নগাঁও লোকসভা কেন্দ্রে বাঙালি ভোটাররা প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে
লোকসভা নিৰ্বাচন ২০১৯
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটিঃ অসমে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় লাখ লাখ বাঙালির বাস, এই বৃহত্তর বাঙালি হিন্দু বরাবর কংগ্রেস দলের ভোটার। মধ্য অসমের লামডিং, লঙ্কা, হোজাই, জাগিরোড, নগাঁও প্রভৃতি বাঙালি প্রধান অঞ্চল নগাঁও লোকসভা কেন্দ্রের অধীন। বিগত লোকসভা নিবার্চনে বিজেপি দলকে প্রাণখুলে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিল নিয়ে যেভাবে বাঙালিদের হেনস্থার মুখে পড়তে হল, তাতে বাঙালিদের মন ভেঙ্গে গেছে। বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে। কংগ্রেস দল বাঙালিদের প্রাণের নেতা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে অপমান করেছে। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সম্পত্তি লুট করেছিল, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে পৰ্যন্ত অপমান করেছিল। এইসব ঘটনা অতীত হলেও বাঙালিরা ভুলে যায় নি। অসমের মানুষ ভুলে গেছে। নেতাজি অসমকে এবং শ্যামাপ্রসাদ ওয়েস্ট বেঙ্গলকে পাকিস্তানের কবল থেকে বাঁচিয়েছিলেন। অসমকে রক্ষা করতে গোপীনাথ বরদলৈয়ের উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল। কিন্তু বড় অনুতাপের কথা, সেই বাঙালিদের এনআরসি নামে, বিলের নামে ডিটেনশন ক্যাম্প এবং ডি ভোটারদের নামে চরম অপমান করা হচ্ছে। জাতীয়তাবাদী অসমীয়াদের এর প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে না। এই দোটানায় পরে বাঙালিরা আজ কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। বিজেপি বাঙালিদের বহু প্রতিশ্ৰুতি দিয়েছিল। নাগরিকিত্ব বিলকে কেন্দ্র করে অসমিয়া-বাঙালিদের মধ্যে বিভাজন বেড়ে গেছে। বাঙালিরা ৫০, ৬০ বা ৭০ বছর ধরে বাস করছে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়। অসমের ভাষা সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেছে। অসমের সার্বিক উন্নয়নে বাঙালিদের অবদান কম নয়, তারপরও তাদেরকে নানাভাবে অপদস্থ করা হচ্ছে। অসমের বাঙালি মুসলিমরা অসমিয়া বাঙালিদের মধ্যে বিরোধ জিইয়ে চাচ্ছেন বলে কংগ্রেস দলের সাধারণ সম্পাদক চিত্ত পালের অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এই উপত্যাকার হিন্দু বাঙলিদের পাশে কোনও দল নেই, অভিভাবকহীন এই জনগোষ্ঠীর কোনও নেতা নেই। গৌতম রায়, অর্ধেন্দু দে, প্ৰমুখদের বাঙালিদের নেতা বলা যাবে না। কংগ্রেস , বিজেপি, অগপ দলে বাঙালিদের মধ্যে থেকে বড় পদে কাউকে নেওয়া হয়নি। এআইইউডিএফ দলে বাঙলিদের কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তৃণমূল কংগ্রেস বাঙালিদের কথা বললেও বাঙালি হিন্দু নয় বাঙলি মুসলিমদের বেশি প্রাধান্য দেয় বলে তৃণমল দলের মধ্যে অভিযোগ উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে নগাঁও লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় ৫ লাখ বাঙালির সমর্থন যারা পাবে তাদের জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি। বিজেপি সাংসদ রাজেন গোহাঁইয়ের সঙ্গে বাঙালিদের সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। এবার বিধায়ক রূপক শর্মা বাঙালিদের মধ্যে এত পরিচিত নন। টিকিট পাওয়ার পর প্রথম তিন লাখ বাঙালির শহর লামডিং প্রথম সফর করেন। সাংসদ রাজেন গোঁহাই লামডিংয়ে খুব জনপ্রিয়। এবার টিকিট না পাওয়ায় রাজেনের সমর্থকরা কংগ্রেসকে ভোট দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে বলে কয়েকজন রাজেনের সমর্থক দাবি করলেন। অপরদিকে কংগ্রেস প্রার্থী প্রদ্যুৎ বরদলৈ টিকিট পেয়ে লামডিংয়ে প্রথম সফর করে মা শীতলা দেবীর আশীর্বাদ নিতে যান। বাংলায় ভাষণ দেন। আদি উজানের বাসিন্দা ভাল বাংলা জানেন। একজন সাংস্কৃতিক মানস্ক মানুষ। প্রাক্তন বনমন্ত্রীকে বাইরের মানুষ বলে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তার জেতার সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে নগাঁওয়ের বাঙালিদের অভিমত। তৃণমূল দলের প্রার্থী একজন আইনজীবী বাঙলি যুব ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সহদেব দাস একজন ভাল প্রার্থী হলেও আর্থিক ভাবে খুবই দুর্বল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসমে ১০ জন প্রার্থী দিয়েছেন। কিন্তু জেতার জন্যে যেটুকু টাকা দরকার তা দেননি। তৃণমূলের কর্মীরা সেই অভিযোগ করেছেন। মোট কথা নগাঁও লোকসভা কেন্দ্রে বাঙালির বিজেপি, কংগ্রেস দলের ভাগ্য নিৰ্ধারণ করবে।
কোন মন্তব্য নেই