Header Ads

সীমান্তে অনুপ্রবেশ চলছে,চোরা পাচার চলছে, এরপর নির্ভুল এনআরসি কি নির্ভুল হবে, না মানুষের দুর্গতি বাড়বে

 অমল গুপ্ত, গুয়াহাটিঃ 

যার আমলে অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরির কাজের সূচনা হয়েছিল সেই দু দু বারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ পৰ্যন্ত বিশুদ্ধ এনআরসি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। একই সন্দেহ প্রকাশ করেছে আসাম পাবলিক ওয়ার্কস-এর প্রধান অভিজিৎ শর্মা, তিনি সুপ্রিমকোর্টে হলফনামা দাখিল করে রাজ্যে সংখ্যালঘু অঞ্চলের জেলাগুলোতে নতুন করে স্যাম্পল সার্ভে করার দাবি জানিয়েছেন ।শর্মার অভিযোগ লাখ লাখ ভূয়া নাম এনআরসিতে ঢুকছে, লাখ লাখ নথি পত্র জাল করা হয়েছে। এন আরসি কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীরা ঘুষ খেয়ে বিদেশিদের জাল নথি তৈরি করে দিয়েছে। তার অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। রাজধানী নগরী দিসপুরের এক এনআরসি সেবা কেন্দ্রে ঘুষ খেতে গিয়ে ধরা পড়েছে। গ্রাম অসমের সেবা কেন্দ্রগুলিতে কি ধরনের দুর্নীতি হয়েছে বা হচ্ছে তা  সহজই অনুমেয়। 
  
রাজ্যের ভাষিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষগুলিকে শদিয়া থেকে ধুবরী, শুনানির নামে হেনস্থা করা  হচ্ছে, গরিব মানুষগুলোর আর্থিক সামর্থ নেই। দুই লক্ষাধিক দাবি আপত্তির নামে প্রহসন হল,    আপত্তি জানানোর ব্যাক্তিরা আড়ালে থাকলো জাতীয়তাবাদী সংগঠন গুলোর  হাতে রিমোর্ট কন্ট্রোল,  এনআরসি কর্তৃপক্ষ সেই রিমোট কন্ট্রোলের গোপন আদেশ মেনে দেশীকে বিদেশি বানাচ্ছে বলে আমসু সহ সংখ্যালঘু সংগঠন গুলো লাগাতার ভাবে অভিযোগ করে যাচ্ছে। এনআরসি কর্তৃপক্ষের  কাজকর্ম দেখে সংখ্যালঘু মানুষ হতাশ, আর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ক্রমে  এনআরসি-র কাজ চলছে তবে এত ভুল ভ্রান্তি হচ্ছে কেন?  মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছেনা কেন?  এনআরসি কর্তৃপক্ষের বার বার নতুন নতুন আদেশ কি রেজিষ্টার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার বা  আরজিআইয়ের নির্দেশ মেনে হচ্ছে ? কেন্দ্রীয় সরকার অবগত?  না খেয়াল খুশি মতো হচ্ছে তা নিয়ে জনমনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের পুলিশ বিভাগ কি এনআরসি-র ফলে উৎপীড়িত  মানুষগুলোর মনের ভাষা পড়তে পারছে? সরকার কি অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারছে।

 যে প্রধানমন্ত্রী অসমে এসে ঘোষণা করেছিলেন সব ডিটেনশন ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে সেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় বার ক্ষমতা পেয়ে অসমে ডিটেনশন ক্যাম্পের সংখ্যা ৬ টি  থেকে ১০  টি করবেন। হিটলারের কংসেনন্ট্রেশন ক্যাম্পের মত আরও ক্যাম্প নির্মাণের কাজ চলছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত নিদৰ্শন। ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে মৃত্যু প্ৰায় ৫০ জন ছুঁয়ে গেল।  স্বাধীন ভারতের নাগরিককে স্বাধীন দেশের জেলে বন্দি করা হচ্ছে। আমরা কেউ চাইনা একজন বিদেশিও রাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করুক। এও  চাই না ভারতীয় নাগরিককে ডিটেনশন ক্যাম্পের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হোক। কিন্তু তাই হচ্ছে ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে। প্রাক্তন সেনা অফিসার সানাউল্লাহকে বিনা দোষে জেলে পুরা হল। যে সীমান্ত পুলিশ ভুয়া প্রতিবেদন পেশ করল আজও তার  কোনও শাস্তি হল না। এরপরও কি সরকারের ওপর,পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা থাকবে? আগে এন আরসি থেকে ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। ৩১ জুলাই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে অসম আবার অশান্ত হবে ২৬ জুন, অতিরিক্ত খসড়া ছুটদের তালিকা প্রকাশ পাবে,আবার হাজার হাজার ভুল  হবে, দেশীয় কে বিদেশি, বিদেশি কে দেশীয় বানানো হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের  ক্ষোভ বহু গুন বেড়ে যাবে রাজ্যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির  সৃষ্টি হবে,  সেই সময় লোকসভার অধিবেশন চলবে। ১৮ জুলাই থেকে বিধানসভা শুরু হবে। এনআরসি কর্তৃপক্ষ যদি প্রথম থেকে বিভিন্ন সংগঠনের  নির্দেশ না মেনে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতো, এনআরসি কাজে নিয়োজিত একাংশ  অসাধু কর্মচারীকে সরিয়ে দিতো তবে নির্ভুল বিশুদ্ধ এনআরসি সম্ভব হতো, আর সম্ভব হবে কি?  এন আর সি-র কাজ চলছে ওপর দিকে ২৬৩ কিলোমিটার অসম-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ চলছে ,আজও কে ভূমিপুত্র কে ভূমিপুত্র নয় তার সংজ্ঞা তৈরি হল না। প্ৰসঙ্গত, ১৯৮৫ সাল অসম চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল সেই চুক্তির অন্যতম শৰ্ত ছিল সীমান্‌ত সিল করতে হবে এবং প্ৰকৃত ভূমিপুত্ৰদের সংঞ্জা নিৰ্ণয় করতে হবে। দুটি ক্ষেত্ৰে সরকার কাৰ্যত ব্যৰ্থ। 

এখনও সীমান্ত সিল হল না, অনুপ্রবেশ চলছে, রাজনৈতিক নেতাদের আনুকূল্যে গরু পাচার চলছে, কয়লা, সুপারি, সার   পাচার চলেছে। দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স এর অংগীকার করা বিজেপি সরকার পারবে কি  নির্ভুল এনআরসি তৈরি করতে?  লাখ লাখ সংখ্যালঘু মানুষকে, যারা বিগত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে দুহাত ভরে ভোট  দিয়েছে সেই মানুষগুলোকে বিপদের মাঝে ফেলে সরকার কি  সব কা সাথ, সব কা বিকাশ, সব কা বিশ্বাস রক্ষা করতে পারবে?





কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.