Header Ads

ইমরান ফিরেছেন, ফিরবে ক্রিকেটও


পিনাক দত্ত

২২ বছর আগে প্ৰথমবার তিনি যখন রাজনীতিতে এসেছিলেন তখন তিনি সহস্ৰজনের মনের নায়ক৷ রোল মডেল৷ পাকিস্তানকে প্ৰথম বিশ্বকাপ তুলে দেবার পর ভগবানতুল্য হয়ে ওঠেছিলেন ইমরান খান৷ শুধু প্ৰতিবেশী পাকই নয়, এদেশেও কিং খানের সমৰ্থক হু-হু করে বাড়তে থাকে৷ দেশ ছাড়িয়ে আন্তৰ্জাতিক হয়ে যান তিনি৷ তখন ক্রিকেটে সে পরিমাণ অৰ্থ না থাকলেও যশ-খ্যাতি তো ছিলই৷ তাই রাতারাতি এক ক্রিকেটার থেকে, মহানায়কে বদলে যান ইমরান৷ বিশ্বকাপ জেতার পর ক্রিকেট ছেড়ে দেন তিনি৷ সমাজ-সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ক্রমশ৷ ক্যান্সার হাস্পাতাল, শিক্ষার প্ৰসারে সৰ্বোচ্চ প্ৰাধান্য দেন৷ নতুন রাজনৈতিক দল তেহরিক-এ-ইনসাফ গড়ে পুরোদস্তুর রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান৷ রাজনীতির পঙ্কিলতা তাঁর হিম্যান ইমেজ ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারে জেনেও, একাধিক বিকপ্ল তাঁর আশপাশে ঘোরাফেরা করছে দেখেও নিরাপদ দূরত্বে সরে যাননি তিনি৷ দেশ তাঁকে চাইছে, তাঁর দায়িত্ব আছে পাকিস্তানের প্ৰতি৷ এবং শুধু একটা বিশ্বকাপ ট্ৰফি দিয়ে সে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায় না৷ ইমরান সেটা জানতেন৷ আর জানতেন বলেই শূন্য সম্ভাবনাকে সামনে নিয়েও নতুন লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি৷ ঠিক যেভাবে সাদামাটা একটা দলকে বিশ্বসেরা করে দিতে পেরেছিলেন, ঠিক সেভাবেই জরাজীৰ্ণ পাক রাজনীতি থেকে যাবতীয় দুৰ্নীতি মুছে ফেলে সুষ্টু একটা দেশ গড়ার পণ নেন সতীৰ্থদের ক্যানে বা কাপ্তান৷ হ্যাঁ, ইমরানের ডাকনাম ছিল ক্যানে৷ তাঁর কথায় ওঠা-নাম করত গোটা দল৷ শুধু দলই নয়, পাকিস্তান ক্রিকেটে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সৰ্বেসৰ্বা৷ আর তাই তিনি ক্যানে৷ কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পর একা হয়ে যান ইমরান৷ গোটা পৃথিবীতে যার এত সমৰ্থক, এরা সব, তাঁর কাছের লোক, বন্ধু-বান্ধবের প্ৰায় সবাই সরে আসেন তাঁর থেকে দূরে৷ সবাই যে নিরাপদ-নিশ্চিন্ত জীবন যাপন চায়৷ অযথা ঝামেলায় জড়িয়ে লাভ কী? বলা বাহুল্য ঘনিষ্ঠ মহলের অনেকে তখন তাঁকে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারও পরামৰ্শ দিয়েছিল৷ কিন্তু বাইশগজের মতোই ইমরান  তাঁর আস্থায় অটল৷ দৃঢ় প্ৰত্যয়৷ বিশ্বকাপ জেতা একটা দেশকে বিশ্বে প্ৰতিষ্ঠিত করতে হবে এবং এবার আর বাইশ গজের লড়াইয়ে নয়৷ আৰ্থিক প্ৰতিষ্ঠা৷ রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী একটা দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে পাকিস্তানকে৷ রাজনীতির এই যাত্ৰাপথ মসৃণ ছিল না মোটেও৷ আশঙ্কামতোই অনেক ঝড়-ঝাপটা সামলাতে হতে হয়েছে ইমরানকে৷ শুধু রাজনৈতিকভাবেই হেনস্তা করা হয়নি তাঁকে, প্ৰাণঘাতী হামলাও হয়েছে৷ তাঁকে পুরোটা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছে৷ কিন্তু এইসব, যাবতীয় সবকিছু মোকাবিলায় করে গেছেন ক্যানে৷ ভরসা ছিল তাঁর আত্মবিশ্বাস৷ কোনওদিন কোনও আপস করেননি তিনি৷ পাক রাজনীতিতে চলতে থাকা সীমাহীন দুৰ্নীতি নিয়ে বারবার মুখ খুলছেন৷ প্ৰতিবাদ করেছেন৷ ২০০৮ সালের নিৰ্বাচনও বয়কট করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু রাজনীতি থেকে সরে যাননি৷ এই নিৰ্বাচনের আগেও তাঁকে নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে৷ ভিত্তিহীন সব রিপোৰ্ট করা হয়েছে৷ এবং এতে সামিল ছিল একাংশ ভারতীয় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াও৷ কিন্তু নিৰ্বাচনে তাঁর দল শেষপৰ্যন্ত জয়ী হয়েছে৷ ১১৯ টি আসন নিয়ে একক সংখ্যগরিষ্ঠতা না পেলেও ইমরানই যে পাকিস্তানের আগামী প্ৰধানমন্ত্ৰী এটা বলা যেতে পারে৷ আর এখান থেকেই শু হয় অন্য আরেকটা অধ্যায়ের৷ নিৰ্বাচনের ফল আসার পর আজ প্ৰায় ৪০ মিনিটের দীৰ্ঘ ভাষণ দিলেন ক্যানে৷  ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পৰ্ক নিয়েও অনেক কথা বলেছেন সেখানে৷ কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে একটি শব্দও ছিল না৷ এটা আপাত চোখে আশ্চৰ্যের দেখালেও, পাত্ৰ ইমরান বলেই তার এত সহজ অনুমান করা সঠিক হবে না৷ ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় ঠিকই কথাটা বলবেন ক্যানে৷ কারণ, ক্রিকেট তো তাঁর রক্তে৷ আর ওভারের বল সব ইয়ৰ্কার হয় না এটা ইমরান থেকে ভাল আর কে জানতে পারে৷ তাঁর ধৰ্ম ক্রিকেট৷ আর তাই ‘ভারত এক পা এগোলে আমার দু’পা দেব’ এটা যখন বলেন কিং খান, তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় অৰ্ন্তনিহিত অৰ্থটা৷ দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট নিয়েও ইতিবাচক হয়েই এগিয়ে যেতে হবে ভারতকে৷ ভারত এক-পা দিলে তবেই এগোবে পাকিস্তান, সে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন তিনি৷ ‘আমাকে নিয়ে যে যাই বলুক, মিডিয়া যাই প্ৰচার কক, আমি জানি এবং আমার লক্ষ-লক্ষ সেই ভারতীয় সমৰ্থকরা জানে ইমরান খান কে৷ ইমরান খান কী৷ এতবার গেছি ভারতে৷ এত ম্যাচ খেলেছি৷ সবই তো সম্ভব হয়েছে ক্রিকেটের জন্য৷’ ক্রিকেট তাই পুরোটা উধাও ছিল ইমরানের ভাষণে এটা বলা যাবে না৷ প্ৰায় দুদশক ধরে বন্ধ ক্রিকেটের সবচেয়ে চিত্তাকৰ্ষক সিরিজ৷ সেটা হল ভারত-পাক৷ এবং দুদেশেরই রাজনৈতিক অনীহা এজন্য দায়ী৷ শুধু অনীহা নয়, বলা যায় ক্রিকেট নিয়েই রাজনীতি হচ্ছে এখন৷ অ্যাজেন্ডা করে দেওয়া হয়েছে ক্রিকেটকে৷ ক্যানে হোন বা প্ৰধানমন্ত্ৰী, ইমরানের দিকেই চেয়ে আছে এখন গোটা ক্রিকেটবিশ্ব৷ ইমরান ফিরেছেন৷ মানে ক্রিকেটও ফিরবে৷ এটাই তো শেষভরসা৷ সুস্থ রাজনীতির এই ভয়াবহ সঙ্কটের দিনে ইমরানই তো একরাশ  ফুরফুরে হাওয়া৷ যে সতেজতা নিয়ে মাঠে দেখে এসেছি আমরা ক্যানেকে, মাঠে যার  দাপট দৃষ্টান্ত হয়ে গেছে, সেই ইমরান খানকে প্ৰধানমন্ত্ৰী থেকে আবার ক্যানে হিসেবে দেখতে চাইছে সবাই৷

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.