বন্যা বিধ্বস্ত কেরালা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিভীষিকা
আশীষ কুমার দে, বেঙ্গালুরু ঃ

সাধারণত মৌসুমী বায়ু কেরালায় প্রবেশ করার ফলে জুন -জুলাই মাসে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় যা আরো শক্তিশালী হয় দক্ষিণ - পশ্চিম মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের আগমনে, তার পরবর্তীতে খুব একটা বৃষ্টি হয় না ।
ভারতীয় মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের ফলে বৃষ্টিপাতের বিভাজন হয় এক মনসুন ট্রাফ ( গভীর নালা ) এর মাধ্যমে, এই ট্রাফের সৃষ্টি হয় সমুদ্রের উপর সূর্যের তাপ ও নিম্নচাপের ফলে । এই ট্রাফের অক্ষ দোদুল্যমান হয়ে থাকে হিমালয়ের পাদদেশ এবং মধ্য ভারতের মাঝে । স্বাভাবিক অবস্থায় এই ট্রাফ সম্প্রসারিত হয়ে থাকে উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূর্ব- উপকূলবর্তী ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত । এই সময়ে মধ্য ভারতে ও পূর্বউপকূলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে । যখন এই ট্রাফ উত্তরে সরে যায় তখন এই মৌসুমী বায়ুপ্রবাহ কে ভাঙ্গা অধ্যায় (Breaking phase) বলা হয় । এই সময় হিমালয়ের পাদদেশ ছাড়া অন্যত্র অল্প অল্প বা একেবারেই বৃষ্টি হয় না ।সক্রিয় অধ্যায় (Active phase) তখনই হয় যখন এই ট্রাফ দক্ষিণ দিকে তার স্বাভাবিক অবস্থানে চলে যায় ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় দক্ষিণ পেনিনসুলায় । কেরালায় 8-16 আগস্টের মধ্যে দুই পর্যায়ে রাজ্য জুড়ে বৃষ্টি হয়েছিল । কিন্তু 10 আগস্টের আগের বৃষ্টিপাতকে স্বাভাবিক ধরা হয়েছিল ।অস্বাভাবিক চক্র (Atypical cycle ) , আশ্চর্যজনক ভাবে 14 আগস্টের পরের দ্বিতীয় পর্বের বৃষ্টিপাতের সময় মনসুন ট্রাফ পশ্চিমাঞ্চলের দিকে স্থিতিশীল ছিলনা, তা দুলছিল উত্তর -দক্ষিণ অক্ষে যা স্বাভাবিক অবস্থান নয় । 13 আগস্টের পরে এই অস্বাভাবিক অবস্থান দ্বিতীয় পর্যায়ের বৃষ্টির কারণে সারা রাজ্যের সব জলাধার ও নদীতে জলস্ফীতি হয় , বাঁধ ভাঙার আশঙ্কায় কতৃপক্ষ লকগেট গুলি খুলতে বাধ্য হন । 8-14 আগস্ট এর মধ্যে চোদ্দোটি জেলায় স্বাভাবিকের থেকে অধিক বৃষ্টি শুরু হয় । সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলি হল; ইদ্দুকি, ওয়েনাড়, মল্লাপুরম, কোঝিকোড় এবং পাল্লাকাড় , এই জেলাগুলিতে স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশী বৃষ্টি হয়েছিল ।এসময় যদিও ছয়টি রাজ্য বন্যার কবলে, 41% জেলাগুলিতে এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম ।এতসত্বেও , কেরালার এই বিধ্বংসী বন্যার কারণে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব হতো, যদি কেরালা রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নীতি থাকতো । যে রাজ্যে 44টি নদী ও 61টি বাঁধ আছে এবং বাৎসরিক বৃষ্টির পরিমাণ বেশী, সে রাজ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রন ও প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেই ভাবা যায় না । জেলাস্তর থেকে পঞ্চায়েত পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামো নেই । যা অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও বিহারে যথেষ্ট উন্নত ।পরিবেশ সংরক্ষণ আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ট দেখিয়ে নির্বিচারে চলছে বন ধ্বংস আন্তর্যাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সংবেদনশীল স্থানে নির্মিত হয়েছে আকাশচুম্বী অট্টালিকা, প্রাকৃতিক জল নির্গমনের পথ অবরুদ্ধ ।তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই বিধ্বংসী বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি না থাকায় আজকের এই দুর্দশার শিকার রাজ্যের কয়েক লক্ষ বাসিন্দা । এই রাজ্যের জনজীবন স্বাভাবিক হতে যথেষ্ট সময় ও অর্থ প্রয়োজন । আশঙ্কা একটাই পুনর্বাসন করতে গিয়ে আবার আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয় ।
কোন মন্তব্য নেই