মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল ডিব্ৰুগড় নিজ বাড়িতে মেজি জ্বালিয়ে রাজ্যের মানুষের মঙ্গল কামনা করলেন
- কংগ্ৰেস-বামপন্থীরা অপপ্ৰচার করছে, জাতি- মাটি-ভেটি রক্ষায় শেষ চেষ্টা করে যাব, অঙ্গীকার সৰ্বানন্দর
- নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংবিধান বিরোধী, উদ্বাস্তুদের আশ্ৰয় দানের কথা বললে ফলপ্ৰসূ হতঃ হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটিঃ
অসমীয়া পরম্পরাগত ভোগালি বিহু উৎসবে পবিত্ৰ অগ্নি সাক্ষী করে মেজি'তে অগ্নি প্ৰজ্জ্বলন করে সেই মেজি'তেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্ৰতিলিপি পুড়িয়ে রাজ্যের মানুষ এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। বিহু উৎসবেও প্ৰতিবাদী কণ্ঠ থেমে থাকলো না। মঙ্গলবার গোয়ালপাড়া, মেরাপানী, নলবাড়ি, তেজপুর, ওদালগুড়ি, মাৰ্ঘেরিটা, তামুলপুর প্ৰভৃতি জায়গায় পবিত্ৰ মেজি'তে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্ৰতিলিপি জ্বালানো হল। বঙ্গাইগাঁওয়ে সদ্য প্ৰাক্তন মন্ত্ৰী ফণি ভূষণ চৌধুরী মেজি'তে প্ৰতিলিপি জ্বালালেন। উরুকার দিন থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্ৰতিবাদে কৃষক মুক্তি সংগ্ৰাম সমিতির নেতা অখিল গগৈ সতীৰ্থদের নিয়ে গুয়াহাটির সোসলে ২৪ ঘণ্টা অনশন ধৰ্মঘটে বসেছিলেন, আজ অৰ্থাৎ ১৫ জানুয়ারি প্ৰত্যাহার করেন। মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল এদিন ডিব্ৰুগড়ে নিজের লক্ষ্মীনগরস্থিত নিজ বাড়িতে অগ্নি সাক্ষী রেখে মেজি প্ৰজ্বলন করে রাজ্যবাসীর সুখ শান্তি ও মঙ্গল কামনা করেন। এদিন মুখ্যমন্ত্ৰী নগাঁওতে গেলে কালো বেলুন উড়িয়ে প্ৰতিবাদ করেন জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্ৰ পরিষদরে ছাত্ৰরা। নেহেুরুবালিতে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, রাজ্যে কংগ্ৰেস এবং বামপন্থীরা অপপ্ৰচার চালিয়ে রাজ্যে বিভ্ৰান্তের সৃষ্টি করছে। শেষ পৰ্যন্ত আমি জাতি-মাটি-ভেটি রক্ষায় চেষ্টা করে যাব। রাজ্যের বৰ্তমান পরিস্থিতিতে আসুর সহযোগিতা কমনা করেন তিনি। কৃষক মুক্তি সংগ্ৰাম সমিতির অনশন স্থলে উপস্থিত ছিলেন গৌহাটি হাইকোৰ্টের বিশিষ্ট আইনজীবি তথা নাগরিক অধিকার সুরক্ষাসমিতির উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী। চৌধুরী এদিন ‘নয়া ঠাহর'কে বলেন, ভারত ধৰ্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্ৰ। ধৰ্মের ভিত্তিতে কোনও আইন হতে পারেনা। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে কেবল হিন্দু ধৰ্মাবলম্বী মানুষদের কথায় উল্লেখ করা হয়েছে। তাই রাজ্য সভায় কোনদিন পাশ হবে না জেনেও বিজেপি সরকার রাজ্য সভায় বিলটি পেশ করেছে। শুধু মিথ্যা প্ৰতিশ্ৰুতি দিয়ে ভোটের লক্ষ্যে এই বিল, রাজ্যের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশেষ করে বাঙালি-অসমিয়ার মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, জাতিগোষ্ঠী উল্লেখ না করে শুধু উদ্বাস্তুদের নিপীড়নের কথা বলে তাদের আশ্ৰয় দানের কথা বলা হত, তবে তা অনেক মানবীয় এবং ফলপ্ৰসূ হত। রাষ্ট্ৰসংঘের নীতি-নিৰ্দেশনায় বলা হয়েছে কোনও দেশে যে কোনও জাতি-গোষ্ঠী নিৰ্যাতিত-নিপীড়িত মানুষ যদি বাধ্য হয়ে অন্য কোনও রাষ্টে্র আশ্ৰয় গ্ৰহণ করে, তবে তা মানবিকতার স্বাৰ্থে আশ্ৰয় দিতে হবে। সেক্ষেত্ৰে ডেট লাইন বা ভিত্তি বছর বলে কিছু থাকবে না। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে উদ্বাস্তুদের আশ্ৰয় দানের বিষয়টি থাকলে কোনও আপত্তি উঠতো না। সারা বিশ্বে উদ্বাস্তু সমস্যায় জৰ্জরিত জাতিগত প্ৰশ্ন উঠছে না। এদিন দিশপুর মানবেন্দ্ৰ শৰ্মা কমপ্লেক্সে প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী তরুণ গগৈ কংগ্ৰেস সভাপতি রিপুন বরা প্ৰমুখ মেজি জ্বালিয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দেন। গগৈ বলেন, মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল ‘দুৰ্বল মুখ্যমন্ত্ৰী' তার জন্যই কেন্দ্ৰ আইনটি চাপিয়ে দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্ৰীর সুমতির জন্যও প্ৰাৰ্থনা করেন তারা। অখিল গগৈ বলেছেন, কংগ্ৰেস দল বিলটির বিরোধিতায় দুমুখো নীতি গ্ৰহণ করেছে। এদিকে সুপ্ৰিমকোৰ্টে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি ড০ হীরেন গোহাঁইয়ের নেতৃত্বাধীন নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিরোধী মঞ্চ সুপ্ৰিমকোৰ্টে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি বাতিল করার জন্য জনস্বাৰ্থ সম্পৰ্কিত আবেদন পেশ করেছিলেন। রিট পিটিশন নম্বর (সিভিল) ২০/২০১৯। সেই আবেদন গ্ৰহণ করে সুপ্ৰিমকোৰ্টের প্ৰধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নেতৃত্বাধীন বিচারক অশোক ভূষণ, বিচারক সঞ্জয় কিষাণ কাউল জানিয়েছেন, তাঁরা আবেদনটি গ্ৰহণ করেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি রাজ্যসভাতে পাশ হওয়ার পরেই তারা উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্ৰহণ করবে। আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন, বরিষ্ঠ আইনজীবী কমল নারায়ণ চৌধুরী, আইনজীবী মনীষ গোস্বামী, আইনজীবী রামেশ্বর প্ৰসাদ গোয়েল এবং আইনজীবী অপূৰ্ব কুমার শৰ্মা। সুপ্ৰিমকোৰ্টের ‘স্ক্যানারে' চলে এলো সংশোধনী বিলটি। অপরদিকে ৬ জনগোষ্ঠীকে তফশিল ভুক্ত দেওয়ার ক্ষেত্ৰে কেন্দ্ৰ উচ্চ পৰ্যায়ে কমিটি গঠন করে দিয়েছিল। সেখান থেকে চেয়ারম্যান সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদত্যাগ করায় কমিটির অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অসমিয়া জনগোষ্ঠীর ভাষা সংস্কৃতি, বিধানসভায় আসন সংরক্ষণ প্ৰভৃতি বিষয় সংক্ৰান্ত অসম চুক্তির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ কাৰ্যকরী করার ব্যাপারটিও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মতো মরাণ, মটক, সুতীয়া, কোচ রাজবংশী, তাই আহোম এবং চা জনগোষ্ঠীকে তফশিল ভুক্ত করার বিষয়টিও বিশ-বাঁও জলে পড়ল, কারণ সংবিধান সংশোধন ছাড়া তফশিল ভুক্ত করা সম্ভব নয়, তাই বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে গেল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।









কোন মন্তব্য নেই