আড়াই বছরের দেব শিশুকে গরম পোষাক খুলে নেয় পুলিশ, রাজ্যে জুড়ে প্ৰতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ে বিধানসভায়
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটিঃ বিশ্বনাথ জেলার বিহালী কেন্দ্ৰের বরগাঙে মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়ালের গতকাল সভা ছিল। সভায় মুখ্যমন্ত্ৰীকে যাতে কেউ কালো পতাকা দেখিয়ে প্ৰতিবাদ করতে না পারে, তার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করে তোলা হয়েছিল। যে কেউ কালো পোষাক পড়লেই তাকে খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল । এমনকি সাংবাদিকদের সঙ্গে থাকা কালো ব্যাগও সভাস্থলে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় নি। সেখানে উপস্থিত নিরাপত্তা কৰ্মীরা সেখানকার সভায় উপস্থিত থাকা এক মায়ের কোলে উপবিষ্ট আড়াই বছরের শিশুর পরিহিত জ্যাকেটও খুলে নিয়েছিল পুলিশ, তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে তীব্ৰ প্ৰতিবাদের সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্ৰী এই ঘটনা তদন্তের আদেশ দেন। গতকালের এই অমানবিক ঘটনা তুলে ধরে আজ বিধানসভায় বিরোধীরা সরকারকে চেপে ধরে। কংগ্ৰেসের আব্দুল খালেক, রূপজ্যোতি কুৰ্মি বিধানসভায় মুলতুবি প্ৰস্তাব উত্থাপন করেন। বিধানসভার অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰ নাথ গোস্বামী তাদের অনুরোধ করেন, আজ বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের ওপর বিতৰ্ক ছাড়াও অন্যান্য বিষয় আছে, তাই তারা পরে যেন বিষয়টি উত্থাপন করেন। তাদের শুধু বিষয়টির প্ৰাসঙ্গিকতা নিয়ে দু এক লাইন বলার অনুমতি দেন। অধ্যক্ষ বলেন, বিষয়টি নিয়ে পূৰ্ণাঙ্গ আলোচনা করতে গেলে অন্তত ৪০ মিনিট সময় লাগবে। তাই তারা যেন পরে মুলতবি প্ৰস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। আব্দুল খালেক কালো পতাকার প্ৰসঙ্গ টেনে আসু সদস্যদের ওপর বিজেপির আক্ৰমণের কথা তুলে ধরেন বিহালীর ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, দেব শিশুকেও ছেড়ে দেয় নি পুলিশ, তার পরিহিত জ্যাকেটও খুলে নেওয়া হয়। এই ঘটনার সঙ্গে কংগ্ৰেসকে দোষারোপ করা হচ্ছে। থানার ভিতরে আসু কৰ্মীদের মারধর করার ঘটনাও নজিরবিহীন এর ঘটনায় কংগ্ৰেস জড়িত নয়। সংসদীয় পরিক্ৰমা মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি বারবার আসুর পক্ষ সমৰ্থন করে বলটি কংগ্ৰেসের দিকে ঠেলে দিয়ে বলেন, ৮৫৫ জনকে শহিদ করার মূলেই কংগ্ৰেস, কংগ্ৰেসের জন্য তাকে জেল খাটতেও হয়েছে। বিহালীর ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্ৰহণ করবে। শিশুটির দেহ থেকে গরম কাপড় খুলে নেওয়া হয়েছিল সেই প্ৰসঙ্গে মন্ত্ৰী বলেন, হয়তো বা শিশুটির গরম লেগেছিল তাই পোষাকটি খুলে নেওয়া হয়। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে কংগ্ৰেস সদস্যরা তীব্ৰ প্ৰতিবাদে ফেটে পড়ে। এমনকি প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী তরুণ গগৈর সঙ্গে ট্ৰেজারি বেঞ্চের হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা এবং অন্যান্যরা বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। সংসদীয় পরিক্ৰমামন্ত্ৰীকে বারবার শান্ত হয়ে বসার জন্য অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰ নাথ গোস্বামী অনুরোধ করলেও তা কাজে আসে নি। মন্ত্ৰী বারবার আত্মপক্ষ সমৰ্থন করে বক্তব্য রেখে বলেন, সরকার জাতি-মাটি-ভেটি রক্ষায় সব ধরণের প্ৰয়াস চালাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়ালের সদৃচ্ছাই সন্দেহ প্ৰকাশ করায় উচিত নয়। নলবাড়ির ঘটনা তুলে ধরে বলেন, আসু সদস্যদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। তিনি আসুর পক্ষ অবলম্বন করে বলেন, আসু অসম চুক্তি করেছে তাদের কথা বলার ও আন্দোলন করার অধিকার আছে। আসুর সঙ্গে সরকারের সম্পৰ্ক খারাপ করার পিছনে কংগ্ৰেসের হাত আছে বলে অভিযোগ করায় সঙ্গে সঙ্গে রূপজ্যোতি কুৰ্মি, আব্দুল খালেক, তরুণ গগৈ, কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ প্ৰমুখ প্ৰতিবাদে ফেটে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্ৰণের বাইরে চলে যায়। অধ্যক্ষ গোস্বামী বাধ্য হয়ে ১০ মিনিটের জন্য সদন মুলতুবি করে দেন। ১০ মিনিট পর বিধানসভা বসলে অধ্যক্ষ আজ মহাত্মা গান্ধীর তিরোধান দিবস উপলক্ষে তার প্ৰতি শ্ৰদ্ধা জ্ঞাপন করে সৰ্বসন্মত প্ৰস্তাব গ্ৰহণ করেন। আজ বিধানসভায় এআইইউডিএফ-এর হাফিজ বশির কাসিমী রাজ্যপালের ভাষণের উপর বিতৰ্কে বিধানসভায় সংশোধনী প্ৰস্তাব উত্থাপন করে রাজ্যের শান্তি শৃংঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। অগপর অতুল বরার পক্ষে প্ৰবীন্দ্ৰ ডেকা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্ৰতিবাদ করে বলেন, অসম চুক্তি নস্যাৎ করে কেন্দ্ৰীয় সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল দাখিল করতে চাইছে, তা কোনও ভাবেই তারা অগপ মেনে নেবে না। অসমের খিলঞ্জীয়ার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। বিজেপির দেবানন্দ হাজরিকা ভূপেন হাজরিকাকে ভারতরত্ন পুরস্কার দেওয়ায় সন্তোষ প্ৰকাশ করে বলেন, বাৰ্লিনের যুব মহোৎসবে ভূপেন হাজরিকা বিশ্ববিখ্যাত পল রবসন-র বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল। তাকে নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত গান রচনা করেছিলেন। বিজেপি সরকার অসমের সাৰ্বিক উন্নয়নের স্বাৰ্থে কাজ করে যাচ্ছে। দুৰ্নীতিপরায়নদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্ৰহণ করেছে। বিধানসভায় জিরো আওয়ারে কংগ্ৰেসের অজন্তা নেওগ অভিযোগ করেন, রাজ্যে শুধু কয়লা সিণ্ডিকেট নয় মাছ, মাংস, ডিম, তেল প্ৰভৃতির সিণ্ডিকেট চলছে। কয়লার প্ৰতি ট্ৰাক থেকে ১ লক্ষ টাকা করে তুলছে পুলিশ। পরিবহন বিভাগ, পুলিশ কয়লা সিণ্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। সরকারের ভাবমূৰ্তি বিনষ্ট হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্ৰী দুৰ্নীতির ক্ষেত্ৰ শূণ্য সহনশীলতা নীতি গ্ৰহণ করেছে। কিন্তু রাজ্যে জুড়ে ব্যাপক দুৰ্নীতি চলছেই। এই ব্যাপক দুৰ্নীতির জন্য সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এর জবাবে শিল্প মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি অভিযোগ করেন, কংগ্ৰেস আমোলে রাজ্যে জুড়ে সিণ্ডিকেট শুরু হয়েছিল। এই সরকার ক্ষমতায় এসে রাজ্যের সব চেকগেট ভেঙে দেয়। দুৰ্নীতির অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল দুন¹তির ক্ষেত্ৰ শূণ্য সহনশীলতা নীতি গ্ৰহণ করেছেন। দুর্নীতিপরায়ন অফিসারদের গ্ৰেপ্তার করেছে, আমিও একাংশ দুৰ্নীতি পরায়ন কৰ্মীকে গ্ৰেপ্তার করেছি। কয়লা কেলেঙ্কারী সম্পৰ্কে বলেন, কোল ইণ্ডিয়ার সঙ্গে আমাদের কথা চলছে, প্ৰয়োজনীয় কয়লা যাতে বাইরে না পাঠিয়ে এখানে কাজে লাগানো হয়। তিনি বলেন, বেলতলা, যোগীগোপা, কাছাড় প্ৰভৃতি জায়গায় জমা করা কয়লা প্ৰধানত মেঘালয় থেকে আসে, বিদেশে রপ্তানিও হয়। তাই এই কয়লা থেকে জিএসটির অধীনে কর পায় না। মেঘালয়ে এবং অসমের মাৰ্ঘেরিটার কয়লা নেপাল, ভূটান এবং বাংলাদেশে রপ্তানি হয়। রপ্তানি হওয়া সামগ্ৰীর ওপর কোনও জিএসটি লাগে না। তিনি বলেন, প্ৰতিটি কয়লার ট্ৰাক ভালোভাবেই পরীক্ষা করা হয়। নথি-পত্ৰে কারচুপি থাকলে সেই ট্ৰাকের মালিকের বিরুদ্ধে জরিমনা করা হয়। আজ বিধানসভায় করিমগঞ্জ জেলায় শোচনীয় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন, বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। তিনি বলেন, বছরের পর বছর করিমগঞ্জ জেলাকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ক্ৰমশ খারাপের দিক। বিদ্যুৎ মন্ত্ৰী তপন গগৈ স্বীকার করেন, বিদ্যুতের সামগ্ৰীক পরিস্থিতি এখনও ভালো হয় নি। তিনি বলেন, করিমগঞ্জ বিদ্যুতের জন্য যথারীতি বিহীত ব্যবস্থা গ্ৰহণ করবে। এআইইউডিএফ-র আমিনুল ইসলামের এক প্ৰেশ্নর জবাবে শিক্ষামন্ত্ৰী সিদ্ধাৰ্থ ভট্টাচাৰ্য বলেন, ইতিমধ্যে রাজ্যে ৯২ টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১১০ টি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১০৪ টি উচ্চতর মাধ্যমিক সমপৰ্যায়ের জুনিয়র কলেজ সহ ৩০৬টি বিদ্যালয়কে প্ৰাদেশিকীকরণ করার চূড়ান্ত প্ৰক্ৰিয়া চলছে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। কংগ্ৰেসের নুুরুল হুদার এক প্ৰেশ্নর জবাবে শিক্ষা মন্ত্ৰী বলেন, রাজ্যে ২২ লক্ষ ৮১ হাজার ৮৭৯ জন ছাত্ৰ-ছাত্ৰীর বিপরীতে শিক্ষকের সংখ্যা হচ্ছে ১ লক্ষ ৫ হাজার ৮৪৬ জন ছাত্ৰ-ছাত্ৰীর এবং শিক্ষকের অনুপাত হচ্ছে ২২ঃ১, উচ্চ প্ৰাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্ৰ-ছাত্ৰীর সংখ্যা হচ্ছে ৩২ লক্ষ ৯১১, শিক্ষকের সংখ্যা হচ্ছে ৪০ হাজার ৮৪১ এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্ৰ-ছাত্ৰী হচ্ছে ১০ লক্ষ, ২৬ হাজার ৩২৯জন শিক্ষক হচ্ছে ৫২ হাজার ৪১১, অনুপাত হচ্ছে ২০ঃ১, এবং উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্ৰ-ছাত্ৰীর সংখ্যা হচ্ছে ৪ লক্ষ ৮০ হাজাৰ ৮৬০ জন, শিক্ষক হচ্ছে ১৯ হাজার ৮৪৮ জন, অনুপাত ২৪ঃ১। শিক্ষামন্ত্ৰী বলেন, ২ হাজার ৬৮৩ টি প্ৰাথমিক বিদ্যালয় একজন শিক্ষককে দিয়ে চলছে।
বিহালীর ঘটনায় কালো পোষাক পড়ে বিধানসভায় প্ৰতিবাদ মরিয়নির বিধায়ক রূপজ্যোতি কুর্মী
কোন মন্তব্য নেই