Header Ads

রাষ্ট্রসংঘের দলিল-পত্রে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করার কথা জোর দিয়ে বলা সত্যেও আজও কি করতে পারলাম, আমরা....


নন্দনা দেব চৌধুরী, বেঙ্গালুরুঃ আধুনিকতার প্রারম্ভে মনুষ্যকূলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে কেন্দ্রবিন্দু ছিল অরণ্য। প্রচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ যেমন- বেদ উপনিষদ এবং পুরাণ শিক্ষা দেয় অরণ্য রক্ষার মন্ত্রে। সেই সঙ্গে অরণ্য ধ্বংসকে সৃষ্টির কাজে পাপ বলে আখ্যা দেয়। ভগবান বুদ্ধদেব বলেছেন- যে পরের উপকারের জন্য বৃক্ষরোপণ করে, সে ভগবানের আশীষধন্য হয়। কিন্তু বর্তমান যন্ত্র সভ্যতার যুগে প্রচীন ভারতের সহজ সুন্দর প্রাকৃতিক আবেষ্টনীকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে কতিপয় আরণ্য ছেদনকারী ও বে-আইনি কাঠ পাচারকারী নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে। তারা বোঝেনা, অরণ্য ধ্বংস করা মানে নিজেকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া। অরণ্য আমাদের বাঁচা-বাড়ার রসদ জোগায়। পরিকল্পনা সমূহে অসমের বনভূমির মান এখনও বিশ্বের অন্যতম। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তীকালে এই বনভূমিতে আরম্ভ হল নিষ্ঠুর কুঠারাঘাত। অর্থাৎ বনভূমির ওপর মানুষের অত্যাচার চড়ম সীমায় পৌঁছেছে। অবৈধ বনসম্পদ দখলদারিতে বহু অরণ্যভূমি কৃষিভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বনভূমিতে এখনো চলছে বনদস্যুদের কুড়ালের অবিরাম আঘাত, জনস্ফীতি, ঔদ্যোগীকরণের দরুন বনভূমির বিস্তর ক্ষতি  হয়েছে। 
বর্তমান পৃথিবীতে 'পরিবেশ' এক প্রাসঙ্গিক বিষয়। নির্দিধায় বলা যায়, আমরা সকল জীব প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বঞ্চিত। 'দূষণ' নামক যমদূত কালো ছায়ার মত আমাদের চারদিক থেকে ঘিড়ে রেখেছে। কেন আমরা এই ভারসাম্য থেকে বঞ্চিত? তার উত্তর অনেক কিছুই হতে পারে। তবে একটা সত্য কথা এই যে- ‘‘প্রকৃতিকে আঘাত করলে প্রকৃতি তার জবাব দেবেই।’’ প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ব পালনে আমরা ব্যর্থ।
 গাছপালা, বৃক্ষাদি ছেদন করে অরণ্যকে শেষ করে দিচ্ছি। মূল্যবান কাঠ, ঔষধী-গাছ, পশুপক্ষী, এমন কি কীট পতঙ্গ পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। যাদের ওপর সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব এরা মানুষ নামধারী প্রাণহীন এক পদার্থ। কলকারখানার ধোঁয়া, বর্জ্য-পদার্থ, মাত্রাধিক যানবাহনের ধোঁয়া, ধুলোবালি জনজীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। কোথাও অনাবৃষ্টি আবার কোথাও অতিবৃষ্টির ফলে আমাদের জীবন বিপন্ন। নূতন নূতন নাম নিয়ে এক একটি রোগ প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে আমাদের জীবন। এরজন্য অনেকাংশে আমরা জনগণ দায়ী। নিজেরা আত্মহননের পথে এগিয়ে চলেছি, দুর্বার গতিতে। আমরা ভুলে গেছি দেশ আমার 'মা', ভুলে যাচ্ছি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। দেশের সম্পদ আমার বলে ভাবতে পারিনা। আত্মকেন্দ্রিকতার ভাইরাসে আমরা আক্রান্ত।
 সু-নাগরিক হিসাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকার জন্য আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। এরজন্য বৃক্ষরোপণের ও বৃক্ষ পরিচর্যা সহ বৃদ্ধ বৃক্ষকে সুস্থভাবে সংরক্ষণ করে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস চালানো আরও প্রয়োজন। বনাঞ্চল সংরক্ষণের ব্যপারে জনগণের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা জরুরী। ব্যপক ভাবে বনাঞ্চল ধ্বংস করে এক অসমতার সৃষ্টি করার পাশাপাশি মানব সংস্কৃতি এবং বিকাশের সূত্রধারা নষ্ট হচ্ছে। ফলে পরিবেশের ওপর বৃহৎ পরিমাণে কার্বন-ডাই অক্সাইডের প্রভাব পড়েছে। মাটির উর্বরতা শক্তি ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে, বন্যা, ভূমিধ্বস ও খরার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই, পরিবেশ নিয়ে দায়িত্ব সহকারে না ভাবলে পরবর্তী প্রজন্ম আামাদের ক্ষমা করবে না। শষ্য শ্যামলা এই পৃথিবীর যারা হত্যাকারী, যারা অন্ধকারের নায়ক তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ, সফল করতে এবং সাংস্কৃতিক কার্য্যসূচি পালনের জন্য জনগণকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্বপরিবেশ দিবস উপলক্ষে লোক দেখানো কার্য্যক্রম না করে আন্তরিক ভাবে এগিয়ে আসুন। আসুন আমরা প্রত্যেকে একটি করে বৃক্ষ রোপন করি। সাথেই বৃক্ষশিশুকে সুরক্ষিত ও পরিচর্যা করে বড় করে তুলি। এই হোক আমাদের প্রচেষ্টা। এই পরিস্থিতি থেকে প্রকৃতি, জীবকূল ও মনুষ্যকূলকে সুস্থ-সুন্দর করে গড়ে তুলতে চাই সুস্থ মনের মানুষের সমাজ। যে সমাজ মনে করবে একটি বৃক্ষ দশ পুত্রের সমান।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.