Header Ads

অবশেষে দীৰ্ঘ প্ৰক্ৰিয়ার পর মুক্তি পেলেন অভিনন্দন বৰ্তমান, কিন্তু হান্দওয়ারায় গোলাগুলিতে ম্লান হল আনন্দ

রিংকি মজুমদার, নয়াদিল্লিঃ অবশেষে দীৰ্ঘ প্ৰক্ৰিয়ার পর শুক্ৰবার রাত সোয়া ৯ টায় ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে দেশের মাটিতে পা রাখলেন ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বৰ্তমান। পাকিস্তানে তাঁকে মারধর করা হয়েছে। ওঁর বাদিকের চোখে কালসিটে পড়ে গেছে। প্ৰায় ৬১ ঘন্টা পর তাঁকে ছাড়া হল। পাকিস্তানের মাটিতে নামার পর তিনি বিমানের গোপনিয়তা সংক্ৰান্ত নথিপত্ৰ খেয়ে ফেলেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিরাপত্তাজনিত প্ৰশ্নে তিনি কৌশলগতভাবে অবিচল ছিলেন। আগে সুখোই বিমান চালাতেন। এখন মিরাজ ২১ বাইসন চালিয়ে পাকিস্তানের অত্যাধুনিক এফ১৬ বিমানকে নষ্ট করেন। বুধবার পাক সেনার বিরুদ্ধে লড়াই করে শেষ মুহূৰ্তে যখন নিজের বিমানকে বাঁচাতে পারলেন না তখন তিনি প্যারাশুটে পাকিস্তানের সীমান্তে গিয়ে পড়েন। জলাশয়ের পাশে নামার পর তাঁকে পাকিস্তানের স্থানীয়রা মারধর করে। তারপর পাকিস্তান সেনা তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বন্দি করে নিয়ে যায়। শুক্ৰবার দীৰ্ঘ সড়ক পথে তাঁকে ওয়াঘা সীমান্তে নিয়ে আসার পেছনে এর মধ্যে কোনও বিশেষ কারণ রয়েছে বলেই মনে করছেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁর  নিরাপত্তা নিয়ে দোলাচল ছিল। পাকিস্তান তাঁর প্ৰত্যাৰ্পনে দু দুবার সময় পরিবৰ্তন করেছে। কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্ৰমন্ত্ৰক দেরী হওয়ার পেছনে সন্দেহ প্ৰকাশ করেছে। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আৰ্মি পোষাক পরা কারোর ওপর শারীরিক অত্যাচার করা যায় না। যুদ্ধবন্দি হিসেবে তাঁকে সম্মান দিতে হয়। কিন্তু পাকিস্তান জেনেভা কনভেনশনের সেই প্ৰটোকল মানে নি। ওয়াঘা সীমান্তে তাঁকে দীৰ্ঘ বিবৃতিতে সই করানো হয়। সেখানে একটি কথা বলা হয়েছে যে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম তাঁকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। তিনি যতক্ষণ পাকিস্তানে ছিলেন ভালই ছিলেন। বুধবার ১টা ১৯ মিনিটে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও প্ৰকাশ করেছে সেখানে অভিনন্দন বলেছেন পাক সেনারা তাঁর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছে। যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় তখন তিনি বলেন- তিনি দক্ষিণ থেকে এসেছেন। জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কি বিবাহিত। জবাবে চা খেতে খেতে তিনি বলেন- হ্যা। তিনি এও বলেছেন- আপনাদের চা খুব ভালো হয়েছে। আপনি কোন বিমান চালাচ্ছিলেন? তাঁকে প্ৰশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দুঃখিত, তা আপনাদের বলতে পারবো না। তবে আমি নিশ্চিত আপনারা বিমানের ধ্বাংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন। সেখানে বুঝতে পারবেন আমি কোন বিমান চালাচ্ছিলাম। পাক মেজর জিজ্ঞেস করেন- আপনার মিশন কি ছিল? অভিনন্দন বলেন- দুঃখিত, সেটাও আপনাকে বলার কথা নয়। শুক্ৰবার তাঁর দীৰ্ঘ বিবৃতি তাঁকে দিয়ে সই করিয়ে নিয়েছে পাক সেনারা। এদিন ওয়াঘা সীমান্তে তাঁর চিকিৎসক মা এসেছিলেন তাঁকে নিতে, বাবা অবসরপ্ৰাপ্ত এয়ার মাৰ্শল এস বৰ্তমান, অভিনন্দনের স্ত্ৰী প্ৰাক্তন বায়ুসেনা অফিসার তাঁকে নিতে ওয়াঘা সীমান্তে এসেছিলেন। তাঁর দাদু প্ৰাক্তন এয়ার মৰ্শল। বাবা এস বৰ্তমান দীৰ্ঘ বছর অসমের তেজপুরের আৰ্মি কেন্টনম্যান্টে ছিলেন। অভিনন্দন তখনই তেজপুর আৰ্মি স্কুলে পড়শুনো করেন। তাঁর বাবা ৭১এর বাংলাদেশের যুদ্ধে অংশগ্ৰহণ করেছিলেন। এয়ার চিফ মাৰ্শল আর জি কাপুর ওয়াঘা সীমান্তে অভিনন্দনকে প্ৰথম স্বাগত জানান। এদিন পাক সেনাদের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল চেকআপ করা হয়। সেই প্ৰক্ৰিয়া শেষ করতেই এতো দেরী হয়। আটারি থেকে বিমানে করে তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। দেশে ফেরত এসে ভাল লাগছে বলেন উইং কমান্ডার। এই প্ৰতিবেদন লেখা পৰ্যন্ত হান্দওয়ারার আখনুর, নৌশেরা সীমান্ত এলাকায় মৰ্টার, শেল নিক্ষেপ, গোলাগুলি চলছিল। সীমান্ত এলাকায় একটি বাড়িতে পাকিস্তানিরা লুকিয়েছিল। তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলে তারাও পাল্টা গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে ২ সেনা অফিসার, ২ পুলিশ, ১জন নিরীহ ব্যক্তি সহ মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে ৯ জন। অভিনন্দনের রেহাই নিয়ে এদিন সারা দেশজুড়ে অনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সন্ধের পরে সেই আনন্দ সীমান্তে গোলাগুলিতে ম্লান হয়ে গেল। আন্তৰ্জাতিক মহল বলছে পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর সরকার প্ৰশাসনের কোনও সমন্বয় নেই। প্ৰধানমন্ত্ৰীর প্ৰতিশ্ৰুতির কোনও গুরুত্ব নেই। তিনি আইএসআই এবং পাক সেনাদের নিয়ন্ত্ৰণে রয়েছেন। এই সমন্বয় না থাকার জন্যেই অভিনন্দন বৰ্তমানের দেশের প্ৰত্যাৰ্পনের কোনও ভরসা ছিল না।  কিন্তু আন্তৰ্জতিক মহলের জোড়াল সমৰ্থনের ফলে পাকিস্তান চাপে পরে অভিনন্দনকে ছাড়তে বাধ্য হল পাক সরকার। বুধবার পাক সংবাদ মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়ায় প্ৰকাশ করে দেয় যে সেখানে ভারতের একজন পাইলটকে আটকে রাখা হয়েছে। বাধ্য হয়ে পাক সরকার স্বিকার করে অভিনন্দন তাদের হেফাজতে আছেন। আন্তৰ্জাতিক চাপে পরেই শেষ পৰ্যন্ত পাক সংসদে উইং কমান্ডারকে মুক্তির ঘোষণা করেন পাক প্ৰধানমন্ত্ৰী ইমরান খান। বহু নাটক, বহু প্ৰতীক্ষার পর অভিনন্দন ছাড়া পেলেন। সারা দেশ খুশি।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.