Header Ads

প্ৰয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ী


প্ৰাক্তন প্ৰধানমন্ত্ৰীর মৃত্যুতে দেশ জুড়ে ৭ দিনের শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত কেন্দ্ৰীয় সরকারের,  ২২ তারিখ পৰ্যন্ত জাতীয় পতাকা অৰ্ধনমিত থাকবে

অমল গুপ্তঃ গুয়াহাটিঃ
চার পাশে মূল্যবোধের অবক্ষয়, নীতিহীন রাজনীতির রাজত্ব, এই ভয়াবহ ক্ষয়িষ্ণু পরিস্থিতির মাঝে মূল্যবোধের রাজনীতি করতেন এক জন স্বপ্নদ্ৰষ্টা, নিৰ্ভীক, নিষ্ঠাবান এবং সৰ্বোপরি একজন মানব দরদী, সেই প্ৰাক্তন প্ৰধানমন্ত্ৰী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে হারালো দেশ। অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ, হিন্দু-মুসলিম, খ্ৰীষ্টান প্ৰভৃতি জাতিগোষ্ঠীর স্পষ্ট বিভাজন। সেই বিভাজনের উেল্টো পথে হেঁটে জাত পাত, দল মত নিৰ্বিশেষে সবাইকে পাশে নিয়ে দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, মধ্য প্ৰদেশের গোয়ালিয়রের সাধারণ গরিব পরিবারের সন্তান অটলবিহারী বাজপেয়ী। চিন্তার দূরদৰ্শিতা এবং বাগ্মিতার জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছিলেন। বাবা স্কুল শিক্ষক কৃষ্ণ বিহারী বাজপেয়ী, মা কৃষ্ণা দেবীর সন্তান অটলবিহারী বাজপেয়ী, কোনও দিন ভাবেন নি রাজনীতিতে আসবেন। সাহিত্য সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা পেশা হিসাবে নিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন। ১৯২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর পবিত্ৰ বড় দিনে তাঁর জন্ম। সময় ও সুযোগের অভাবে বিবাহিত জীবনের স্বাদ পান নি তিনি। সেই বাজপেয়ী দেশের তিন তিন বার প্ৰধানমন্ত্ৰীর মসনদে বসে দেশকে শক্তিশালী হিসাবে গড়ে তুলে সাৰ্বিক উন্নয়নের পথ দেখিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে মাত্ৰ ১৩ দিন প্ৰধানমন্ত্ৰীর দায়িত্ব সামলিয়েছিলেন, ১৯৯৮ সালে ১৩ মাস এবং ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল পৰ্যন্ত ৫ বছর প্ৰধানমন্ত্ৰীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন সফলতার সঙ্গে। ২০০৯ সালে হৃদরোগে আক্ৰান্ত হন। গত ১১ জুন এমস-এ ভৰ্তি হয়েছিলেন, কিডনি, ডায়বেটিক, মুত্ৰ সংক্ৰমণ প্ৰভৃতি রোগে আক্ৰান্ত হয়ে তার বাকশক্তি চলে যায়। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টা ৫ মিনিটে ৯৪ বছর বয়সে তাঁর দীৰ্ঘ সফল জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। তাকে লাইফ সাপোৰ্ট সিষ্টেমের মধ্যে রাখা হয়েছিল এমস-এ। গতকাল স্বাধীনতা দিবসের দিন থেকেই তার অবস্থার অবনতি ঘটে। প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদি গতকাল রাতেই এমস-এ ছুটে যান। বিজেপির আজ দেশের ১৯টি রাজ্যে ক্ষমতাসীন। অটলবিহারী বাজপেয়ী ১৯৮০ সালের আগে জনসংঘ প্ৰতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর হাত দিয়েই ভারতীয় জনতা পাৰ্টির সূচনা হয়। ১০ বার লোকসভা এবং ২ বার রাজ্যসভার সদস্য বাজপেয়ীকে তাঁর জন্মদিনে ‘ভারত রত্ন' সন্মানে ভূষিত করা হয়। তিনি শ্ৰেষ্ঠ সাংসদ হিসাবে সন্মানিত হয়েছিলেন। তার আগে তাকে ‘পদ্মবিভূষণ' সন্মানেও ভূষিত করা হয়েছিল। তাঁর জন্মদিনকে কেন্দ্ৰীয় সরকার ‘গুড গৰ্ভনেন্স ডে হিসাবে উদযাপন করে আসছে। তিনিই প্ৰথম দেশে অকংগ্ৰেসী মন্ত্ৰীসভা করে প্ৰধানমন্ত্ৰীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দল ও রাজনীতির উৰ্দ্ধে রেখে দেশের সেবা করেছিলেন। ‘হার মানবো না, কারও কাছে নতি স্বীকার করবো না, দেশের স্বাৰ্থের সঙ্গে আপোষ করবো না' এই ছিল তাঁর জীবনের মন্ত্ৰ। আসমুদ্ৰ হিমাচলকে ফোর লেন সড়ক সংযোগ ঘটিয়ে গ্ৰাম ভারতের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছিলেন। রাজস্থানের পোখরাণ মরুভূমিতে পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়ে বিশ্বের দরবারে দেশের সন্মানকে তুলে ধরেন। ‘প্ৰধানমন্ত্ৰী গ্ৰাম সড়ক যোজনা' তারই সৃষ্টি। উত্তর পূৰ্বাঞ্চলকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ডোনার মন্ত্ৰক স্থাপন করেছিলেন তিনি। অসমের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পৰ্ক ছিল। তিনি নুমলীগড় শোধানাগার রাষ্টে্ৰর উদেশ্য উৎসৰ্গ করেন, ব্ৰহ্মপুত্ৰের উপর তৃতীয় ‘নরনারায়ণ' সেতুও রাষ্ট্ৰের উদেশ্য উৎসৰ্গ করেছিলেন। এই প্ৰতিবেদক সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্ৰধানমন্ত্ৰী বাজপেয়ীর সাংবাদিক সন্মেলন কভার করার সৌভাগ্য অৰ্জন করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল এক শোকবাৰ্তাই বলেছেন, দেশবাসী এক যুগদ্ৰষ্টাকে হারালো। তিনি আজ দিল্লীতে গিয়েছেন বাজপেয়ীর শোকসভায় অংশ গ্ৰহণ করার জন্য। প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদি শোক প্ৰকাশ করে বলেছেন, বাজপেয়ীর মৃত্যুতে দেশের বড় ক্ষতি হল, শূণ্যতার সৃষ্টি হল, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, সংগঠনকে বটবৃক্ষে পরিণত করেছিলেন বাজপেয়ী। রাষ্ট্ৰপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেছেন, দেশ আজ মহান নেতাকে হারালেন। পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্ৰী মমতা ব্যানাৰ্জি বলেছেন, বাজপেয়ী জী মূল্যবোধের রাজনীতি করতেন যার সঙ্গে বৰ্তমান বিজেপি নেতাদের অনেক ফারাক। প্ৰাক্তন প্ৰফুল্ল কুমার মহন্ত দিল্লীতে গেছেন। মহন্তর সঙ্গে বাজপেয়ীর সমধুর সম্পৰ্ক ছিল। অসম আন্দোলনকে নীতিগতভাবে সমৰ্থন করে এক গ্ৰন্থ লিখেছিলেন বাজপেয়ী। প্ৰাক্তন প্ৰধানমন্ত্ৰীর মৃত্যুতে দেশ জুড়ে ৭ দিনের শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত কেন্দ্ৰীয় সরকার। আগামী ২২ তারিখ পৰ্যন্ত জাতীয় পতাকা অৰ্ধনমিত থাকবে এবং সব ধরণের সরকারি অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা হবে। রাজ্যপাল জগদীশ মুুখি, প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী তরুণ গগৈ, স্বাস্থ্যমন্ত্ৰী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা, পুত্তমন্ত্ৰী পরিমল শুক্লবৈদ্য বিরোধী দলপতি দেবব্ৰত শইকিয়া, প্ৰদেশ কংগ্ৰেস সভাপতি রিপুণ বরা, এআইইউডিএফ সভাপতি বদরুদ্দিন আজমল প্ৰমুখ রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিবৰ্গ শোক প্ৰকাশ করেন।আগামী কাল অন্ত্যেষ্টিক্ৰিয়া, দিল্লী যমুনা নদীর পারে নির্মাণ করা হবে সমাধিক্ষেত্ৰ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.