Header Ads

যেখানে মানুষের মৃত্যু হলে মানুষ দেবতা হয়ে যায় !!


বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

কথাটা মনে হল বাংলাদেশের প্রাক্তন সামরিক রাষ্ট্রপতি মহম্মদ হুসেইন এরশাদের মৃত্যু প্রসঙ্গে। একটা সময় ছিল যখন পাকিস্তানের ঐতিহ্য অনুসরণে বাংলাদেশেও সামরিক শাসকরা দেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে বসতেন। মুজিবর রহমানের পর দু’জন জাঁদরেল সামরিক প্রধানকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, এই দু’জনের একজনও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানুষের ভোটে জিতে দেশের রাষ্ট্রপতি হন নি। 

ছবি, সৌঃ ফেসবুক
মুজিব নৃশংসভাবে খুন হয়ে যাওয়ার পর দেশের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন সে দেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান জিয়াউর রহমান। তাঁরও নির্মম রক্তাক্ত পরিণতি’র পিচ্ছিল পথেই রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন আর এক সমরনায়ক মহম্মদ হুসেইন এরশাদ। 
এরশাদ জন্মসূত্রে বাংলাদেশী নন--তাঁর জন্ম স্কুলশিক্ষা সবই পশ্চিমবঙ্গের দিনহাটা শহরে। জন্মসূত্রে তিনি পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালি। 
১৯৮৩ সালে (যতদূর মনে পড়ছে) তিনি নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন। 
সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে বিশ্বে তাঁর র‌্যাঙ্ক ঠিক কত নম্বরে আমার জানা নেই। জানার আগ্রহও ছিল না--কারণ, পাকিস্তানের এবং পাকিস্তানের শিক্ষায় শিক্ষিত ক্ষমতা দখলে পারঙ্গম কোন সেনানায়কের ব্যাপারেই আমার কোনরকম দুর্বলতা ছিল না। এরশাদের সম্পর্কেও ছিল না। এরশাদের এমন কোন বিশেষ প্রতিভা (সেনাপ্রধান বা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে) আমার নজরে পড়ে নি যা আমাকে সামান্য হলেও আন্দোলিত করেছে !
পয়লা বৈশাখকে দুই বাংলার বাঙালিদের মধ্যে একটা নেতিবাচক ইমোশন্যাল ইস্যু করে তোলার বিষয়টা আমার ভাল লাগে নি--যেটা একেবারেই অকারণে তিনি করেছিলেন--এর ফলে ২৫ শে বৈশাখও আগে-পিছে হয়ে চলেছে--যা আমার মতো অনেককেই আহত করেছে। দেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানিয়ে (সাংবিধানিক) তিনি সে দেশের সংখ্যালঘু জনতাকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেছিলেন--যার ফলে বিশেষ করে হিন্দুরা সে দেশে নির্মম অত্যাচারের শিকার হয়ে আসছে। এইসব অসাধারণ কৃতীত্বের জন্য অনেকেই তাঁকে তাঁর মৃত্যুর পর দেবতার আসনে বসাতেই পারেন--আমি পরছি না। তবু শুধুমাত্র একটিমাত্র কারণে তাঁকে আমার মানবিক বলে মনে হয়। 
তিনি সুযোগ পেলেই কবিতা লিখেছেন--প্রচুর লিখেছেন--কবিতার বইও প্রকাশ করেছেন--না, তাঁর অসংখ্য অপাঠ্য বালকোচিত কবিতার জন্যে আমি মুগ্ধ হয়ে তাঁকে মানবিক বলছি না--মানবিক বলছি এই কারণে যে, তিনি সময় পেলেই কবিতার কাছে যেতে চাইতেন বলে। কবিতা লেখার চেষ্টা করতেন বলে। অপাঠ্যই হোক বা বালকোচিত--ভেতরে তাঁর কবিতার জন্য দারুণ অস্থিরতা ছিল--একজন সমর-নায়কের আবেগহীন যান্ত্রিকতা--যা অনেকের কাছেই নির্মমতারই নামান্তর--তিনি কবিতা লিখছেন--এই ব্যাপারটাই তাঁর একটা পৃথক মানবিক চেহারা তৈরি করেছিল--স্রেফ এইটুকুই আমার পছন্দের ছিল--অন্য আর কিছুই নয়--বিশেষ করে এক রাষ্ট্রনায়কের যে সর্বজনগ্রাহ্য চেহারা আমি দেখতে পছন্দ করি--এরশাদের মধ্যে তা ছিল না। আজ-ই তিনি পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন--বাংলাদেশের ইতিহাসে তিন যথেষ্ঠ পরিমাণে নিজের বিতর্কিত ভাবমূর্তি তৈরি করে গেছেন--ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি বহুদিন স্মরণীয় থাকবেন। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি আমিও !

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.