Header Ads

চলো এগিয়ে যাই #‘ব্যালেন্স ফর বেটার’-এর জন্য




রিংকি মজুমদার

সারা বিশ্ব জুড়ে শুক্ৰবার পালিত হচ্ছে আন্তৰ্জাতিক নারী দিবস। এ বছর বিশেষ এই দিনের থিম হচ্ছে ‘ব্যালেন্স ফর বেটার’। সারা বিশ্বে যখন নারীদের কাজের সম্মান এবং লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা নিয়ে চিন্তা চৰ্চা চলছে। আমরা দেখলাম গুগলও এদিন আন্তৰ্জাতিক নারী দিবসে ডুডল তৈরি করে সম্মান জানিয়েছে বিশ্বের সমস্ত নারীদের। ডুডলে একটি স্লাইড শোয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার মহিলাদের অনুপ্রেরণামূলক কথা লেখা রয়েছে। গুগলের হোম পাতায় বাংলা হিন্দি, ইংরেজি, চাইনিজ সমেত বিশ্বের ১৪ টি ভাষায় রয়েছে নানা কথা। ডুডলের থিম হচ্ছে ‘নারীর ক্ষমতায়নে নারী’। সেখানে কোথাও মেক্সিকান শিল্পী ফিডা কাহলো বলছেন, ‘পায়ের কী প্রয়োজন? ওড়ার জন্য যদি ডানা থাকে আমার?’ আবার ভারতীয় বক্সার মেরি কমও বলছেন ‘তুমি মহিলা বলে তুমি দুর্বল, এটা কখনও বলো না।’ তাইওয়ানিস লেখক সানমাও বলেছেন- ‘যে ব্যক্তির অন্তত একটি স্বপ্ন রয়েছে তার দৃঢ় হওয়ারও কারণ রয়েছে।’ ফান্সের ঔপন্যাসিক জৰ্জ স্যান্ড বলেছেন- ‘ভবিষ্যৎকে অতিতের চেয়ে আরও সুন্দর করে জাগানো যেতে পারে।’   
তবে দুঃখের বিষয় বৰ্তমানে আমরা যে পৃথিবীতে বাস করছি সেখানে এখনও মেয়েদের লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। এখনও সরকারী হোক কিংবা রাজনৈতিক ক্ষেত্ৰ, অৰ্থনৈতিক, সম্পত্তি, মিডিয়া কভারেজ, ক্ৰীড়া ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্ৰে মেয়েদের লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হতে হয়। কৰ্মক্ষেত্ৰে মেয়েদের যৌন হয়রানির বিষয়টি আরও প্ৰকাশ্যে এসেছে গত বছর #মি টু- অন্দোলনের পর। এছাড়াও আনুষঙ্গিক আরও কিছু ব্যপার রয়েছে যা আমাদের সমাজ জেনেশুনেও তা বাস্তবে রূপায়নের ক্ষেত্ৰে উৎসাহী নয়। এক্ষেত্ৰে নারী পুরুষ উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের উন্নয়নে আমাদের বেশ কয়েকটি দিক মাথায় রাখতে হবে। সেগুলি হচ্ছে-  নারীর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না, কৰ্মক্ষেত্ৰের পরিবেশ ভাল রাখতে হবে, পরিবারের কাজে পুরুষদের আরও অংশগ্ৰহণ প্ৰয়োজন, রাস্তার পাশে প্ৰয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবৰ্তন করা খুব জরুরি, সমতার জন্য পুরুষদের সহায়তা ও সমৰ্থন বেশি প্ৰয়োজন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নারী উদ্যোক্তা বাড়াতে হবে। আমাদের ভুলে গেল চলবে না, সফলতার পিছনে নারী ও পুরুষ উভয়ের অবদান রয়েছে। নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের একক অংশগ্ৰহণে সমাজের উন্নয়ন কখনই সম্ভব নয়। নারী দিবসের ইতিহাস যদি বলতে হয় তাহলে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হয় যে বিশ্বে প্ৰথম ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্ৰুয়ারি আমেরিকায় আন্তৰ্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। ১৯০৮ সালে আমেরিকার নিউইয়ৰ্কে বস্ত্ৰ শ্ৰমিকরা তাঁদের কাজের সম্মান আদায়ের লক্ষ্যে ধৰ্মঘট করেছিলেন। নিৰ্দিষ্ট সময়মতো কাজ এবং সমান বেতনের দাবিতে চলে হরতাল। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনের উদ্যোগের পর ১৯ মাৰ্চ আস্ট্ৰিয়া, ডেনমাৰ্ক, জাৰ্মানি এবং সুইজারল্যান্ডে প্ৰথম আন্তৰ্জাতিক নারী দিবস চিহ্নিত হয়। নারীর কাজের অধিকার, বৃত্তিমূলক প্ৰশিক্ষণ এবং কাজের বৈষম্যের অবসান দাবি করে জমায়েত হয়েছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। রাশিয়ার মেয়েরাও প্ৰথমবার ২৮ ফেব্ৰুয়ারি রুটি ও শান্তির দাবিতে আন্তৰ্জাতিক নারী দিবস পালন করে প্ৰথম বিশ্বযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। ইউরোপের নারীরা ৮ মাৰ্চ শান্তি বিষয়ক কাৰ্যক্ৰমকে সমৰ্থন করে বিশাল মিছিলে নামেন। ১৯১৩-১৯১৪ সালে আন্তৰ্জাতিক নারী দিবস পালনের মাধ্যমেই প্ৰথম বিশ্বযুদ্ধের প্ৰতিবাদ জানানোর একটি প্ৰক্ৰিয়া হয়ে ওঠে। এরপর ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মাৰ্চ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তৰ্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু আজ ৪৪ বছর পরও মূল স্ৰোতের মহিলাদের ছাড়া নারীদের তেমনভাবে উন্নতি হয়নি বলা যায়। এখনও গ্ৰামে গঞ্জে বহু গরীব মহিলা লিঙ্গ বৈষম্য, পরিবারে হোক কিংবা সমাজে, নানানভাবে অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। নারীদের থেকে এর কোনও প্ৰতিবাদও আসছে না। মাস দুয়েক আগে অসমের কংগ্ৰেস নেত্ৰী ববিতা শৰ্মা গুয়াহাটিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন- ‘নারীদের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে আজও। বিশেষ করে রাজনৈতিক জগতে নারীদের নিরাপত্তা নেই। মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের বিল লোকসভায় পড়ে আছে। তা এখনও বাস্তাবে রূপায়ন করতে পারেনি কেন্দ্ৰীয় সরকার।’ সত্যিই তো এখনও অহরহ ঘটছে ধৰ্ষণ, ধর্ষণ করে খুনের মতো ঘটনা। প্ৰশ্ন হচ্ছে কেন হচ্ছে এসব ঘটনা। গলদ টা কোথায় রয়েছে? পরিবার থেকেই এর সংস্কার শুরু করতে হবে। ছেলে মেয়ে উভয় সন্তানকে প্ৰকৃত শিক্ষা, আদৰ্শে গড়ে তুলতে হবে। যে দিন আমাদের সমাজে মেয়েরা বিনা দ্বিধায় গভীর রাত পৰ্যন্ত ঘরের বাইরে বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারবে। ঘরের পিছুটান থাকবে না। ভয়, দ্বিধা থাকবে না। কেউ সেই মেয়েটিকে খারাপ মেয়ে বলবে না। আমার মনে হয় তেমন একটা সামাজিক নিরাপত্তার পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলেই  নারীকে প্ৰকৃত সম্মান দেওয়া হবে।          

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.