অসমের তাপ মাত্রা ৩৯ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল, লোডশেডিং ও সমানে চলছে, গ্রাম অসম এ নাভিশ্বাস উঠছে। কোথায় সরকার?
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটিঃ
জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, শুধু ভারত নয়, পুড়ছে আমেরিক ইউরোপ ও। নীতি আয়োগের প্রতিবেদন ভয়ঙ্কর, আগামী ২০২১, ২২ সালের মধ্যে দেশের ৪১ টি শহরের ভূগর্ভস্থ জল নিঃশেষ হয়ে যাবে। পরিবেশ প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে মোট স্থলভুমির ৩৩ ভাগ বনভূমি থাকার দরকার, অসম সহ উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যে তা নেই। স্বাভাবিক ভাবে তাপ মাত্রা বেড়েই চলেছে। আজ বুধবার গুয়াহাটি মহানগরের তাপমাত্রা গত তিন বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে, আজ ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজ্যের প্রধান শহর ডিব্রুগড়, শিলচর, যোরহাট প্রভৃতি শহরের তাপমাত্রা উৰ্দ্ধমুখী। তাপমাত্রার সঙ্গে বিদ্যুৎ, জল, জ্বালানির সম্পর্ক আছে।
ছবি, সৌঃ আন্তৰ্জাল
তাপমাত্রা থেকে বাঁচতে ঘরে বিদ্যুতের দরকার, সেই বিদ্যুৎ আজও অধরা, গ্রাম অসম শাসক দল বিজেপির প্রতিশ্ৰুতি অনুযায়ী ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ পায় না। সরকারের কাগজে কলমে অসমের সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, তাই অসমের আর কেরোসিন তেলের প্রয়োজন নেই, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের কেরোসিন তেলের কোটা কমিয়ে দিয়েছে। বিজেপি সরকার তাদের ৩ বছর শাসনকাল অতিক্রম করেছে। কিন্তু ৪.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন প্রকল্প স্থাপন করতে পারল না।
রাজ্যে পিক আওয়ারে বিদ্যুৎয়ের প্ৰয়োজন ১৭০০ মেগাওয়াট রাজ্যের নিজস্ব উৎপাদন মাত্র ৩০০ মেগাওয়াটও নয়। বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্র মতে রাজ্যে ট্রান্সমিশন, ডিস্ট্রিবিউশন এবং হ্যাকিং করে বা অন্য কোনোভাবে বিদ্যুৎ চুরির পরিমাণ প্রায় ২৬ শতাংশ, এছাড়াও বিদ্যুৎ বিভাগ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলি থেকে কোটি কোটি টাকা বকেয়া আছে। নিজস্ব উৎপাদন নেই, জাতীয় গ্রিড এবং অন্য রাজ্য থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছে। অসম বিধানসভা অধিবেশনকালে বিদ্যুতের দাবিতে অনশন ধর্মঘট করার রেকর্ড গড়লেন কংগ্ৰস বিধায়ক কমলক্ষ্য দে পুরকায়স্থ, প্রথম থেকে তিনি করিমগঞ্জ বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্যে চেষ্টা করছেন, ১৩২ কে ভি লাইনের জন্যে একাই লড়ে যাচ্ছেন, বিস্ময়কর কথা বিধানসভার বিজেপি বিধায়করা চুপ, কোনও কথা বলতে শুনিনি। প্রাক্তন বিদ্যুৎ মন্ত্রী পল্লবলোচন দাস বিধানসভাতে এক বার জানিয়েছিলেন রাজ্যে নিজস্ব উৎপাদন ৩৬৪ মেগাওয়াট, এখন আরও কমে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল ২০১৬ সেপ্টেম্বরে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় কয়লা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী পীযুষ গোয়েলকে এক পত্র দিয়ে মার্গেরিটার কয়লা ব্যবহার করে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে কোল লিংকেজ দেবার অনুরোধ করেছিলেন। তিনসুকিয়া জেলার মার্গেরিটার কয়লা নিয়ে কি ভাবে দুর্নীতি হচ্ছে, তা কংগ্রেস সাংসদ প্রদ্যুৎ বরদলৈ বিস্তারিত জানিয়েছেন। দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টোল্যারেন্স এর কথা বলা বিজেপি সরকার বরাক, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কয়লা দুর্নীতি বন্ধ করতে পারছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদন এত প্রধান উপকরণ এর উপর সরকার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। অসমে নিজস্ব উৎপাদিত বিদ্যুৎ নেই, জল নেই, কেরোসিন নেই, আছে শুধু ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং, আর অন্ধকার কয়লা চুরি আর বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করতে পারলে অসমে বিদ্যুৎয়ের বন্যা বইতো।
কোন মন্তব্য নেই