বন্যা ও ধ্বসকে রাষ্ট্ৰীয় সমস্যা হিসাবে বিধানসভায় সৰ্বসন্মত প্ৰস্তাব গ্ৰহণ করা হয় কাজ হয় না, অভিযোগ বিধানসভায়
ধলার ঘটনায় আজও তদন্ত চলছে, সন্দেহের তীর সেই আলফার (স্বাঃ) দিকেই
অসমের যুবক পাকিস্থানের লোধি জেলে
অমল গুপ্তঃ গুয়াহাটি,
অসম বিধানসভায় সোমবার রাজ্যের বাৎসরিক বন্যা এবং ধ্বসের সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসাবে গণ্য করার দাবি উঠে।বিধানসভায় বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এই দাবি উত্থাপন করে বলেন, বহু বার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সৰ্বসন্মত প্ৰস্তাব গ্ৰহণ করে কেন্দ্ৰে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আজও অসমের ব্ৰহ্মপুত্ৰ নদের বন্যা সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসাবে ঘোষণা করা হয় নি। রাজ্যে প্ৰতি বছর বন্যর ফলে কোটি কোটি টাকার জীবন সম্পত্তি বিনষ্ট হয়। আজ অসম বিধানসভায় জলসম্পদ বিভাগের উপর ছাঁটাই প্ৰস্তাবের বিতৰ্কে অংশ গ্ৰহণ করে উত্তর করিমগঞ্জের কংগ্ৰেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ আজ এই অভিযোগ করে বলেন, বরাক উপত্যকায় বিগত বন্যায় জাতীয় সড়কও ডুবে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল বরাকে গিয়ে ১০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ১ কোটি টাকারও কাজ হয় নি। বরাকের দুই প্ৰধান নদী বরাক এবং কুশিয়ারা। আগে কলকাতা থেকে করিমগঞ্জ পৰ্যন্ত জাহাজ চলাচল করত, বরাক নদীতে ড্ৰেজিং করা হয়েছে, প্ৰায় ৯০ কোটি টাকা ইতিমধ্যে খরচা হয়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, কিন্তু কোথায় খরচা হল আমাদের জানা নেই। মাজুলী সংস্কার করা হয়েছে বলে দেবানন্দ হাজরিকা দাবি করেছেন। কিন্তু আমি বিধায়ক রূপজ্যোতি কুৰ্মীকে নিয়ে মাজুলী গিয়েছিলাম, সেখানে নদী সংস্কারের কোনও লক্ষণ দেখি নি। ব্ৰহ্মপুত্ৰ নিয়ন্ত্ৰণে আজ পৰ্যন্ত কোনও মাষ্টারপ্ল্যান তৈরি হয় নি। কুশিয়ারা আন্তৰ্জাতিক নদী। সেই নদীর ধ্বস প্ৰতিরোধে সরকারের আৰ্থিক সাহায্য দেওয়া উচিত। তিনি অভিযোগ করেন, বন্য প্ৰতিরোধে কাজ করার পরেও ঠিকাদারদের অৰ্থ পরিশোধ না করে রেভিনিউ ডেপজিট করে রাখা হয়েছে। বন্যা প্ৰতিরোধে বাৰ্ষিক বাজেটের টাকা খুবই নগন্য বলে অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বেলতলায় জলসম্পদ বিভাগের জমিতে বিজেপির গুয়াহাটি কাৰ্যালয় শিলান্যাস করে বিজেপির সৰ্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। কংগ্ৰেসের রূপজ্যোতি কুৰ্মীও একই অভিযোগ করেন। ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে তীব্ৰ প্ৰতিবাদ করা হয়। শিক্ষামন্ত্ৰী সিদ্ধাৰ্থ ভট্টাচাৰ্য, ডাঃ মমিন প্ৰমুখ প্ৰতিবাদ করেন। অধ্যক্ষ হীতেন্দ্ৰ নাথ গোস্বামী বলেন, যখন কেউ বক্তব্য রাখছেন তখন হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। ‘পয়েণ্ট অব অৰ্ডার' তুলে কথা বক্তব্য রাখা উচিত। সংসদীয় মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি বলেন, প্ৰাক্তন অধ্যক্ষ দেবেশ চক্ৰবৰ্তী এবং মুখ্যমন্ত্ৰী হিতেশ্বর শইকিয়া থাকার সময় বিধানসভায় এথিকস কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির সুপারিশ সবার মানা উচিত। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ যখন দাঁড়াবেন তখন সব দলের সদস্যদের তার প্ৰতি সম্মান প্ৰদৰ্শন করা উচিত। যারা অধ্যক্ষের সেই আদেশ মানবেন না, তাদেরকে মাৰ্শাল ডেকে বার করে দেওয়ারও পরামৰ্শ দেন সংসদীয় পরিক্ৰমা মন্ত্ৰী পাটোয়ারি। কংগ্ৰেসের বিরোধী দলপতি দেবব্ৰত শইকিয়া, অধ্যক্ষকে এক নথি দেখিয়ে বলেন, বেলতলা জমিটা জলসম্পদের বিভাগে তার প্ৰমাণ তার হাতে আছে। অধ্যক্ষ জানান সেই নথি পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আজ বিধানসভায় ৰৰ-৩৫ নাগাদ নিৰ্দিষ্ট সংখ্যক বিধায়ক উপস্থিত নাথাকায় কোরাম ছিল না। অধ্যক্ষ কোরাম বেল বাজানোর মিনিট সাতেকের মধ্যে বিধায়করা উপস্থিত হন। অধ্যক্ষ দাবি মঞ্জুরি নিয়ে বিতৰ্কের জন্য প্ৰাকৃতিক দুৰ্যোগ, জলসম্পদ এবং পঞ্চায়েত ও গ্ৰামোন্নয় বিভাগকে বেছে নেন। জলসম্পদ বিভাগ নিয়ে বিতৰ্কে বরাকের বিজেপি সদস্য আমিনুল হক লস্কর হাইলাকান্দি জেলায় বন্যার প্ৰসঙ্গ তুলে বলেন, মিজোরাম থেকে বন্যার জল এসে হাইলাকান্দিকে ভাসাচ্ছে। বন্যা প্ৰতিরোধে উপযুক্ত অৰ্থ প্ৰদানের দাবি জানান।তিনি পুরকায়স্থকে সমৰ্থন জানান। বিধায়ক রূপজ্যোতি কুৰ্মী অভিযোগ করেন, নাগাল্যাণ্ড, অরুণাচল প্ৰভৃতি রাজ্যে ব্যাপক হারে গাছ-গাছরা কাটার ফলে ব্ৰহ্মপুত্ৰের বুকে বালি পাথরে ভরে যাচ্ছে। ব্ৰহ্মপুত্ৰ নদ ক্ৰমশ চওড়া হয়ে যাচ্ছে, নিয়ন্ত্ৰণ করা যাচ্ছে না।
আজ বিধানসভায় কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ তিনসুকিয়া জেলার ধলায় গত ২ নভেম্বর নৃশংস হত্যা কাণ্ডের প্ৰসঙ্গ উত্থাপন করে সরকারের কাছে বিস্তারিত জানতে চান। সেখানে ৫ জন বাংলাভাষী মানুষকে নিৰ্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আজ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়ালের পক্ষে সংসদীয় পরিক্ৰমা মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি এই ঘটনার পিছনে আলফা (স্বাধীন) জড়িত থাকার সন্দেহ প্ৰকাশ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন নি। শুধু জানান, রাষ্ট্ৰীয় তদন্তকারী সংস্থা (এন আই এ) আজও তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। এই ঘটনায় তিনসুকিয়া জেলার শদিয়া পুলিশ থানার অন্তৰ্গত ধলায় অবিনাশ বিশ্বাস (২৩), অনন্ত বিশ্বাস (২২), শ্যামলাল বিশ্বাস (৫৮), তারা ছিলেন একই পরিবারে সদস্য। তাছাড়া সুবল দাস (৫০) এবং ধনী নমশূদ্ৰ (২২) সবাই খেরবাড়ি বিসনিমুখ গ্ৰামের বাসিন্দা। তিনি জানান গ্ৰামের বাসিন্দাদের নিরপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৫ লক্ষ টাকা করে এককালীন সাহায্য দেওয়া হয়েছে। তবে নিহত পরিবারের নিকট আত্মীয়দের কোনও সরকারি চাকরি দেওয়া হয় নি। কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ-র অপর এক প্ৰেশ্নর জবাবে চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি জানান, রাজ্যে ডিটিনশন ক্যাম্পে ২৯ জন শিশুও আছে। এক বছরের ফতেমা বেগম, ২ বছরের আজিজুল আহমেদ, ২ বছরের বিদ্যা সরকার, বিশ্বজিৎ দাস ২ বছর, প্ৰমুখ ২৯ জন শিশু সহ অভিভাবকদের ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী করে রাখা হয়েছে। গত ৮ ফেব্ৰুয়ারি পৰ্যন্ত সৰ্বমোট ২১৬ জন মহিলা আছে তার মধ্যে ফতিমা বেগম নামে এক গৰ্ভবতী মহিলাও আছেন। বিদেশী হিসাবে চিহিত বন্দীদের কবে রিলিজ করে দেওয়া হবে, তা বিদেশী ট্ৰাইব্যুনালগুলিতে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান মন্ত্ৰী। বিধানসভায় অগপর রমেন্দ্ৰ নারায়ন কলিতা প্ৰশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও প্ৰত্যাৰ্পণ চুক্তিই নেই। তাই চিহিত বিদেশীদের কি করে বহিস্কার করা যাবে? মন্ত্ৰী বলেন, তাদের সময়ে সব থেকে বেশি বিদেশী বহিস্কার করা হয়েছে। রোহিঙ্গিয়া সহ ৮২৯জনকে বহিস্কার করা হয়। মামুন ইমদাদুল হক-র এক প্ৰেশ্নর জবাবে মন্ত্ৰী জানান, অসমে ১০০ টি বিদেশী ট্ৰাইব্যুনাল আছে। এই ট্ৰাইব্যুনালগুলোতে ২,০১,৯৮১ মামলা বিচারাধীন হয়ে আছে, বিচারাধীন সবাইকে ‘ডি' ভোটার হিসাবে গন্য করা হচ্ছে। নুরুল হুদার এক প্ৰেশ্নর জবাবে মন্ত্ৰী জানান, অসম বাংলাদেশ সীমান্তের দৈঘ্য হচ্ছে ২৬৩ কিলোমিটার, তার মধ্যে স্থলভাগ হচ্ছে ২১৪.৮৯ কিলোমিটার এবং জলভাগের দৈৰ্ঘ্য হচ্ছে ৪৮.ৰৰ কিলোমিটার। তারমধ্যে কাটাতাঁরের বেড়া দেওয়া হয়েছে ৯৩.৭৭ কিলোমিটার। অগপর রমেন্দ্ৰ নারায়ন কলিতা-র এক প্ৰেশ্নর জাবাবে মন্ত্ৰী গত বছর ৩১ আগষ্ট পৰ্যন্ত ১,০৩,৭৬৪ জনকে বিদেশী হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে তারমধ্যে ২৯,৮২৯ জন বিদেশীকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বহিস্কার করা হয়েছে। বিদেশী শনাক্তকরণ এবং বহিস্কারের জন্য সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৪৭.৮৪ কোটি টাকা। রাজ্যের ৬ টি ডিটেনশন ক্যাম্পে ৩১ জানুয়ারি পৰ্যন্ত ৯৩৮ জনকে রাখা হয়েছে। মন্ত্ৰী জানান, গত ২৪ জানুয়ারির সুপ্ৰীমকোৰ্টের নিৰ্দেশ মৰ্মে আগামী ৩১ জুলাই রাষ্ট্ৰীয় নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা প্ৰকাশ পাবে। তার জন্য ব্যয় হয়েছে ১০৯১.৪৯ কোটি টাকা, মন্ত্ৰী স্বীকার করেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ২৬৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৬১.৪৯ কিলোমিটার বেড়া দেওয়ার কাজ বাকী আছে, এবং ৪৮.ৰৰ কিলোমিটার জল সীমান্তে অত্যাধুনিক প্ৰযুক্তি ব্যবহার করে সীল করার ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্ৰীয় সরকার।
পুলওয়ামায় ৪৪ জন আধা সামরিক বাহিনীর সেনা হত্যাকে কেন্দ্ৰ করে শত্ৰু দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পৰ্ক যখন অবনতি ঘটছে তখন বিধানসভায় মৃণাল শইকিয়া-র এক প্ৰেশ্নর জাবাবে সংসদীয় পরিক্ৰমা মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি জানালেন, গোলাঘাটের যুবক সীমান্ত শইকিয়া সহ কয়েকজন যুবককে পাকিস্তানে আটক করে রাখা হয়েছে। পাকিস্তান মালিকাধীন জাহাজে কাজ করতে গিয়েছিলেন তারা, তখন তাদেরকে গ্ৰেফতার করা হয়। মন্ত্ৰী জানান, ৩৫ বছরের যুবক সীমান্তের বাবা প্ৰদীপ শইকিয়া জানিয়েছেন, গত বছর ২৮ অক্টোবর সীমান্তকে পাকিস্থান কৰ্তৃপক্ষ গ্ৰেফতার করে। তাকে এখন পাকিস্তানের লোধি জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে। অসম পুলিশ কেন্দ্ৰীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের মুক্তির চেষ্টা করে যাচ্ছে। আজ বিধানসভায় পুলওয়ামার ঘটনায় নিহত বীর শহিদদের স্মরণে এক মিনিট মৌনব্ৰত অবলম্বন করা হয়। বিধানসভার পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰ নাথ গোস্বামী শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্ৰতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
বিধানসভায় বিধায়িকা রজলীনা তিৰ্কীর এক প্ৰেশ্নর জবাবে সংসদীয় পরিক্ৰমা মন্ত্ৰী পাটোয়ারি জানান, ২০১৭ জানুয়ারি থেকে ২০১৮-র ৩১ ডিসেম্বর পৰ্যন্ত অসমে যৌতুক জনিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ৩১৬ টি এবং যৌতুক জনিত অত্যাচারের ঘটনায় ২১৮৫ টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বিভিন্ন থানায়। যৌতুক জনিত হিংসা প্ৰতিরোধ করার জন্য অসম সরকার এক রাজ্যিক মহিলা সেল গঠন করেছে, এবং থানায় এজাহার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষীপ্ৰভাবে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্ৰহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিছু থানায় ফেমিলি কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত করার জন্য ১৮১ সখী নামে ২৪ ঘণ্টা হেল্প লাইন স্থাপন করা হয়েছে। আজ বিধানসভায় পবিন্দ্ৰ ডেকা-র এক প্ৰেশ্নর জবাবে ভবেশ কলিতা জানান, রাজ্যে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা হচ্ছে 3,২৩,৯৫৫ টি। ২০১৬ থেকে ২০১৮ ডিসেম্বর পৰ্যন্ত ১৭,৪২৮ জন ভূমিহীন পরিবারকে ভূমি দেওয়া হয়েছে। আজ বিধানসভায় শ্ৰমিক কল্যাণ প্ৰতিমন্ত্ৰী পল্লব লোচন দাস দি আসাম প্ল্যানটেশ্যন প্ৰভিডেণ্ট ফাণ্ড এণ্ড পেন্সন ফাণ্ড এণ্ড ডিপোজিট লিঙ্কড ইন্সিওরেন্স বিল উত্থাপন করেন। মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল ২০১৭ সালের পুলিশ এ্যাকাউণ্টেবিলিটি (দায়বদ্ধতা) কমিশনের বাৰ্ষিক প্ৰতিবেদন পেশ করেন।
কোন মন্তব্য নেই