতীয় সংসদ-সংবিধান-সুপ্রিম কোর্ট কেউ ছিল না !
১৯৯০-এর অনেক আগে বাংলাদেশ যুদ্ধের পরপরই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাবু জগজীবন রামের কাছ থেকে কাশ্মীরের পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি রিপোর্ট চেয়েছিলেন--সেই রিপোর্টে জগজীবন রাম কাশ্মীরের হিন্দুদের ভয়াবহ অবস্থা সম্পর্কে যা জানিয়েছিলেন--সেই রিপোর্ট সীতারাম ইয়েচুরি বিমান বসু অধীর চৌধুরীরা পড়েন নি। পড়লে তাদের মুখ দিয়ে যেসব মন্তব্য ছুটে আসছে তা হয়তো আসত না। ১৯৯০-এর নারকীয় ঘটনাবলীর বিশদ বিবরণে যাব না--যাদের জানা নেই তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন--তখন কাশ্মীরের মসজিদ মাদ্রাসা থেকে মাইকে একটা লম্বা রেকর্ড বাজানো হত--হিন্দুদের হাড় হিম করা নানান ধরণের হুমকির মধ্যে একটি কথা শোনা যেত--‘পণ্ডিতদের কাছ থেকে আমরা কি চাই? পণ্ডিতরা চলে যাক রেখে যাক তাদের মেয়েদের !’
৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্তে যাদের মুখের মধ্যে প্রবল চুলকানি শুরু হয়ে গেছে এবং তার কারণে যারা ওরাল ডায়ারিয়াতে আক্রান্ত হচ্ছেন--জানতে বড় ইচ্ছে করে তারা সেদিন কোথায় ছিলেন? কেন তারা আবদুল্লা-মুফতি-গিলানিদের জন্যে হাউহাউ করে কাঁদছেন ! তাঁরা কি হিসেব করে দেখেছেন--এই দুই ধারা গোটা কয়েক স্বৈরাচারী ধর্মীয় উন্মাদ পরিবারকে কি দিয়েছে--ভারত-ই বা কি পেয়েছে? যেসব পরিবারের জন্যে এ দেশের গণতন্ত্র-সংবিধান-আইন আদলত প্রেমীরা শোকাকূল হচ্ছেন তারা কখনো কি ভেবে দেখেছেন--মাত্র ১৫%-এর গোটা কয়েক পরিবার ছাড়া ৮৫%-এর একজনও কেন কখনো ক্ষমতায় বসতে পারেন নি--মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন নি? এই তীব্র ক্ষমতালিপ্সু পরিবারের ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়াশোনা করে--কিভাবে জীবন কাটায় আর কাশ্মীরের সাধারণ দরিদ্র ছেলেমেয়েরা কেন পাথরবাজ হয় জঙ্গি হয় এবং হিন্দুদের নিরাপত্তা বলে কিছু থাকে না--১৫ আগস্ট তেরঙ্গা ওঠে না--সংবিধান এখানে পদদলিত হয়--সুপ্রিমকোর্ট পাত্তা পায় না--এ কেমন অঙ্গরাজ্য আমাদের? হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে নিজেদেরই অঙ্গরাজ্যে আমরা বিকলাঙ্গ দর্শক হয়ে কত কাল কাটাবো?
কাশ্মীরে কেন গত ৭০ বছর ধরে উন্নয়ন হয় নি। কারা কেন্দ্রের ক্ষমতায় ৬০ বছর ছিল--কারা একের পর এক মুসলিম স্বার্থে কাশ্মীরে বিল পাস করিয়ে হিন্দুদের জীবনযাপন নারকীয় করে তুলেছিল? এতসব করেও কেন কাশ্মীরকে অলৌকিক ভূ-স্বর্গ বানানো গেল না? এখন এই দুই দেশবিরোধী জনবিরোধী সাম্প্রদায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ধারা তুলে দিলেই কাশ্মীর জাহান্নমে চলে যাবে?
যারা তা মনে করছেন তাদের বায়াসনেস নিয়ে আমার কোন কথা বলার প্রবৃত্তি নেই। শুধু এইটুকু বলব--অপেক্ষা করুন--দেশের মূল স্রোতে এসে দেশের সংবিধান-সংসদ-আইনের কাছে দায়বদ্ধ থাকার সুযোগে কাশ্মীর নতুন করে জেগে উঠবে। এটা বুঝতে পেরেই পাকিস্তান এখন কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে--দিশেহারা উন্মাদ হয়ে গিয়ে একের পর এক যে সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাতে তাদের দেশটাই গোল্লায় চলে যেতে পারে। সিংহভাগ মানুষ না খেতে পেয়ে--কাজ হারিয়ে মরতে চলেছে। একটু সময় লাগলেও কাশ্মীরের মানুষ বুঝতে পারবেন তারা এবার সত্যি সত্যি রাহুমুক্ত হতে চলেছেন। জানি, আমার কথা এখন বিশ্বাস হবে না--কিন্তু এমনটাই হতে চলেছে কাশ্মীরে ! জাস্ট ওয়েট অ্যাণ্ড ওয়াচ্ !!
( বিষয়টা এতই বড় যে, এটা নিয়ে একটা বই লেখা যায়। আমি চার পর্বে যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি বিয়টাকে তুলে ধরার জন্য। প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হতেই পারে--কিন্তু কিছু না জেনে না পড়ে যারা তর্কের জন্যেই অথবা নিছক রাজনীতির কারণে তর্কে নামেন আমি তাদের সঙ্গে তর্কে প্রবৃত্ত হতে রাজি নই। যুুিক্ত ও তথ্য আামর কাছে সবসময়ে গ্রহণযোগ্য)

বিশিষ্ট সাংবাদিক বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ের অনুমতি সাপেক্ষে কাশ্মীর নিয়ে লেখাগুলি ‘নয়া ঠাহর’-এর পাঠকদের জন্য দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব মতামত।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.