Header Ads

মুখ্যমন্ত্ৰী বরাক-ব্ৰহ্মপুত্ৰ-কে পাশে নিয়ে ‘টীম অসম'র সাৰ্বিক উন্নয়নে কাজ করছেনঃ চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি



অমল গুপ্তঃ  গুয়াহাটি
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আশংঙ্খা প্ৰকাশ করে কংগ্ৰেস সদস্য কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ আজ বিধানসভায় বলেন, এই বিলের ফলে রাজ্যে মানুষের মধ্যে ভুল বাৰ্তা যাচ্ছে। অসমীয়া-বাঙালিদের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি হচ্ছে। ধৰ্মের ভিত্তিতে এই বিল উত্থাপন করা হয়েছে। যা ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার পরিপন্থী। রাজ্যে সাম্প্ৰদায়িক সম্প্ৰীতি যাতে অক্ষুন্ন থাকে, জাতিগত কোনও বিভেদের সৃষ্টি  না হয়, তার জন্য সরকারকে কঠোর হাতে মোকাবেলা করতে হবে। বিধানসভার জিরো আওয়ারে এই আশংঙ্খার জবাবে সংসদীয় পরিক্ৰমামন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি বলেন, রাজ্যপালের ভাষণের ওপর ধন্যবাদ সূচক প্ৰস্তাবের জবাবে মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল স্পষ্টাস্পষ্টি বলেছেন, হিন্দু-মুসলিম, অসমীয়া-বাঙালি-র কথা বলে রাজ্যে কোনও ভাবেই সাম্প্ৰদায়িক বিভাজনের সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্ৰী বারবার বরাক-ব্ৰহ্মপুত্ৰের সম্প্ৰীতির কথা বলে থাকেন। মুখ্যমন্ত্ৰী বারবার বরাক উপত্যকা সফরে গিয়েছেন, দুই উপত্যকায় সাম্প্ৰদায়িক সম্প্ৰীতিতে চিড় না ধরে তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি বলেন, তাদের সরকার ‘টীম অসম' হিসাবে জনগণের স্বাৰ্থে কাজ করছে। অগপ, এআইইউডিএফ, কংগ্ৰেস, বিপিএফ বলে কোনও কথা নেই। সবারই সহযোগিতা নিয়ে সরকার চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্ৰী। বরাক-ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকার মধ্যে সুসম্পৰ্ক গড়ে মিলে মিশে সরকার চালানো হচ্ছে। বৰ্তমান সরকার বরাক উপত্যকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বরাককে দক্ষিণ পূৰ্ব এশিয়ার কেন্দ্ৰ হিসাবে গড়ে তোলা হবে। নমামি বরাক উৎসব-র পর বরাক নদীতে খনন কাৰ্য চালানো হয়েছে। বরাকের সঙ্গে জলপথে বাংলাদেশের চট্টগ্ৰাম বন্দরের যোগাযোগ সাধিত হবে। আজ বিধানসভায় এআইইউডিএফ সদস্য মামুন ইমদাদুল হক চৌধুরী রাজ্য সরকারের স্কীল ডেভেলপমেেণ্টর নানা কাজের প্ৰশ্ন তোলেন। হক চৌধুরী অভিযোগ করেন রাজ্যে কৰ্মসংস্থানের অভাবে বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বৰ্তমানে ২০ লক্ষ নথিভূক্ত বেকার, বেসরকারীভাবে তার সংখ্যা ৪০ লক্ষ্যে পৌঁছিয়ে গেছে। সরকার তাদের কৰ্মসংস্থানে দিশা দেখাতে পারছে না। জবাবে শিল্প বাণিজ্য মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি জানান, অসম সরকার কৰ্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্ৰকল্প গ্ৰহণ করেছে। কৰ্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্ৰশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্ৰহণ করেছে সরকার। মঙ্গলদৈ য়ে স্কীল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। কেন্দ্ৰীয় সরকারের অনুমোদন পাওয়া যাবে। দরং জেলায় প্ৰচুর শাক-সব্জি উৎপাদিত হয়, সেখানে ‘ফাৰ্মাস হাব' গড়ে তোলা হবে। সেখানে খারুপেটীয়া সহ অন্যান্য অঞ্চলে প্ৰচুর পরিমাণ শাক-সব্জি উৎপাদিত হয়। বাজারের অভাব। তাই অসম সরকার স্পাইসজেট বিমান কোম্পানীর সঙ্গে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। অসমের শাক-সব্জি, লেবু, আদা প্ৰভৃতি এখন স্পাইসজেট বিমানের মাধ্যমে হংকং, দুবাই এবং লণ্ডণে রপ্তানি করা হচ্ছে। বৰ্তমানে খারুপেটীয়াতে ২৫ পয়সা কেজি দরে টমেটো এবং অন্যান্য শাক-সব্জি বিক্ৰী হচ্ছে। এবার অসমে শাক-সব্জি উৎপাদন করা কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সামগ্ৰী বিদেশের বাজারে পাঠাতে পারবে। ‘মাৰ্কেট লিংকিং' গড়ে দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্ৰী উদ্ভাবনী শক্তির ওপর জোর দিয়ে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, মন্ত্ৰী কেশব মহন্ত-কে নিয়ে আমেরিকা সফরের সময় তারা দেখেছেন, অসমের কলিতা সম্প্ৰদায়ের দুই যুবক আমেরিকার মতো উন্নত দেশে উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছেন। ষ্টাৰ্টআপ এবং ইনোভেশন-র কথা বলে মন্ত্ৰী জানান, উবের-র মতো বিশ্ব বিখ্যাত কোম্পানী নিজেদের কোনও গাড়ী ও ড্ৰাইভারও নেই, অথচ মাত্ৰ  উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ‘অ্যাপস' খুলে বিশ্বের বাজার দখল করেছে। গুগল'ও একই ভাবে বিশ্ব জুড়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। তিনি নিম্ন অসমের যোগীগোপার কথা উল্লেখ করেন, সেখানে এক মেগা প্ৰজেক্ট গড়ে তোলা হবে। বিধানসভায় অগপর রমেন্দ্ৰ নারায়ন কলিতা, কংগ্ৰেসের রকিবুল হোসেন প্ৰমুখ অভিযোগ করেন, বাজেট ভাষণের হাৰ্ড কপি দেওয়া হয় নি। যার জন্য তাদের অসুবিধা হয়েছে। রমেন্দ্ৰ নারায়ন কলিতা প্ৰশ্ন তোলেন রাজ্যে ই-বাজেট পেশ করা হল, সেই ই-বাজেটের সাংবিধানিক বৈধতা আছে কিনা, তা দেখা উচিত। ‘পেপারলেস' বাজেটের কথা উল্লেখ করে অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰ নাথ গোস্বামী বলেন, পেপারলেস বাজেট পেশ করার ফলে সরকারের খরচা কমেছে। পেনড্ৰাইভ-র মাধ্যমে বাজেটের পুরোটা তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যক্ষ গোস্বামী হিমাচল প্ৰদেশ সরকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, পেপার লেস বাজেট পেশ করার ফলে তাদের ৭ কোটি টাকা সাশ্ৰয় হয়েছে। সংসদীয় পরিক্ৰমা মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি বলেন, তাদের হাতে একশ হাৰ্ড কপি আছে। কারও প্ৰয়োজন পড়লে দেওয়া যেতে পারে। অগপর প্ৰবীন্দ্ৰ ডেকা বিধানসভায় দৃষ্টি আকৰ্ষণীমূলক প্ৰস্তাব উত্থাপন করে বলেন, তেজপুর কেন্দ্ৰীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিলচরের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অসমীয়া ভাষা শিক্ষার কোনও বিভাগ নেই, অথচ গৌহাটি এবং কোকরাঝাড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। ১৯৮৫ সালের অসম চুক্তির অন্যতম শৰ্ত ছিল দুটি কেন্দ্ৰীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং অসমীয়া ভাষা-সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্ৰ গড়ে তোলা, কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে অসমীয়া ভাষা শিক্ষা বিভাগই নেই। শিক্ষা মন্ত্ৰী সিদ্ধাৰ্থ ভট্টাচাৰ্য তা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, শিলচর আসাম বিশ্ববিদ্যালয়েঅসমীয়া ভাষা শিক্ষার বিভাগ নেই, তবে ডিফু ক্যাম্পাসে অসমীয়া ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। শিক্ষা মন্ত্ৰী জানান, রাজ্য সরকার এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অসমীয়া ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানাবে। আজ বিধানসভায় প্ৰেশ্নাত্তর পৰ্বে কংগ্ৰেসের কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ-র এক প্ৰেশ্নর জবাবে বনমন্ত্ৰী পরিমল শুক্লবৈদ্য জানান, বরাক উপত্যকায় পাথরের অভাবে কোনও রকম উন্নয়নমূলক কাজ-কৰ্ম স্তব্ধ হয় নি। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি উন্নয়নমূলক কাজ দ্ৰুত রূপায়নের জন্য যথারীতি পাথর সরবরাহের পারমিট দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কংগ্ৰেসের রেকিবুদ্দিন আহমেদ-র এক প্ৰেশ্নর জবাবে শিল্প বাণিজ্য মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি জানান, ‘এ্যাডভ্যােণ্টেজ আসাম' শীৰ্ষক বিনিয়োগ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল গুয়াহাটিতে। সেই মেলার জন্য রাজ্য সরকারের ব্যয় হয়েছিল ৪১,৬৫,৬০,৭৬৭.০০ কোটি টাকা। গত ২০১৮ সসালের ৩-৪ ফেব্ৰুয়ারি অনুষ্ঠিত এই মেলায় ৮,৭৭৭,৯৪ কোটি টাকার সমঝোতা চুক্তির স্বাক্ষরিত হয়েছিল বিভিন্ন কোম্পানীর সঙ্গে। এছাড়াও ১৪,৪৯১,৫৪ কোটি টাকার বিনিয়োগও কাৰ্যকরী হয়েছে। এই বিনিয়োগ মেলার জন্য বিজ্ঞাপন বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৯৭,৪৪,০৮২.০০ কোটি টাকা, হোটেল এবং খাদ্যর জন্য ব্যয় হয়েছিল ১,৬৯,৪৮,৭৩৭.০০ কোটি টাকা খরচা হয়েছিল। এআইইউডিএফ সদস্য আমিনুল ইসলামের এক প্ৰেশ্নর জবাবে গ্ৰামোন্নয়ন বিভাগের মন্ত্ৰী নব কুমার দলে জানান, জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পঞ্চায়েত এবং গ্ৰাম পঞ্চায়েত সমূহের নব নিৰ্বাচিত সদস্যদের সভা ডেকে কাৰ্যভার হস্তান্তর করার নিৰ্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বিধানসভায় বাজেট ভাষণের ওপর বিতৰ্ক শুরু হয়েছে। বিজেপির অশোক সিংহল, কংগ্ৰেসের দেবব্ৰত শইকিয়া, কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, অজন্তা নেওগ, মামুন ইমদাদুল হক চৌধুরী প্ৰমুখ বিতৰ্কে অংশ গ্ৰহণ করেন। বিরোধী দলপতি তথা কংগ্ৰেস পরিষদীয় দলের নেতা দেবব্ৰত শইকিয়া বলেন, অৰ্থমন্ত্ৰী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা দাবি করেছেন, যথাসময়ে উন্নয়নমূলক প্ৰকল্পগুলি বাস্তবায়িত হবে। হাতে মাত্ৰ দুমাস আছে। ২০১৮-১৯ সালের বাজেটের মাত্ৰ ৫০ শতাংশ টাকা ব্যয় করতে সমৰ্থ হয়েছে সরকার। শিক্ষা, সেচ, কৃষি, স্বাস্থ্য, দূৰ্যোগ প্ৰশমন এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি প্ৰভৃতির ক্ষেত্ৰে যে সব উন্নয়নমূলক প্ৰকল্পগুলি রূপায়ন করতে না পারলে জনসাধারণ উপকৃত হবে না। দুদিন আগেই সংবাদ মাধ্যমে প্ৰকাশ পায় ২০১৮-১৯ সালের অৰ্থ বছরে সেচ বিভাগে অৰ্থের অভাবে কয়েকটি প্ৰকল্পের কাজই শুরু করতে পারে নি। শইকিয়া বলেন, অৰ্থমন্ত্ৰী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা তার বাজেটে উল্লেখ করেছেন, বিগত তিন বছরে বাজেটের বহর ক্ৰমশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছিয়েছে। এই বৃহৎ পরিমাণ টাকা যথাসময় খরচা করতে না পারলে রাজ্যের জনকল্যাণমূলক কৰ্মসূচী স্তব্ধ হয়ে যাবে। বিরোধী দলপতি শইকিয়া অভিযোগ করেন, বিভিন্ন প্ৰকল্প ঘোষণা করেছেন কিন্তু বাস্তবায়নের কোনও মাপকাঠি বা সময় নিৰ্ধারণ করা হয় নি। বিজেপির অশোক সিংহল এ বাজেটকে উন্নয়নমূলক জনমুখী বাজেট বলে উল্লেখ করে বলেন, রাজ্যের সব জনগোষ্ঠীর মানুষের কল্যাণের এই বাজেট প্ৰস্তুত করা হয়েছে। কংগ্ৰেসের কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এই বাজেটকে দিশাহীন বাজেট বলে উল্লেখ করে বলেন, ব্যক্তিকেন্দ্ৰিক, আম জনতার স্বাৰ্থে বাজেট প্ৰস্তুত করা হয় নি। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সম্পৰ্কে বলেন ধৰ্মের ভিত্তিতে তা প্ৰস্তুত করা হয়েছে যা সংবিধান বিরোধী। খিলঞ্জীয়া মুসলিমদের উন্নয়নের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে বলেন, সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিভাগ থাকতে পৃথকভাবে এই বিভাগ খোলার কোনও অৰ্থই নেই বলে অভিযোগ করেন। পুরকায়স্থ বলেন, রাজ্যের মোট ৩০ শতাংশ বাঙালি হিন্দু, তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে বোকা বানানো হচ্ছে। এই বিলে বাঙালিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথায় বলা হয় নি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.