আজও গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি সেনাবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার সানাউল্লাহ
নয়া ঠাহর প্রতিবেদন, গুয়াহাটিঃ প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক সেনাবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার সানাউল্লাহকে আজও গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসেও তাঁকে ছাড়া হল না। বুধবার গুয়াহাটি হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী জানান, হাইকোর্টের বিচারপতিকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল, কিন্তু তিনি রাজি হলেন না। আগামী শুক্রবার বিষয়টি হাইকোর্টে উঠবে। আইনজীবী এই বিষয়টি নিয়ে রিট আবেদনের পক্ষে ওকালতি করবেন। অসমে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ঘোষিত বিদেশির মধ্যে বেশির ভাগই ভারতীয় নাগরিক, তাদের খোঁজার নামে পুলিশ যাকে তাকে হয়রানি করছে এবং প্রকৃত নাগরিকদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাচ্ছে বলে আজ ভারতীয় নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ অভিযোগ করেছে। মঞ্চের সভাপতি জামসের আলীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল নিম্ন অসমের চিরাং জেলার বিজনী সহ কয়েকটি জায়গা ঘুরে এসে জানান, শুধু বিজনীতে জানা গেল রবীন্দ্র মল্লিক, সাধনা সরকার, গোপাল মন্ডল, বংশীধার রাজবংশী , মধুবালা মণ্ডল প্রভৃতি বহু নির্দোষ মানুষ ১৯৭১ সালের বহু আগে থেকে অসমে বসবাস করা মানুষদের ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে। মধ্য অসমের হোজাই, লামডিং, ডবকা অঞ্চল থেকে বহু মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে বলে বিভিন্ন সংগঠন অভিযোগ করেছে। এদিন লামডিংয়ের সমাজকর্মী তাপস দাস হৃদয়বিদারক এক খবর দেন, লামডিংয়ের আদি বাসিন্দা গৃহবধূ সন্ধ্যা পালের মা বাবা নেই , বিয়ে হয়েছে ডবকাতে দুই শিশু সন্তান ছাড়া তাঁকে তেজপুর ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে । দু বছর থেকে বন্দি, শিশুদুটি বার বার মায়ের কাছে যেতে চায়। অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার স্বামী একজন খুবই গরিব, দোকানে কাজ করে। নথিপত্র দেখানোর পরও হোজাইয়ের শঙ্করদেব নগরে এক আইনজীবী বহু টাকা দাবি করে সেই টাকা দেবার সামর্থ্য তাদের ছিলনা। তাই আজ বিনাদোষে জেল খাটতে হচ্ছে। শিশু দুটি শুধুই কান্নাকাটি করছে। ভারতীয় নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ-র সভাপতি জামসের আলী, সহসভাপতি প্রণয় তরফদার, সাধারণ সম্পাদক অজয় রায়, বার্গভ সরকার বিপুল সরকার প্রমুখ বিজনী থেকে ফিরে জানান, গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি রবীন্দ্র মন্ডলের বাবার ১৯৬৬ এবং ১৯৭০ সালের ভোটার তালিকাতে নাম আছে, গোয়ালপাড়া আইএমডিটি আদালত তাকে নথি পত্র পরীক্ষা না করে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠায়। তার বাড়ি চিরাং জেলার অক্সিবাড়ি গ্রামে, আজও সে জেলে। সাধনা সরকার বঙ্গাইগাঁও দরিদ্র পরিবারের এক বৃদ্ধা, ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকাতে তার বাবার নাম আছে। গত দুই বছর থেকে কোকরাঝাড় ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক করে রাখা হয়েছে। দক্ষিণ শালমারার গোপাল মণ্ডলের বাড়ী দক্ষিণ শালমারার মাঝের আলগা চরে। তার বাবা রামকিঙ্কর মণ্ডল তাদের শোনাইঝড়া গ্রামের ঘর থেকে ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ৭০ টি চিঠি পওয়া গেছে। স্বাধীনতার বহু আগে থেকে গোপাল মণ্ডলরা অসমের স্থায়ী বাসিন্দা, গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। বিনা অপরাধে সে আজ জেলে। বংশীধর রাজবংশী বিনাদোষে জেল খাটছে, তার অপরাধ সে এফ আর আর ও অফিসে নাম নথিভুক্ত করেনি দেড় বছর থেকে তেজপুর ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি। সীমান্ত পুলিশ বিজনীতে মধুবালা মণ্ডল নয় মধুবালা নমশুদ্রকে বিদেশি বলে খুঁজতে এসেছিল, কানে শুনতে পাননা মধুবালা মণ্ডল তাঁর একমাত্র মেয়ে ও বোবা। কথা বলতে ও শুনতে পান না। পুলিশ এক প্রশ্ন করে মধুবালা অন্যকিছু জবাব দেন । পুলিশ যাদের খুঁজতে আসে,তারা কেউ বেঁচে নেই। শেষ পর্যন্ত চাকরি বাঁচানোর জন্যে এই হয়তো পুলিশ নিরীহ ভারতীয় নাগরিক বৃদ্ধা মহিলাকে তুলে নিয়ে যায়। বিনা অপরাধে রবীন্দ্র, সাধনা, সন্ধ্যা, গোপাল, বংশীধর, মধুবালারদের ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে সরকার নির্বিকার, নীরব।
কোন মন্তব্য নেই