হোক না এবারের পুজো একটু অন্যরকম
সিঙ্গাপুর থেকে শ্যামলী লাহা হালদার
এবারের পুজো হোক একটু অন্যরকম। স্যোশাল মিডিয়াতে
বারবার এই ক্যাপশনে একটি ভিডিও ভেসে আসছে। বেশ কয়েকবার দেখলামও সেই ভিডিও। ভাল
লাগল কিনা জানি না তবে একটা অজানা আবেগ কাজ করল! একটু খুলে বলি তবে কি ছিল সেখানে।
কলকাতার কোনও এক বিখ্যাত পুজো সংস্থা এবার কিংবা হয়তো কোনও এক বছর পুজোর দশমীতে সেইসব
মানুষদের একত্ৰিত করেছিল দেবী মাকে সিঁদুর দানের জন্য যাদের জীবন থেকে সিঁদুরের
লাল রং এক্কেবারের জন্য ফিকে হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন বয়সের সেইসব দুৰ্গা মায়েরা
তাঁদের নিজস্ব সংগ্ৰামকে সকল বাধাকে দূরে সরিয়ে মেতে ওঠে সিঁদুর খেলায়। দেখে ভাল
লাগল উত্তম এই চিন্তাভাবনাকে। ভালো লাগে তার কারণ কোথাও যেন নিজের মনের সঙ্গে একটা
মিল পাই। মন নয় বরং বলা ভালো নিজের জীবনের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকে প্ৰতিবছর
মহাষ্টমীর দিন আমার শাশুড়ি মাকে আমি নিয়ে যাই অঞ্জলি দিতে। শ্বশুরমশাই গত হওয়ার
পর থেকে তিনি আর পুজোর সময় কাউকে মুখ দেখাতে ভালবাসতেন না। হয়তে নিজেকে অসহায় ভেবে
কিংবা একা লাগে, জানি না কি কারণ তবে
সেবার ও হতো না এটুকু জানি। সারা বছর আমরা দুজন দুজনের চরম শত্ৰু হলেও পুজোর এই কদিন আমরা পরম বন্ধু। আবার তিনিও
আমাকে নিয়ে দশমীতে মাকে বরণ করাতে নিয়ে যান। একটা সময় ছিল তিনিও মা দুৰ্গাকে বরণ করতেন।
কিন্তু গত কয়েক বছর হল ঈশ্বর তাঁর কাছ থেকে সেই আনন্দ চিরদিনের মতো ছিনিয়ে
নিয়েছেন। তাই সেই অপূৰ্ণ আশা তিনি আমার কপালে গালে লাগানো লাল রঙের মধ্যে দিয়ে
উপভোগ করতে চান। আশ্চৰ্য ব্যাপার মাকে সিঁদুর দানের পর তিনিই প্ৰথম জন যিনি আমার
গাল কপাল লাল রঙে রাঙিয়ে দেন। আর প্ৰতিবারই এই সময় আমি নিজেকে ভিষণ অসহায় বোধ করি।
আমার শাশুড়ি মাকে সিঁদুর না ছোয়াতে পারার জন্য। আমি দেখি তাঁর চোখ কেমন করে
চিকমিক করে ওঠে। কিন্তু আমি নিরুপায়। এই বিজ্ঞাপন আর ভিডিওটি দেখার পর বারেবারে
মনে হতে লাগল সত্যিই তো আমিও তো পারতাম তাঁর গালে কিংবা কপালে লাল রঙ ছুইয়ে দিতে।
হয়তো এবছর পারবো!
এবার পুজো তাই হোক না একটু অন্যরকম সবার জন্যে।
সেইসব দেবীদের জন্যে। যারা হয়তো এরমধ্যেই ক্যালেন্ডার দেখে হিসেব করে পুজোর
কেনাকাটা থেকে কিছুটা ব্যাক ফুটে রয়েছেন। কারণ এই বছর হয়তো তাঁদের পুজো অতোটা
সুখকর হবে না পিরিওডের পেটে ব্যাথার কারণে। ছোটবেলা থেকেই আমাদের সেখানো হয়েছে, এইকটা দিন পুজোর ঘরে যেতে নেই, পুজোর সামগ্ৰী ছুঁতে নেই। তাহলে বছরে একবারের জন্য আসা মা
দুৰ্গাকে কি একটি বারের জন্যেও দেখা যাবে না?
পিছিয়ে
যাবে অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়া এক বছরের জন্য?
কি ভরসা
পরের বছরও যে পুজোর সময় পিরিয়ড ফিরে আসবে না?
তাহলে
কি বছরের পর বছর অঞ্জিল দিতে পারবে না সেইসব মেয়েরা? লোকে বলে বাচ্চা না হলে সেই সব মেয়েদের মুখ দেখে শুভ কাজে যাওয়া বারণ। আবার এই
পিরিয়ডস বন্ধ হলেই তো মেয়েদের মা হওয়ার পথে যাত্ৰা শুরু হয়। তার মানে তো পিরিয়ডস
শুভ! একটা শুভ জিনিস সঙ্গে নিয়ে একটা শুভ কাজে যুক্ত না হতে দেওয়ার কোনও মানেই হয়
না। এবারের পুজো তাই হোক না সবার সাথে,
সবাইকে
নিয়ে, সবার মাঝে। তার কারণ, ঢাক ও বলে বারবার,
‘ঠাকুর
থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসৰ্জন’। তাই
বিসৰ্জনের বাদ্যি বাজার আগে আসুন সকলে মিলে কিছু ভালো কাজ করে যাই। অন্যের জন্য নয়, একান্ত নিজের জন্য। যাহা সত্যি, তাহাই শক্তি-এই কথাটি আমিও বিশ্বাস করি।
কোন মন্তব্য নেই