বিজেপি বাঙালি মুসলিমদের বেশি করে টিকিট দেবে, গুরুত্ব কমে যাবে বাঙালি হিন্দুদের
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি
প্রাণতোষবাবুরা অসমে জনসঙ্ঘ, বিজেপির জন্ম দাতা, তারা আজ ব্রাত্য
বিজেপি গত ২০৪১ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৭টি আসন, ২০১৬ বিধানসভা
নির্বাচনে বিজেপি ৬০টি আসন এবং ২০১৯ লোকসভা
নির্বাচনে ৯টি আসনে বিজেপি জয় লাভ করে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে
বিজেপি একাই প্রায় ৩২ শতাংশ ভোট লাভ করে। বরাক ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার
প্রায় ৫০ লক্ষ বাঙালি হিন্দুর প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট বিজেপি পেয়েছে। রাজ্যে ৩ কোটি ১৫ লক্ষ জনসংখ্যার
প্রায় ১৪ শতাংশ হল বাঙালি হিন্দু। তারা শুধুই ভোটার, বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা, অসমে জনসংঘর আদিপুরুষ, আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এমন বহু ব্যক্তিকে
পাশ কাটিয়ে উপেক্ষা করে অসমের বিজেপির তথাকথিত কর্মকর্তারা সরকার গঠন করেছেন,
যেখানে প্রাণতোষ রায়ের মত
আদর্শনিষ্ঠ, সৎ বিজেপি কর্মীর
কোনো দাম নেই। ২০১৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনে তার নাম সুপারিশ
করেছিলেন ডা. কৃষ্ণ গোপাল শর্মা, গৌরী সংকর চক্রবর্তীর
মত রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের বিশিষ্ট নেতারা। পশ্চিম গুয়াহাটি কেন্দ্রে তিন লক্ষের বেশি
ভোটার তার মধ্যে এক লক্ষের বেশি বাঙালি হিন্দু ভোটার। কিন্তু অগপর সঙ্গে সমঝোতার অজুহাতে
বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা রাম মাধব আজন্ম সংঘ পরিবারের সদস্য প্রাণতোষ রায়ের নাম খারিজ
করে দেন। তার বড় অপরাধ প্রান্তোষ একজন মনে প্রাণে বাঙালি। প্রাণতোষের দাদা মহিতোষ রায় পরিবারের সঙ্গে সংঘ
পরিবারের সাত দশকের সম্পর্ক। বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি থাকার সময় অটল বিহারী
বাজপেয়ী, কাহিলিপাড়ার বাড়িতে গিয়ে ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে
পশ্চিম গুয়াহাটি কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্যে মহিতোষ রায়কে অনুরোধ
করে ছিলেন। সেই অসম আন্দোলনের উত্তাল সময়ে জীবনের ঝুঁকি
নিয়ে রায় ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার বাড়িতে লালকৃষ্ণ
আডবানি, মুরলিমনোহর জোশী,
নানাজি দেশমুখ প্রমুখ নিয়মিত
যেতেন। সংঘ পরিবারের আজীবন সদস্য জন সংঘ, বিজেপির
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মহিতোষবাবুরা দেশে জরুরি আমলে দুবছর জেল খেটে ছিলেন। দলের জন্য
সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন রায় পরিবার। কাহিলিপাড়া, পল্টনবাজার, লালগনেশ অঞ্চলের মানুষ আশা করেছিলেন
সর্বানন্দ সরকার এবার প্রানতোষ রায়কে কিছু পুরস্কার দেবেন, কোন বিভাগের চেয়ারম্যান পদ দেবেন। কি পেলো? ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হল। আবার
বাংলাভাষী উন্নয়ন পরিষদ নামে এক কমিটি গঠন করে বাংলাভাষী মুষ্ঠিমেয় নেতার হাতে
ললিপপ ধরিয়ে দেওয়া হল। প্রাক্তন বিধায়ক অলক ঘোষ আর সুকুমার বিশ্বাসকে যথাক্রমে সভাপতি করে নগণ্য
বাজেট দিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ বাঙালি হিন্দুকে খুশি করার চেষ্টা হল। এই দুই সভাপতির গ্রহণযোগত্য শূন্য। নিজেদের কাছের মানুষদের কিছু পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি
চলছে। বিজেপি কোনো ক্ষেত্রে লাভবান হবে না। যদিও
আগামী নির্বাচনে বিজেপি বাঙালি হিন্দুদের ছেড়ে বাঙালি মুসলিমদের দিকে ঝুঁকছে। এবার ১৮,২০ জনকে টিকিট দেবে
বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাতে গত নির্বাচনের বিজেপি সাড়ে তিন জন বাঙালিকে
টিকিট দিয়েছিল। ধুবড়ি থেকে দেবময় সান্যাল, ধীইং থেকে মুকুট দেবনাথ, হোজাই থেকে শিলাদিত্য
দেব এবং বাঙালি হিন্দু ঘরানার না হয়েও শিবু মিশ্র টিকিট পান লামডিং থেকে। ব্রহ্মপুত্র
উপত্যকার বাঙালি মুসলিম ভোটার হিন্দু বাঙালিদের থেকে বহু বেশি। প্রায় দুগুণ, শুধু এই উপত্যকাতে বিজেপির মুসলিম ক্যান্ডিডেট
এ আই ইউ ডি এফ-কে কাবু করবে সেই লক্ষ্যে বিজেপি এগোচ্ছে। বাঙালি হিন্দু ভোটারদের গুরুত্ব বহুগুণ কমে
যাবে। বরাক উপত্যকার অবস্থাও একই রকম হবে। তাই বিজেপির কাছে আর আদর্শনিষ্ঠা, ডেডিকেটেড
বাঙালি হিন্দু নেতার প্রয়োজন নেই। তাই এই সরকারের কাছে প্রানতোষ বাবুদের আর কোনো
কিছু আশা না করাই ভালো।
একদম সত্যি কথা । আমি বিজেপির চরিত্র বুঝতে পেরেছি ২০১৫ সনে ।
উত্তরমুছুন