Header Ads

অসমকে বাঁচান, অসমবাসীকে বাঁচান


লিখেছেন অরূপ বৈশ্য 

আসামে ভাষার সাম্প্রদায়িকীকরণের কুনাট্যের অন্তিম দৃশ্যের মহড়া শুরু হয়েছে। অসমীয়া উগ্রজাতীয়তাবাদীরা হুমকি দিচ্ছেন,আগে অসমিয়া হতে হবে তাহলেই নাগরিক সমস্যার যৌথ সমাধান। নাগরিকত্ব নিয়ে মানবিক সঙ্কটের মুহূর্তে অসমীয়া উগ্রজাতীয়তাবাদীদের প্রচ্ছন্ন হুমকি ও জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্রীদের দায়সারা মনোভাব ন-অসমিয়াদের ক্ষোভিত করে তুলছে। অত্যাচারিতদের ক্ষোভ প্রকাশ যদি অতি-প্রতিক্রিয়াও হয়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হচ্ছে একেও ন্যায়সঙ্গত বলে প্রাথমিকভাবে মেনে নেওয়া, কারণ সেটা অত্যাচারিতদের মনোবেদনার বহিঃপ্রকাশ। এক মনোবিকলনের জটিলতায় বাঙালি হিন্দুরা উজান অসম ও নিম্ন অসমে আলাদা আলাদা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং বহুমুখে কথা বলছে।
রাষ্ট্র ও প্রশাসনের মাধ্যমে দীর্ঘকালীন নাগরিক হয়রানি যে একটি জনগোষ্ঠীর সাইকোলজিক্যাল মৃত্যু পরোয়ানা ঘোষণা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট এই সত্যটি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন নাগরিক সমাজ। এই মৃত্যু শুধুমাত্র একটি জনগোষ্ঠীর মৃত্যু নয়,অসমের আঞ্চলিক সত্তারও মৃত্যু পরোয়ানা ঘোষণা।
শুধুমাত্র সংখ্যা ও ভূখণ্ডের আধিপত্যের ভাষায় জাতীয় স্বার্থ যারা বোঝে সেই জাতি ভেতর থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে,ভেঙে পড়ে তাদের আর্থিক মেরুদণ্ড,অসমে তাই ঘটে চলেছে। 
এই অন্তিম পর্যায়ে নাগরিকদের শুনানো হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের আশ্বাসবাণী। এই আত্মঘাতী পথ আসামকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। যদি চূড়ান্ত এনআরসি তালিকায় বাদ পড়াদের মধ্যে ১৯৭১-এর পূর্বের লাখ লাখ মানুষের নাম থাকে তাহলেও আসু ও জাতীয়তাবাদী শিবির একে তাদের দাবির যথার্থতার প্রমাণ হিসাবে প্রচার করবে, অন্যদিকে অসমের ভারতীয় নাগরিকরা আরেক দফা ট্রাইব্যুনাল প্রক্রিয়ার ভয়ানক হয়রানির মুখে পড়বেন।
এই দীর্ঘমেয়াদি নাগরিক হয়রানি অসম তথা অসমবাসীর যে কী অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করছে তা বাম-জাতীয়তাবাদীরাও বোঝার চেষ্টা করছেন না। এবারে উগ্রজাতীয়তাবাদীরা শুধু নাটবল্টূ ও রাষ্ট্রের ফুট-সোলজার, সরাসরি নাগরিক-বিরোধী ভূমিকায় রাষ্ট্র নিজে, অথচ গণতান্ত্রিক প্রতিরোধের বদলে এই রাষ্ট্রীয় নীতির সামাজিক বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত বাম-জাতীয়তাবাদীরা। ক্যাব আতঙ্ক ছড়াতে গিয়ে তাঁরা বাংলাদেশে মুসলমান অত্যাচারের অতিরঞ্জিত সঙ্ঘীয় বয়ানের ট্র্যাপে পড়েন। জাতীয় সংকীর্ণতা তাদের মননকে এতোই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে নিজ প্রদেশের গরিব-মেহনতি নাগরিকদের হয়রানি, নাগরিকদের আত্মহত্যা তাদের হৃদয়কে উদ্বেলিত করা তো দূর, অসমবাসীর হয়রানি হিসেবেও ভাবতে পারছেন না। এই জাতীয়তাবাদী সংকীর্ণতাই ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর। লড়াইটা যেখানে হওয়া উচিত ছিল ভারতীয় শাসক শ্রেণির সর্বগ্রাসী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অসমবাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ, সেখানে অসমবাসী নিজেরাই যুযুধান শিবিরে বিভক্ত।
এখনও সময় আছে, দাবি তুলুন সভ্যতার মানদণ্ড মেনে ভোটারদের প্রাথমিকভাবে নাগরিক বিবেচনা করুক সরকার। অন্তত যথেচ্ছভাবে ‘ডি-ভোটার’ ‘বিদেশি ঘোষণা’ করার ও ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর প্রক্রিয়াকে বন্ধ করুক সরকার। গণতান্ত্রিক সমাধানের আওয়াজ তুলুন, অন্যথায় জটিল সামাজিক-রাজনৈতিক সন্ধিক্ষনে অন্ধকারের পথে যাত্রা করবে অসমের সমাজ-রাজনীতি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.