Header Ads

অসমের শিলচর লোকসভা কেন্দ্ৰে নাগরিকত্ব বিলের রসায়নাগারে অ্যাডভান্টেজে রয়েছেন মোদি, বিল বিরোধীদের অভিযোগ




কে জি সুরেশ

‘‘এক পাৰ্টি আমাদের সীতার মতো পরিত্যক্ত করে রেখেছে এবং অন্য পাৰ্টি আমাদের অনাবৃত করছে’’- এই মন্তব্য অসমের শিলচরের চা বাগানের এক কৰ্মী রাজেশ হাজ্জমের।
 শিলচর কেন্দ্ৰের ২.৬ লক্ষ হিন্দীভাষী কৰ্মীদের মধ্যে একজন হচ্ছেন হাজ্জম। লোকসভা নিৰ্বাচনে এদের ভোটের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে কংগ্ৰেস বরাবরই এদের সমৰ্থন পেয়ে আসছে। এবার শাসক দল বিজেপি কংগ্ৰেসের এই দুৰ্গকে ছিনিয়ে নিতে কোমর বেঁধে নেমেছে। ২০১৪ সালে যখন সারা দেশ মোদির জ্বরে নিমজ্জিত সে সময় প্ৰবীণ কংগ্ৰেস নেতা সন্তোষ মোহন দেবের কন্যা সুস্মিতা দেব শিলচর কেন্দ্ৰ থেকে জিতেছিলেন। এবার গেরুয়া দল নিৰ্বাচনে জিততে শিলচর কেন্দ্ৰে সুস্মিতার প্ৰতিদ্বন্দী ড০ রাজদীপ রায়কে দাঁড় করিয়েছে। যার বাবা একজন সমাজ সেবক এবং দীৰ্ঘদিন ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
শিলচরে বিজেপির পদ্মফুল ফোটাতে ইতিমধ্যেই প্ৰধানমন্ত্ৰী থেকে শুরু করে অসমের মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সোনোয়াল, রাজ্যের মন্ত্ৰী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা দলীয় প্ৰাৰ্থী রাজদীপের পক্ষে জনসভা, পদযাত্ৰা রোড শো করে গেছেন। অন্যদিকে, কংগ্ৰেসের প্ৰাৰ্থী সুস্মিতা দেবের পক্ষে এই প্ৰথম ইউপি-র বাইরে রোড শো করে গেলেন কংগ্ৰেসের সাধারণ সম্পাদক প্ৰিয়াঙ্কা গান্ধী বডরা। শিলচরে কংগ্ৰেসের ব্যপকহারে ৪.৫ লক্ষ মুসলিম ভোটারদের সমৰ্থন রয়েছে, অপরদিকে বিজেপিও এই বাংলাভাষী মানুষ অধ্যুষিত কেন্দ্ৰটি জিততে এখন পৰ্যন্ত সৰ্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেছে। উত্তরপূৰ্বের বাকি অংশের তুলনায় এই কেন্দ্ৰে আরেকটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল- বিজেপি শাসনাধীন এনডিএ সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬-র লাগু করার ব্যপারে শিলচরে অমুসলিমদের মধ্যে সমৰ্থন দেখা গিয়েছে।  ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই বিলটি লোকসভায় প্ৰস্তাবিত বিলটিতে ১৯৫৫ সালে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে উদবাস্তু হয়ে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পাৰ্সি অথবা খ্ৰিস্টান ধৰ্মাবলম্বীর যে সকল মানুষ ভারতে এসেছে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও একনাগারে দেশে ১১ বছর থাকলে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, সেই সময়সীমা কমিয়ে ৬ বছর উল্লেখ রয়েছে। অৰ্থাৎ লাগাতার ৬ বছর দেশে বসবাস করলে সেই ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই নাগরিকত্ব পেয়ে  যাবে।
২০১৪ সালে সাধারণ নিৰ্বাচনের সময় বিজেপি প্ৰতিবেশী দেশগুলিতে অত্যাচারিত হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া ব্যপারে প্ৰতিশ্ৰুতি দিয়েছিল। এই ইস্যুতে বিজেপি বিভিন্ন দিক থেকে চাপে পরলেও দলটি তার দেওয়া প্ৰতিশ্ৰুতি থেকে সরে যায়নি।  অন্যদিকে, বিজেপির শরিক দল অসম গণ পরিষদ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটিকে ‘অসম বিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়েছে। একমাত্ৰ বরাক উপত্যকা ছাড়া সারা অসমে এই বিলের বিরুদ্ধে প্ৰতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিল বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিল লাগু হলে অসম হিন্দু বাংলাদেশীতে ভরে যাবে। রাজ্য ‘ডাম্পিং গ্ৰাউন্ডে’ পরিণত হবে। শিলচর কেন্দ্ৰে বাংলাভাষাভাষীর মানুষের কাছে বিজেপি গেম চেঞ্জার হিসেবে পরিণত হতে পারে। তার কারণ দুই দলের প্ৰাৰ্থীই বাঙালি। দুই দলেরই এখন প্ৰধান টাৰ্গেট শিলচর কেন্দ্ৰ। শিলচর কেন্দ্ৰে বাঙালি হিন্দু এবং মুসলমান ভোটারের সংখ্যার পর তৃতীয় বৃহত্তম ভোট ব্যাংক হচ্ছে হিন্দিভাষী চা বাগানের কৰ্মীরা। বিজেপি এবং কংগ্ৰেস দুই দলই এখন চা বাগান কৰ্মীদের সমৰ্থন পেতে আগ্ৰহী। তবে কংগ্ৰেসের সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় জাতীয় ট্ৰেড ইউনিয়ন, আরএসএস-এর শাখা সংগঠন ভারতীয় মজদুর সংঘেরও গত কয়েক বছরে যথেষ্ট শক্তি ঘাটি করেছে। অন্যদিকে সুবিধা ফ্যাক্টরগুলি হল- বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর গত পাঁচ বছরে কেন্দ্ৰের উজ্জ্বল যোজনার অধীনে বহু পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ এবং শৌচালয়ের সুবিধা পেয়েছে। রাজু লোহার নামে একজন বলেন- ‘‘ হ্যাঁ, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আমাদের লাইন ম্যানকে ১৫০০ টাকা দিতে হয়েছিল। কিন্তু তার জন্য আমরা মোদিজিকে তো আর দোষারোপ করতে পারি না। এর আগে তো টাকা দিয়েও আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি।’’ রাজ্যে বিজেপি সরকার তাদের প্ৰতিদেনের হাজিরা ৩০ টাকা করে বাড়িয়েছে। কিন্তু তারা ১৫ টাকা করে পাচ্ছে তাও দেরিতে। এছাড়াও আরও অন্যান্য বহু সমস্যা রয়েছে যেগুলি তারা সমাধান চাইছে। এনআরএইচএম-এর অধীনে বিনামূল্যে ওষুপত্ৰ আসছে। কিন্তু চিকিৎসকরা নিয়মিতভাবে আসছেন না তাই ওষুধগুলি এক্সপায়ারি ডেট পার হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের জন্য জলের পাইপ ফিটিং করা আছে কিন্তু পাইপে জল আসছে না। ম্যানেজমেন্ট ঠিক নেই, তাই এই সুবিধাগুলি থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারী সুযোগ সুবিধাগুলি আদৌ কাৰ্যকরী হচ্ছে কিনা তা দেখতে লেবার ইন্সপেক্টর অথবা হেল্থ ইন্সপেক্টর বাগানে আসেন না। বিজেপির প্ৰাৰ্থী যিনি শিলচর কেন্দ্ৰে ভোটে দাঁড়িয়েছেন তিনি একজন চিকিৎসক, তাই বাগানের কৰ্মীরা রাজদীপের মতোই একজন প্ৰাৰ্থীকে চাইছেন। যিনি ক্ষমতায় এলে বাগান কৰ্মীদের দীৰ্ঘদিনের দাবি দাওয়াগুলি পূরণ করবেন। প্ৰাক্তন স্কুল শিক্ষক এবং ইউনিয়নের সদস্য অশোক ভৰ্মা বলেন- ‘‘এবারে তো চা বাগানে মোদি হাওয়া আছে কিন্তু তারা যদি তাদের দাবি দাওয়াগুলি পূরণ না করে তাহলে ২০২১ সালে বিধানসভা নিৰ্বাচনে শিক্ষা দেব।’’
 গণতন্ত্ৰ ব্যবস্থায় সত্যিই ভোটারদের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে।


( এই প্ৰতিবেদনের লেখক একজন বরিষ্ঠ সাংবাদিক তথা ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব মাস কমিউনিকেশন-এর প্ৰাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.