সৌগত মণ্ডল, কলকাতাঃ
বাঙালির সেরা উৎসব
দুৰ্গাপুজো। আনন্দের উৎসব দুৰ্গাপুজো। কিন্তু এবারে অসমের প্ৰায় ৩৮ লক্ষ বাঙালির
মনে কোনও আনন্দের ছিঁটেফোঁটাও নেই। তাঁরা জানেন না নিজেদের জন্মভূমি অসমে তাঁরা আর
কতদিন থাকতে পারবেন। সুপ্ৰিম কোৰ্ট জাতীয় নাগরিক পঞ্জির এই বাদ পড়া প্ৰায় ৪০ লক্ষ
মানুষের কথা ভেবে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় নতুন করে আবেদনের সুযোগ দিতে নিৰ্দেশ
দিয়েছেন এনআরসি কৰ্তৃপক্ষকে। কিন্তু পরপর দুবারেও তালিকায় নাম ওঠেনি যেখানে,
তারপরে এবারেই যে নাগরিক হিসেবে নিজেদের স্বীকৃতি ফিরে পাবেন এই নিশ্চয়তা তো কেউ
দিচ্ছে না। তাই স্বাভাবিকভাবে মনে আনন্দ নেই অসমের আপামর বাঙালির। তার জন্যেই
শুধুমাত্ৰ এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জির ধাক্কা সামলাতে না পেরে গুয়াহাটি-সহ
সমগ্ৰ অসমেই দুৰ্গাপুজোর সংখ্যা কমেছে প্ৰায় শতাধিক। এমনকি গুয়াহাটি শহরে
পানবাজারে বা জিএমসি-র সামনে ফুটপাথে বা মালিগাঁওয়ের বাঙালিটোলা এলাকায় বিশ্বকৰ্মা
পুজোর সময় থেকেই যে পুজো শপিং-এর ভিড় শুরু হয়, তাও এবারে কাৰ্যত অদৃশ্য। কারণ
ফুটপাথে যে সমস্ত হকাররা থাকত, তারা তো গত জুলাই মাসে নাগরিকপঞ্জির দ্বিতীয় তালিকা
প্ৰকাশের পর থেকেই স্ৰেফ ‘মিসিং’। পশ্চিমবঙ্গের পরেই ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি
সংখ্যক দুৰ্গাপুজো হয় প্ৰতিবেশী রাজ্য অসমে। এমনকি প্ৰতিবেশী রাষ্ট্ৰ বাংলাদেশের
থেকেও সংখ্যাটা অনেক বেশি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্ৰ ২০১৭ সালেই গোটা অসমে
মোট দুৰ্গাপুজোর সংখ্যা ছিল প্ৰায় ১৫০০০-এরও বেশি। যার মধ্যে শুধুমাত্ৰ গুয়াহাটি
শহরেই ছোট ও বড় মিলিয়ে মোট দুৰ্গাপুজোর সংখ্যা পাঁচশোরও বেশি। বিশেষ করে অসমের
বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায় তো প্ৰায় প্ৰতি পাড়াতেই এত বছর চোখে পড়ত একটি করে
ছোট বড় দুৰ্গাপুজো। এবারে তার মধ্যে অন্তত ৩০টি পুজোর উদ্যোক্তারাই কেউ বাংলায়,
কেউ বা বিহারে দৌড়েছেন ১৯৭১ সালের আগেও যে তাঁরা এই দেশের বাসিন্দা ছিলেন তার প্ৰমাণ
খুঁজে বের করতে। এমনকি মূৰ্তি গড়বেন যে পটুয়ারা, তাঁরাও ভিনরাজ্যে দৌড়ে
বেড়াচ্ছেন পূৰ্বপুরুষের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াতে। তাই পুজোর জন্যে চাঁদা তোলা বা
মণ্ডপ বানানোর থেকে এখন তাঁদের কাছে সবচেয় বেশি জরুরি হল পুজোর কয়েকদিন আগেই শুরু
হতে চলা নাগরিকপঞ্জিতে নাম তোলার জন্যে শেষ লড়াইয়ের প্ৰস্তুতি। এর পাশাপাশি রয়েছে
নাগরিকপঞ্জিতে নাম না ওঠার প্ৰতিবাদে আন্দোলনে নামার ‘অপরাধে’ অসম সরকারের নিৰ্দেশ
বিভিন্ন জেলায় পুলিশের হাতে নিকট আত্মীয়দের গ্ৰেফতার হয়ে কারাবন্দী থাকার
দুশ্চিন্তাও। প্ৰিয়জনেরা যখন শিকড়ের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে কারাবন্দী হয়ে
রয়েছে, সেখানে পরিবারের লোক কোন আনন্দে মাতবে দুৰ্গাপুজোর উৎসবে? তাই একেবারেই
আনন্দে নেই অসমের প্ৰায় ৪০ লক্ষ বাঙালি।
কোন মন্তব্য নেই